এজলাসে ভিতরে মানিকের সঙ্গে একান্তে প্রায় ১০ মিনিট কথাও বলেন বিচারপতি। গ্রাফিক— শৌভিক দেবনাথ।
বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যের সঙ্গে কথা হল কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের। আইনজীবীরা জানিয়েছিলেন, নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করতে চেয়েছেন বিচারপতি। যদিও বিধায়কের সঙ্গে বিচারপতির সাক্ষাৎ শুধু সেখানেই থেমে থাকল না। কথায় কথায় বিচারপতি মানিককে চায়ের প্রস্তাব দিলেন, মানিকও বিচারপতিকে জানালেন, তিনি যখনই বিচারপতির তলব পাবেন, এসে হাজির হবেন। এমনকি, বিচারপতিকে ‘সত্যি’ ঘটনা বলতে চান বলেও দাবি করেন মানিক।
দুপুর সোয়া ৩টে নাগাদ মানিককে হাজির করানো হয় বিচারপতির এজলাসে। তাঁকে দেখে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পর্কে কী জানেন?’’
মানিক: আমি জেলে রয়েছি। আমার কাছে কোনও তথ্য বা নথি নেই। আদালত ডেকেছে তাই এসেছি। স্মরণে যা আছে তাই বলতে পারি।
বিচারপতি: ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সিলেকশন কমিটি তৈরি করা হয়েছিল?
মানিক: হ্যাঁ, করা হয়েছিল। কিন্তু আমি কী ভাবে এগুলো বলতে পারি? যা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা পর্ষদ নিয়েছিল।
বিচারপতি: পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি হিসাবে আপনার কাছে এগুলো জানা যেতেই পারে। ২০১৬ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়ার ফল কে প্রকাশ করেছিল?
মানিক: এটা আমি বলতে পারি না। বিশেষ করে এই প্রশ্নের উত্তর আমার কাছেই বোধগম্য নয়। নিয়োগ প্রক্রিয়ার মোট নম্বর বিভিন্ন বিভাগ একসঙ্গে মিলে তৈরি করে।
বিচারপতি: বাইরের কোনও সংস্থাকে রেজ়াল্ট প্রস্তুত করার জন্য নিয়োগ করা হয়েছিল?
মানিক: এই পুরো প্রক্রিয়া পর্ষদ পরিচালনা করেছে। তবে হ্যাঁ, একটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। কিন্তু এখন তার নাম স্মরণে নেই।
বিচারপতি: এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি নামে কোনও সংস্থার নাম শুনেছেন?
মানিক: হ্যাঁ, ওই ধরনের নাম শুনেছি।
বিচারপতি: সভাপতি হিসাবে আপনার সময়ে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে যে অভিযোগ করা হয়েছে, তা কি ঠিক?
মানিক: অ্যাপ্টটিটিউড টেস্ট নেওয়া হয়েছিল। তখন কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। এমন কোনও রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি।
বিচারপতি: ওই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংরক্ষণ নীতি মানা হয়েছিল— এটা আপনি নিশ্চিত করে বলতে পারবেন?
মানিক: যত দূর মনে পড়ছে আইন অনুযায়ী হয়েছিল।
বিচারপতি: ঠিক আছে। এখন আমার আর কিছু জানার নেই। আপনি যে বয়ান দিয়েছেন তাতে স্বাক্ষর করে চলে যাবেন।
মানিক: কিন্তু আমি যা বলেছি তার কোনও তথ্য নেই। আমার যা মনে ছিল, তাই বলেছি। তবে যাওয়ার আগে একটা অনুরোধ করব। এই সংক্রান্ত যে কোনও মামলায় দরকার পড়লেই আমাকে ডেকে পাঠাবেন। ১৫ মিনিট আগে বললেই হবে। আমি চলে আসব। পরে আমার বিরুদ্ধে যাই পদক্ষেপ করা হোক, আমি মেনে নেব।
মানিক (একটু থেমে): আমি সত্যিটাই বলতে চাই। সত্য সহজ, সত্য সুন্দর।
বিচারপতি: আপনার বিরুদ্ধে গিয়েছে, এমন কিছু হয়েছে?
মানিক: যখন এই পরীক্ষা নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল, তখন কেউ ছিল না। দরজায় দরজায় কড়া নেড়েছিলাম। কেউ সাহায্য করেনি। আজও আদালতে আমার একই অবস্থা।
হাই কোর্টের শেরিফকে বিচারপতি: উনি একজন সম্মাননীয় ব্যক্তি। চা দেবেন। দেখবেন, অপ্রত্যাশিত ঘটনা না ঘটে। আদালত শুধু সত্যি জানতে চায়। উনি সাহায্য করেছেন।
মানিক (হাত জোড় করে): আপনিই বিচার করুন। সত্য সামনে আসুক। সত্য সুন্দর।
প্রশ্নোত্তর পর্বের শেষে মানিককে ডেপুটি শেরিফের ঘরে নিয়ে গিয়ে বসিয়ে চা, কফি, ঠান্ডা পানীয় দেওয়ার জন্য বলেন বিচারপতি। এর পরই হঠাৎ বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘দশচক্রে ভগবানও ভূত হয়। এই মানিক ভট্টাচার্য আমাদের ডেপুটি শেরিফের শিক্ষক ছিলেন।’’ এর পর অবশ্য এজলাসের ভিতরে মানিকের সঙ্গে একান্তে প্রায় ১০ মিনিট কথাও বলেন বিচারপতি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy