হাই কোর্টের নির্দেশে নিজগাঁয়ে ফিরছেন দম্পতি। নিজস্ব চিত্র।
খুন করলে শাস্তি হবে! তা বলে ‘কালা জাদু’র অভিযোগে কাউকে গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না এই দাবি মানা যায় না। শিশু মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত বৃদ্ধ দম্পতিকে গ্রামে ফেরানোর নির্দেশ দিয়ে এমনই বলল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি রাজাশেখর মান্থার মন্তব্য, ‘‘এই সমাজে দাঁড়িয়ে শুধুমাত্র কালা জাদুর আশঙ্কায় কাউকে ভিটেমাটি থেকে উৎখাত করা উচিত নয়। অপরাধ করলে আইন শাস্তি দেবে।’’ তাঁর নির্দেশ, অবিলম্বে পুলিশকে ওই দম্পতি এবং তাঁর পরিবারকে গ্রামে থাকার অধিকার পাইয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে গ্রামবাসীদের সঙ্গে আলোচনা করবে পুলিশ।
ঘটনাটি চার বছর আগের। উত্তর ২৪ পরগনার স্বরূপনগরের কাবিলপুরের বাসিন্দা নিত্য ঘোষের নাতবৌয়ের দুই যমজ সন্তান জন্মের পরই মারা যায়। আর অন্তঃসত্ত্বা হননি ওই বধূ। সন্তানের আশায় তাঁকে এক তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যান নিত্যের স্ত্রী আলপনা ঘোষ। তান্ত্রিক জানায়, যে কোনও তিনটি শিশুকে হত্যা করতে পারলেই অন্তঃসত্ত্বা হবেন ওই বধূ। অভিযোগ, তান্ত্রিকের ‘কালা জাদু’ কাজ করতে পারে এই কল্পনায় প্রতিবেশীদের শিশুকে হত্যা করার সুযোগ খোঁজে আলপনা। গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, আলপনা একটি শিশুকে খুন করেছেন। পুলিশও জানায়, শিশু হত্যার কারণে স্বরূপনগরের ওই পরিবারকে বাড়িছাড়া করেছিলেন গ্রামবাসীরা। তাদের বাড়ি এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় জনরোষ সামাল দিতে লাঠিচার্জ করতে হয়। ওই ঘটনায় শিশু মৃত্যুর দায়ে অভিযুক্ত হিসাবে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর গ্রামছাড়া হয় ওই পরিবার। একাধিক বার তারা গ্রামে ঢোকার চেষ্টা করলেও, গ্রামবাসীদের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি।
শেষ বয়সে গ্রামে ঢুকতে চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন বৃদ্ধ নিত্য। শুক্রবার উচ্চ আদালত তাঁর আর্জিতে সাড়া দিয়েছে। মামলাকারীর আইনজীবী মীনাক্ষী ঘোষ জানান, আদালত নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিয়ে ওই পরিবারকে বাড়িতে ঢোকাবে। এমনকি, তারা যাতে নিরাপদ বোধ করেন সেই বন্দোবস্তও করবে পুলিশ। বিচারপতির মান্থার পর্যবেক্ষণ, ‘‘কোন যুগে দাঁড়িয়ে আমরা! কালা জাদু অভিযোগে কাউকে গ্রাম ছাড়া করা যায় না। ফের একই ঘটনা ঘটতে পারে এত দিন পরে সেই আশঙ্কাও ভিত্তিহীন। এমনকি ‘এক ঘরে’ রাখার অভিযোগও অপ্রত্যাশিত।’’ একই সঙ্গে হাই কোর্ট জানায়, দোষীরা জেল খেটেছে। আরও শাস্তির প্রয়োজন হলে আইন তাদের দেবে। বিচারের কাজ চলছে। কিন্তু আপন বাসস্থানে বাঁচার অধিকার দিতেই হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy