জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। —ফাইল চিত্র।
নিয়োগের পর রেশন দুর্নীতির তদন্ত নিয়েও উত্তাল বাংলার রাজনীতি। রেশন-তদন্তে নেমে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) গ্রেফতার করেছে রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক ও বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্যকে। এই তদন্তে গিয়েই উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালিতে তৃণমূল নেতা শেখ শাহজাহানের বাড়িতে আক্রান্ত হতে হয়েছিল ইডির আধিকারিকদের। ঘটনাচক্রে, ঠিক সেই সময়কালেই এক নির্দেশিকা জারি করে দেশ তথা রাজ্যের সমস্ত রেশন দোকানে সরাসরি নজরদারির কথা ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় খাদ্য ও বণ্টন মন্ত্রক।
কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রকের ১৭ জানুয়ারি জারি করা ‘কন্ট্রোল অর্ডারে’ ‘এক দেশ, এক রেশনকার্ড’ ব্যবস্থা কার্যকর করার নির্দেশ স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, এখন থেকে সব রাজ্যের রেশনব্যবস্থার ওপর প্রতিদিন নজরদারি চালাবে খাদ্য মন্ত্রক। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোনও রেশন গ্রাহকের নাম যুক্ত হলে বা বাদ গেলেও তা অবিলম্বে খাদ্যমন্ত্রককে জানাতে হবে। নতুন নির্দেশে বলা হয়েছে, কোন রেশন ডিলারকে কত পরিমাণ খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে ও তার কতটা বণ্টন হয়েছে, তা-ও জানাতে বাধ্য থাকবে খাদ্য দফতর।
এই নির্দেশিকা অনুযায়ী একজন গ্রাহক দেশের যে কোনও জায়গায় গিয়ে আধার নম্বরের বায়োমেট্রিক যাচাই করিয়ে যে কোনও রেশন দোকান থেকে তাঁর বরাদ্দ খাদ্য পেতে পারেন। নির্দেশিকা আরও বলছে, কোনও রেশন ডিলার ‘এক দেশ, এক রেশন কার্ড’ ব্যবস্থায় গ্রাহককে খাদ্যসামগ্রী দিতে অস্বীকার করতে পারবেন না। এর জন্য যাতে রেশন দোকানে পর্যাপ্ত সামগ্রী মজুত থাকে, তা-ও রাজ্য সরকারকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
বরাদ্দ ও বণ্টনপ্রক্রিয়ার পাশাপাশি নতুন এই নির্দেশে রেশন দোকানের কাজকর্ম নিয়ে নিয়মিত বিবিধ বিষয়ে রিপোর্ট পাঠাতেও বলা হয়েছে। অনলাইনে কেন্দ্রকে যাবতীয় তথ্য পাঠাবে রাজ্যগুলি।
এই নির্দেশকে কী ভাবে দেখছে রাজ্যের খাদ্য দফতর? তবে খাদ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকার সঙ্গে রাজ্যের রেশন দুর্নীতিকাণ্ডের কোনও যোগাযোগ আছে বলে মানতে চাননি খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্য দফতর যথেষ্ট স্বচ্ছতা বজায় রেখেই কাজ করে। আমাদের দফতরের যাবতীয় কাজকর্ম অনলাইন মারফত কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়। তাই নতুন নির্দেশিকায় কেন এ সব কথা বলা হয়েছে তা আমার জানা নেই।’’ প্রসঙ্গত, ২০১১-’২১ সাল পর্যন্ত খাদ্য দফতরের দায়িত্বে ছিলেন জ্যোতিপ্রিয়। তাঁর সময়কালেই রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে শাসকদলকে অভিযুক্ত হতে হয়েছে।
প্রত্যাশিত ভাবেই রাজ্যের প্রধান বিরোধীদল বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। রেশনে কেন্দ্রের কড়া নজরদারি প্রসঙ্গে বিজেপির বিধায়ক মিহির গোস্বামী বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যে নির্দেশ দিয়েছে, তা যুক্তিযুক্ত। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করে আসছিলেন, বাংলায় রেশন দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করেছে। রাজ্যের মানুষ যেন নিজেদের অধিকারের রেশন পান সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার নির্দেশিকা জারি করে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা রাজ্য সরকারের দুর্নীতি আর বরদাস্ত করতে রাজি নয়।’’ মিহির আরও বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রকের এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানাচ্ছি। কারণ, গত দশ বছরে যে ব্যাপক পরিমাণ রেশন চুরি ও দুর্নীতি হয়েছে, তার পরিমাপ সাধারণ মানুষের ভাবনার বাইরে। তাই সাধারণ মানুষকে তার অধিকার পাইয়ে দিতে যেমন কেন্দ্রীয় সরকার এ ক্ষেত্রে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তেমনই রেশন দুর্নীতির তদন্ত করে যেন প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হয়, সেই দাবিও আমরা করব।"
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy