প্রতীকী ছবি
প্রায় সাত মাস অতিক্রান্ত হতে চলল! তার পরও ওপার বাংলা থেকে এপার বাংলায় ফেরা হল না নদিয়ার কিশোরীর। ফলে বাংলাদেশের হোমেই এখনও বন্দি সে। দু'দেশের কাঁটাতারের ব্যবধানই কাঁটা হয়ে দাঁড়াল তার ফেরার পথে। আর এই বিষয়টি নিয়েই আরও কঠোর হল কলকাতা হাই কোর্ট। শুক্রবার বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা নির্দেশ দেন, চার দিনের মধ্যে ওই কিশোরীকে দেশে ফেরাতে সব রকম চেষ্টা করতে হবে কেন্দ্রকে। এ নিয়ে গড়িমসি বন্ধ হওয়া দরকার।
গত জুন মাসে নদিয়ার কোতোয়ালি থেকে বাংলাদেশে পাচার হয় ১৫ বছরের এক কিশোরী। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ওই এলাকারই একটি স্টিলের কারখানায় কাজ করতেন বাংলদেশের কয়েক জন যুবক। তাঁরা সকলে বেআইনি ভাবে এ দেশে এসেছিলেন। মিলন হোসেন নামে তাঁদেরই এক জনের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ওই কিশোরীর। কয়েক দিন পরে বিয়ের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে বাংলাদেশে নিয়ে যান মিলন। সেখানে ওই কিশোরীকে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ। এটা জানতে পেরে এখানকার পুলিশ মারফত খবর যায় সে দেশের প্রশাসনের কাছে। তার পরই ওই কিশোরীকে উদ্ধার করে তারা রংপুরের একটি হোমে রাখে। তবে সেখানেই শেষ নয়। ওই হোমে মেয়েটির উপর চলে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন। এই অবস্থায় মেয়েকে ফেরাতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয় পরিবার। গত ৬ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত ওই বিষয়ে কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপ করতে নির্দেশ দেয়। পাশাপাশি হোমে মেয়েটির পরিচর্যার জন্য বাংলাদেশ দূতাবাসের কাছেও অনুরোধ করে আদালত।
আনন্দবাজার অনলাইনে এই খবর প্রথম প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশের দূতাবাস ওই কিশোরীকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসে। ওই হোমেই সুন্দর যত্ন সহকারে রাখা হয় এপার বাংলার ছোট মেয়েটিকে। পরিবারের লোকের সঙ্গে সে যাতে নিয়মিত যোগাযোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থাও করা হয়। খবর পেয়ে মেয়েটিকে দেখতে যান বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাই কমিশনের কর্তারাও। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সম্প্রতি বাংলাদেশের বিজয় দিবস উপলক্ষে সে দেশে যান ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। জানা যায়, রাষ্ট্রপতির সামনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নদিয়ার কিশোরীও।
কিন্তু এত সব কিছুর পরেও কাঁটাতারের এ পারে নিয়ে আসা যায়নি তাকে। এর পিছনে বিদেশমন্ত্রকের গাফিলতি দেখছেন এই মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীদের একাংশ। কিন্তু আর কত দিন? কবে ঘরের মেয়ে ঘরে ফিরবে আদালতের দরবারে এখন সেই প্রশ্নের উত্তরই খুঁজছেন পরিবারের লোকেরা। আদালতের পূর্ব নির্দেশ মতো মেয়েটিকে ফেরাতে কেন্দ্রের উদাসীনতায় বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি মান্থা। শুক্রবার ফের তাঁর কড়া নির্দেশ, অবিলম্বে ফেরানোর ব্যবস্থা করতে হবে ওই কিশোরীকে। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩টের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকা গেদে চেক পোস্ট দিয়ে মেয়েটিকে আনার জন্য বিএসএফ-এর আইজি এবং কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারপতি। একই সঙ্গে ভারতের দূতাবাসকে তিনি অনুরোধ করেন, মেয়েটিকে ওই দিন ফেরত পাঠাতে যেন সব রকম সাহায্য করা হয়।
ওই কিশোরীকে ফেরত আনতে বিনা পারিশ্রমিকে আদালতে লড়াই করছেন আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত এবং আইনজীবী নীলাদ্রি সাহা। সুস্মিতার কথায়, ‘‘সীমান্ত এলাকায় প্রচুর মেয়ে পাচার করা হচ্ছে। এই মেয়েটিও তার শিকার হয়েছিল। আমরা অনেকটা পথ এগিয়ে এসেছি। আদালতের এই নির্দেশের পর মেয়েটিকে শীঘ্রই ফিরে আসবে বলে আশা করছি।’’ নীলাদ্রি বলেন, ‘‘পরিবারের লোকেদের সঙ্গে কথা হয় মেয়েটির। সে নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে। বাড়ি ফেরার জন্য কান্নাকাটি করছে। এখন কাঁটাতার সীমানা পার করাই আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ!’’ অন্য দিকে, ওই কিশোরী বাড়ি ফিরল কি না, তা নজর রাখার জন্য মামলাটির ফের শুনানি রেখেছেন বিচারপতি। আগামী ৪ জানুয়ারি ওই বিষয়ে জানতে চাইবে আদালত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy