Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
TET Scam

তাপসের লেনদেনের নথি! ডায়েরি-ভর্তি নামের মধ্যে ‘বীজেশ মণ্ডল’ কে? পুত্র কি? খোঁজার চেষ্টায় গোয়েন্দারা

তদন্তকারীদের একাংশ ভাবিত নিয়োগ দুর্নীতিতে বীজেশের ভূমিকা নিয়ে। এই বীজেশ যদি তাপস মণ্ডলেরই পুত্র হন, তবে গোটা বিষয়ে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, সেটাই এখন তদন্তকারীদের আতশকাচের তলায়।

Diary of Tapas Mondal

তাপস মণ্ডলের যে ডায়েরিতে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের অঙ্ক, সেখানে উল্লেখ রয়েছে বীজেশ মণ্ডলের নাম। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

সারমিন বেগম
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ১০:০১
Share: Save:

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত তাপস মণ্ডলের একটি ডায়েরি আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। যার ছত্রে ছত্রে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের অঙ্ক। রয়েছে নানান জায়গার উল্লেখ। আর গোটা গোটা অক্ষরে লেখা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম। সেখানে কুন্তল ঘোষ, গোপাল’দা, সৌমেন পাল, এ রায় বর্মণ, এ মাইতি ছাড়াও আরও একটি নাম তদন্তকারীদের নজর কেড়েছে। বীজেশ মণ্ডল। ঘটনাচক্রে, তাপসের ছেলের নামও বীজেশ। তিনি পেশায় স্কুলশিক্ষক। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর একটি সূত্রের দাবি, ডায়েরির পাতার যে বীজেশের উল্লেখ রয়েছে, তিনি তাপসের পুত্রই। যদিও এ ব্যাপারে ইডির তরফে সরকারি ভাবে কখনওই কিছু জানানো হয়নি।

নিয়োগে অনিয়মের মামলায় গত অক্টোবরে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য গ্রেফতার হওয়ার পরেই বেসরকারি বিএড ও ডিএলএড কলেজ সংগঠনের সভাপতি তাপসের নাম উঠে আসে। তার পর থেকে তিনি বেশ কয়েক বার তদন্তকারীদের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছেন। সেই তাপসের ডায়েরির একটি পাতায় ‘প্রাইমারি’ শিরোনামের ‘এন্ট্রি’তে ‘বীজেশ মণ্ডল’ নামটি লেখা রয়েছে। আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে আসা সেই পাতার একেবারে শুরুতেই লেখা, ‘পে টু কুন্তল ঘোষ ফর প্রাইমারি’। সঙ্গে ২০১৮ সালের দু’টি তারিখ আর তার পাশে টাকার অঙ্কের উল্লেখ রয়েছে। ইডির ওই সূত্রের দাবি, ২০১৮ সালে কুন্তলকে কত টাকা পাঠানো হয়েছে, এ সব তারই হিসাব। ওই পাতায় টাকার অঙ্কের ঠিক পাশেই লেখা, ‘রিসিভড’। নীচে কুন্তলের পুরো নাম। ইডির ওই সূত্রটির দাবি, এর অর্থ টাকা কুন্তলের কাছে পৌঁছেছে। প্রসঙ্গত, তাপস প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছেন, কুন্তল সই করেই তাঁর কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার যুব তৃণমূল নেতা কুন্তল অবশ্য সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

পাতার একেবারে শুরুতেই লেখা, ‘পে টু কুন্তল ঘোষ ফর প্রাইমারি’।

পাতার একেবারে শুরুতেই লেখা, ‘পে টু কুন্তল ঘোষ ফর প্রাইমারি’।

ডায়েরির ওই পাতায় ‘নোট’ হিসাবে ২০১৭ সালের ২৫ মে তারিখের উল্লেখ রয়েছে। তার পাশে লেখা, ‘সিএইচ নং— ০৮১১০৯, পেমেন্ট— ৩ লাখ, বীজেশ মণ্ডলের থেকে’। ইডি সূত্রের দাবি, ওই তারিখে বীজেশের কাছ থেকে ৩ লক্ষ টাকা পাঠানো হয়েছে কুন্তলকে। ওই পৃষ্ঠায় প্রাথমিকের প্রার্থীদের জন্য সব মিলিয়ে ৩ কোটি ৮২ লক্ষ টাকার হিসাব রয়েছে।

ঘটনাচক্রে, তারিখ, স্থান এবং টাকার অঙ্কের হিসাব সম্বলিত আরও একটি নথি আনন্দবাজার অনলাইনের হাতে এসেছে। সেখানে ২০১৭ সালের ২৫ মে তারিখের পাশে বীজেশ নামের উল্লেখ দেখা যাচ্ছে। বীজেশ নামের পাশে লেখা, ‘এনইএফটি ব্যাঙ্ক’। পাশে টাকার অঙ্কের জায়গায় লেখা রয়েছে, ‘১২ লাখ’। তদন্তকারীদের অনুমান, বীজেশের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ওই পরিমাণ টাকা চেকের মাধ্যমে ‘এনইএফটি’ (অন্যের অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর এক ধরনের ব্যাঙ্কিং প্রক্রিয়া) করে টাকা পাঠানো হয়েছে। ইডির তদন্তকারীরা মনে করছেন, ডায়েরির পাতায় ‘সিএইচ নং’-এর অর্থ চেক নম্বর। কারণ চেক নম্বরও ছয় অঙ্কের হয়ে থাকে। কিন্তু, নথিতে ১২ লাখ আর তাপসের ডায়েরির পাতায় একই তারিখের পাশে ৩ লক্ষ টাকার হিসাব— এই ফারাকের কারণ ভাবাচ্ছে কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্তকারীদের।

যদিও ইডির ওই সূত্রের দাবি, টাকা যে কুন্তলের কাছেই পৌঁছেছে, সে বিষয়ে মোটামুটি একমত তদন্তকারীরা। তাদের যুক্তি, ওই নথিতে ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকার হিসাব রয়েছে। তার নীচে যে সংক্ষিপ্ত সই (ইনিশিয়াল সিগনেচার) রয়েছে, সেটি কুন্তলের। কুন্তল যে টাকা পেয়েছেন, তা বোঝানোর জন্যই নীচে সই করা হয়েছে। তাপসও জেরায় দাবি করেছিলেন, ৩২৫ জন শিক্ষক পদপ্রার্থীর কাছে থেকে কুন্তল ৩ কোটি ২৫ লক্ষ টাকাই নিয়েছেন। কুন্তল যদিও এই অভিযোগ প্রথম থেকেই অস্বীকার করেছেন।

তবে তদন্তকারীদের একাংশ ভাবিত বীজেশের ভূমিকা নিয়ে। এই বীজেশ যদি তাপসেরই পুত্র হন, তবে গোটা বিষয়ে তাঁর ভূমিকা কী ছিল, সেটাই এখন তদন্তকারীদের আতশকাচের তলায়। তাঁর অ্যাকাউন্ট থেকে কেন টাকা পাঠানো হয়েছিল, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে বলে ইডির ওই সূত্রের দাবি। পাশাপাশি, প্রয়োজনে বীজেশকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হতে পারে বলে ওই সূত্রে জানা গিয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE