পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় নির্মাণ ব্যবসায়ী সন্তু গঙ্গোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এক মিডলম্যানের ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া শতাধিক কল রেকর্ডিংয়ের হাত ধরেই ‘মূল চক্রী’ প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের যোগসূত্র মিলেছে বলে চার্জশিটে দাবি করেছেন সিবিআইয়ের তদন্তকারীরা। সম্প্রতি বিচার ভবনের বিশেষ আদালতে চার্জশিট পেশ করা হয়।
সন্তু এখন জেলে। তদন্তকারীরা জানান, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় পার্থ ঘনিষ্ঠ-সন্তুকে তাঁরা হেফাজতে জেরা করেন। সম্প্রতি সন্তু, শাসক দলের বহিষ্কৃত যুবনেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দুর্নীতির অন্যতম ‘মিডলম্যান’ বলে চিহ্নিত প্রোমোটার অয়ন শীলের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে তদন্ত-সংস্থা। শুধু প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি নয়, স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি), গ্রুপ সি, গ্রুপ ডি, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ সব ক্ষেত্রেই টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থায় পার্থের সঙ্গে সন্তুর ঘনিষ্ঠ যোগের কথা চার্জশিটে লেখা হয়েছে বলে তদন্তকারী অফিসারের সূত্রে জানা গিয়েছে।
তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সন্তু-ঘনিষ্ঠ এক মিডলম্যানের মোবাইল ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল। ওই ফোন থেকে ১৩৯টি কল রেকর্ডিং উদ্ধার হয় বলে চার্জশিটে প্রকাশ। সিবিআই সূত্রে দাবি, ওই সব ফোন কলের তথ্য যাচাই করে জানা যায়, ২০১৪ সালের পর থেকে সন্তু নিয়মিত ওই মিডলম্যানকে ফোন করে অযোগ্য প্রার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশ দিতেন। এবং নামের তালিকা ধরে ধরে টাকা পাঠানোর নির্দেশ দিতেন। নিয়োগ দুর্নীতি বেআব্রু করতে ওই মিডলম্যানের বয়ান একটি গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলে সিবিআই সূত্রের দাবি।
তদন্তকারীদের দাবি, বেহালার শকুন্তলা পার্কের এক বেসরকারি ব্যাঙ্কে সন্তু ও ওই মিডলম্যানের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সন্তুর ওই অ্যাকাউন্টে তিন কোটি আট লক্ষ ২৮ হাজার টাকা জমা হয়েছিল। অধিকাংশই নগদ ও ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে জমা পড়ে। নানা মিডলম্যানের কাছ থেকে চাকরি বিক্রির লুটের টাকা ওই দু’টি অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছিল বলে দাবি।
সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “সন্তু-ঘনিষ্ঠ ওই মিডলম্যানের ফোনের সব তথ্য উদ্ধার হয়েছে। সম্প্রতি বিশেষ আদালতে আবেদন করে সন্তুর কণ্ঠস্বরের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ওই মিডলম্যানের ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া কল রেকর্ডিংয়ের সঙ্গে সেই স্বরের নমুনা মিলিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। ২০১৪ সালের পর থেকেই পার্থ-ঘনিষ্ঠ সন্তু নির্মাণ ব্যবসার সঙ্গে নিয়োগ দুর্নীতিতেও সক্রিয় হয়ে ওঠেন।” প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালেই শিক্ষামন্ত্রী হন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, শিক্ষামন্ত্রীর পদে বসার পরেই নিজের ঘনিষ্ঠদের মারফত মোটা টাকার বিনিময়ে অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার একটি চক্র গড়ে তোলেন পার্থ। রাজ্য জুড়েই মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠদের মাধ্যমে মিডলম্যান নিয়োগ করে টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি বিক্রির একটি বড় চক্র সক্রিয় হয়ে ওঠে। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, পার্থ নিজে চক্রের মূল নিয়ন্ত্রক ছিলেন। সিবিআইয়ের এক কর্তা বলেন, “সম্প্রতি সিবিআই বিশেষ আদালতে পেশ করা চার্জশিটের ১৬-১৭ এবং ১৮ নম্বর পাতায় ওই চক্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।”
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত অয়ন শীল ও কুন্তল ঘোষ, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক মিডলম্যান মারফত চাকরি বিক্রির লুটের প্রায় কয়েক কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। অন্যতম মিডলম্যান অয়ন শীল মারফত সন্তুর কাছে এক কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা পৌঁছেছিল বলেও দাবি। চার্জশিটে তদন্তকারী অফিসারের দাবি, সন্তু ও অন্য মিডলম্যানদের সঙ্গে ত্রিস্তরীয় চক্রে টাকার বিনিময়ে চাকরি বিক্রির দুর্নীতিচক্র তৈরি করা হয়েছিল।
তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি, অয়ন শীল, কুন্তল ঘোষ-সহ জনা দশেক মিডলম্যান মারফত অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা বেহালার বাসিন্দা সন্তুর অফিসে পৌঁছে যেত।। সন্তুর অফিসের এক ম্যানেজারের কাছে ওই তালিকা জমা পড়ত। সন্তু ও দুর্নীতিতে শরিক তাঁর ঘনিষ্ঠদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে চাকরি বিক্রির লুটের টাকাও জমা পড়তে থাকত। অযোগ্য প্রার্থীদের নামের ওই তালিকা পার্থের অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হত। তদন্তকারীদের সূত্রের আরও দাবি, সেখান থেকেই ওই অযোগ্যদের চাকরির বন্দোবস্ত হত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy