পারম্পরিকের বার্ষিক সঙ্গীত সম্মেলনে শিল্পীরা।
শীতের মরসুমের শুরুতেই সারাদিন ব্যাপী শাস্ত্রীয় সংগীতের উৎসব উপহার দিল ‘পারম্পরিক’। তারা সদর্থেই অন্য পথে হেঁটে চলেছে, অন্য ভাবনায়। ২০০১ সাল থেকে পারম্পরিকের পথ চলা শুরু। দেশের প্রবীণ ও অগ্রজ শিল্পীদের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত নবীন শিল্পীরাও ‘পারম্পরিক’ অংশগ্রহণ করে আসছেন। সঙ্গে রয়েছে গ্রামীণ প্রান্তিক পরিবারের মেধাবী ছেলেমেয়েদের জন্য উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা, প্রায় সাড়ে আট হাজার ছেলে মেয়ে আজ পর্যন্ত পারম্পরিকের সহায়তায় উচ্চশিক্ষিত ও স্বাবলম্বী।
সম্প্রতি কলকাতার জিডি বিড়লা প্রেক্ষাগৃহে অনুষ্ঠিত হল এই প্রতিষ্ঠানের ২০তম বার্ষিক সঙ্গীত সম্মেলন। দেশের নানা প্রান্ত থেকে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের শিল্পীরা আমন্ত্রিত ছিলেন অনুষ্ঠানে। দর্শক ও শ্রোতাদের মধ্যে ছিলেন পদ্মভূষণ পণ্ডিত বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়, পণ্ডিত সময় সাহা, কবি কালীকৃষ্ণ গুহ, প্রাক্তন অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্র, হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন, চিত্রশিল্পী তাপস কোনার এবং অন্য বিশিষ্টজনেরা। অনুষ্ঠানের শুরুতে বক্তব্য রাখেন বিধায়ক দেবাশিস কুমার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ছিল সাবেরী মিশ্রের কত্থক। নাচের সঙ্গে কণ্ঠসংগীত ও বোল পরণও তিনি অদ্ভুত দক্ষতায় নিজেই পরিবেশন করলেন। সঙ্গে তবলায় ছিলেন শ্রী সুবীর ঠাকুর এবং সেতারে শ্রী চন্দ্রচূড় ভট্টাচার্য। তার পরে ছিল সরোদ বাদক তথা যোধপুরের শিল্পী বসন্ত কাবরার পরিবেশনা। ধ্রুপদী আলাপচারিতা ও জোড় ঝালার পরে তবলায় যোগদান করলেন পণ্ডিত পরিমল চক্রবর্তী। অপূর্ব সেই যুগলবন্দিতে মেতে ওঠে গোটা প্রেক্ষাগৃহ।
সরোদবাদন পেরিয়ে কণ্ঠ সঙ্গীতের পালা। এই প্রজন্মের শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের অগ্রণী শিল্পী ওমকার দাদরকর। তাঁকে সঙ্গ দেন তবলায় বিভাস সংহাই এবং হারমোনিয়ামে গৌরব চট্টোপাধ্যায়। সুরের খেলায় মেতে ওঠেন শ্রোতারা। সব শেষে মঞ্চে ওঠেন ডাগরবাণী ধ্রুপদের যন্ত্রশিল্পী উস্তাদ মোহী বাহাউদ্দিন ডাগর। ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীতের প্রাচীন শান্ত, সমাহিত এক রূপ পাওয়া গেলো শিল্পীর রুদ্রবীণায় । সঙ্গতে প্রখ্যাত পাখোয়াজ শিল্পী শ্রী সুখদ মুণ্ডে। সম্মেলন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বিদুষী রুচিরা পাণ্ডার ছাত্রছাত্রী অনবদ্যা দাস, বিশ্বায়ন ভৌমিক ও সৈকত সেনগুপ্ত। সব মিলিয়ে হেমন্তের দুপুর থেকে সন্ধে শহরবাসীকে দারুণ এক অভিজ্ঞতার সাক্ষী করে তুলল 'পারম্পরিক'।
অনুষ্ঠানের মূল উদ্যোক্তা রুচিরা পাণ্ডা বলেন, “২০ বছর সময়টা অনেকটাই। পারম্পরিক কলকাতায় গত দু’দশকে দু-তিনটে হাতে গোনা সংস্থার মধ্যে একটি যারা এই ধরনের উচ্চমানের সংগীত সম্মেলন করে আসছে । কাজটা খুব সহজ নয়। এটা একটা মাইলফলক হয়ে রইল। আগামীতে অনেক নতুন পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ফিরছি পারম্পরিকের নতুন কালচারাল সেন্টারে।”
অন্য দিকে বুধাদিত্য মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “শাস্ত্রীয় সংগীত সুস্থ সমাজ তৈরি করার এক পথ। পারম্পরিক শাস্ত্রীয় সঙ্গীতকে খুব নান্দনিকভাবে উপস্থাপিত করে আসছে। দেশের নানা দিক থেকে শিল্পীরা এসেছেন। আমিও দু’বার পারম্পরিকের অনুষ্ঠানে সেতার বাজিয়েছি। আমি ওদের কাজে মুগ্ধ।”
শিল্পী ওমকার দাদরকার বলেন, “কলকাতার শ্রোতারা সব সময়ে খুব সমঝদার। কলকাতায় গান করা সব সময়ে আমার কাছে খুব আনন্দের । আজ সামনে অনেক গুণী শিল্পীরা উপস্থিত ছিলেন। সব মিলিয়ে খুব ভাল লেগেছে।”
সরোদ বাদক বসন্ত কাবরা বলেন, “আমি বছরে তিন থেকে চার বার কলকাতায় অনুষ্ঠান করতে আসি। কলকাতার শ্রোতারা খুব ভাল। পারম্পরিকের ব্যবস্থাও খুব সুন্দর। আমি অনুষ্ঠান করে খুব খুশি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy