বন্দুক মেরামতির পরে তা ঠিক হয়েছে কিনা, তা জানতে তাতে কার্তুজ ভরে ব্যবহার করা হয়। বরাদ্দ করা সেই কার্তুজের কয়েকটি ব্যবহার করে বাকিগুলি পাচার করে দেওয়া হত।শুধু তা-ই নয়, কার্তুজ কিনতে এলে তা পরীক্ষা করার নিয়ম আছে। সেখানেও পরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট কার্তুজের কয়েকটি ব্যবহার করে বাকিগুলি পাচার হয়ে যেত দুষ্কৃতীদের কাছে। তবে দোকানের দোনলা বন্দুক কার্যত চুরি করেই বিক্রি করেছিল ধৃতেরা। এসটিএফ সূত্রের খবর, বি বা দী বাগের প্রাচীন অস্ত্র বিপণির ধৃত দুই কর্মীকে জেরা করে এই তথ্য সামনে এসেছে। তবে, কত রাউন্ড কার্তুজ বা কতগুলি বন্দুক ওই দোকান থেকে সরিয়ে দুষ্কৃতীদের কাছে বিক্রি করেছিল ধৃত কর্মীরা, তার পুরো হিসাব শনিবার বিকেল পর্যন্ত জানতে পারেননি এসটিএফের তদন্তকারীরা।
সেই হিসাব জানতেই শুক্রবারের পরে এ দিনও ওই দোকানে হানা দিয়েছিলেন এসটিএফের গোয়েন্দারা। এ দিনও তাঁদের সঙ্গে ছিল জয়ন্ত দত্ত এবং শান্তনু সরকার নামে ওই দোকানের ধৃত দুই কর্মী। এ ছাড়া, কার্তুজের এবং বন্দুকের বিষয়ে জানতে রাজ্য পুলিশের কেন্দ্রীয় অস্ত্রাগারের বিশেষজ্ঞদের একটি দলও ছিল সঙ্গে। গোয়েন্দাদের ধারণা, ওই দোকানে কত বন্দুক বা কার্তুজ রয়েছে, তার গণনা করে তালিকা তৈরির কাজ এ দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে। তার পরেই বোঝা যাবে, ওই কায়দায় ওই দোকান থেকে কত পরিমাণ কার্তুজ ও বন্দুক সরিয়েছিল ধৃতেরা।
এসটিএফ সূত্রের খবর, ওই দোকানের ‘বিশ্বাসভাজন’ কর্মী হওয়ার সুযোগ নিয়ে ধৃতেরা বছরখানেকেরও বেশি সময় ধরে এই কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই কারণে ওই দোকানের দু’বছরের স্টক রেজিস্টার-সহ সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এক তদন্তকারী জানান, মূলত বন্দুক পরীক্ষা এবং কার্তুজ বিক্রি করার সময়ে তা পরীক্ষা করেই অনেকে কেনেন। আর সেখানেই গরমিল করত ওই দু’জন। পরীক্ষায় যত পরিমাণ কার্তুজ ব্যবহার করা হয়েছে বলে কাগজে-কলমে দেখানো হত, আদতে সেই পরিমাণ ব্যবহার না করে তা সরিয়ে ফেলত অভিযুক্তেরা। এক-একটি কার্তুজ ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি করা হত। যা কয়েক হাত ঘুরে দুষ্কৃতীরা কিনত ৫০০-৫৫০ টাকায়।
গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, অভিযুক্তেরা যে ওই কায়দায় গুলি বা কার্তুজ সরিয়েছে, তা দোকানের অন্য কারও পক্ষে সহজে জানা সম্ভব ছিল না বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, পরীক্ষায় যত পরিমাণ কার্তুজ ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাদের নথিতে দেখানো হয়েছে, তার দাম ধরে দোকানে জমা দিয়ে দিত অভিযুক্তেরা। ফলে দোকানের অন্য কারও পক্ষে ওই হিসাবে গরমিল ধরে কার্তুজ সরিয়ে ফেলার ব্যাপারটি বোঝা সম্ভব ছিল না বলেই প্রাথমিক ভাবে গোয়েন্দাদের অনুমান। তবে দোকানের অন্য কেউ এই ঘটনায় জড়িত আছে কিনা, তা নতুন করে খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে এসটিএফ সূত্রে এ দিন জানানো হয়েছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)