Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Mid Day Meal

স্কুলে চাল-ডাল বিলির শিক্ষক মিলবে কি, প্রশ্ন

করোনার দ্বিতীয় আগ্রাসনে রাজ্যে ইতিমধ্যে ১০-১২ জন শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

আর্যভট্ট খান
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৬:১৭
Share: Save:

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আগ্রাসী প্রকোপের মধ্যে মে মাসের মিড-ডে মিলের সামগ্রী কী ভাবে দেওয়া যাবে, প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ তা নিয়ে বিষম চিন্তায় পড়েছেন। স্কুলে অভিভাবকদের হাতে ওই জিনিসপত্র তুলে দেওয়ার জন্য যত শিক্ষকের উপস্থিতির দরকার হয়, এ বার তাঁদের পাওয়া যাবে কি না স্কুল-প্রধানদের প্রশ্ন ও সংশয় মূলত তা নিয়েই।

ওয়েস্টবেঙ্গল হেডমাস্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণাংশু মিশ্র জানান, মে মাসের মিড-ডে মিল বিতরণের তারিখ পরিবর্তনের দাবি জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে চিঠি লেখা হয়েছে৷ শিক্ষা দফতরের এক কর্তার আশ্বাস, “সাধারণ ভাবে মিড-ডে মিল দেওয়া শুরু হয় মাসের প্রথম সপ্তাহে। করোনা আবহে স্কুলগুলি কী ভাবে তা দেবে, তার একটা রূপরেখা মে মাসের দু’তারিখের পরে তৈরি করে দেওয়া হবে বলে ঠিক হয়েছে।”

অনেক প্রধান শিক্ষকের দাবি, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে দুপুরের খাবারের চাল-ডাল-চিনি বিতরণের জন্য ঠিক ক’জন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীকে স্কুলে হাজির হতে হবে, তার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করুক শিক্ষা দফতর। সাধারণ ভাবে মাধ্যমিক স্তরের স্কুলে তিন দিন ধরে ওই সব জিনিস দেওয়া হয়। কলকাতার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা জানাচ্ছেন, তাঁর প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৮০০ জন পড়ুয়া আছে। প্রতিটি শ্রেণিতে চার থেকে পাঁচটি সেকশন। তিন দিন ধরে দুই অর্ধে মিড-ডে মিলের সামগ্রী দেওয়া হয়। এখন চাল, আলু, ছোলা, সাবানের সঙ্গে ডাল-চিনি-সয়াবিনও দেওয়া হচ্ছে। এই অতিরিক্ত সামগ্রী দেওয়ার জন্য বাড়তি শিক্ষক-শিক্ষিকার প্রয়োজন হয়। দুই অর্ধে শিক্ষক-শিক্ষিকা লাগে অন্তত ২০ জন। “করোনা যে-ভয়াবহ আকার নিয়েছে, তাতে মে মাসে এত শিক্ষিক-শিক্ষকাকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে তো,’’ প্রশ্ন ওই প্রধান শিক্ষিকার।’’

নদিয়ার এক প্রধান শিক্ষক জানান, করোনার দ্বিতীয় আগ্রাসনে রাজ্যে ইতিমধ্যে ১০-১২ জন শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। ওই প্রধান শিক্ষকের কথায়, “এই আবহে মে মাসের মিড-ডে মিল দেওয়ার জন্য ক’জন শিক্ষককে স্কুলে আসতে হবে, সেই বিষয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি না-থাকলে আমরা শিক্ষকদের স্কুলে আসতে জোর করতে পারি না।”

অ্যাডভান্সড সোসাইটি ফর হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক চন্দনকুমার মাইতি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে মিড-ডে মিল দেওয়ার জন্য শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের উপস্থিতির তালিকা করা উচিত স্কুল-প্রধানদের। কিন্তু সেটা করতে গেলে শিক্ষা দফতরের নির্দিষ্ট বিজ্ঞপ্তি দরকার। নইলে কেউ শুনবেন না।” কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাসের প্রশ্ন, আগে কখনও গরমের ছুটির মধ্যে মিড-ডে মিল দেওয়া হয়নি। এ বার ছুটির মধ্যে শিক্ষকেরা সামগ্রী বিতরণে রাজি হবেন তো?

প্রধান শিক্ষকদের একাংশ ভিন্ন মতও পোষণ করেছেন। হিন্দু স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভ্রজিৎ দত্ত বলেন, “এ বার যা পরিস্থিতি, তাতে গরমের ছুটির অজুহাত দেওয়া ঠিক নয়। করোনা-কালে অনেক অভিভাবকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়েছে। তাই শিক্ষকদের পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রেখে আরও বেশি দায়িত্ব নিয়ে মিড-ডে মিল বিতরণ করা উচিত।”

পশ্চিমবঙ্গ সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসুর বক্তব্য, “স্কুলে বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যাতে একসঙ্গে জড়ো হতে না-হয়, সেই জন্য মিড-ডে মিল বিতরণের দিনের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে পাঁচ করা যেতে পারে। অনেক শিক্ষক ভোটগণনার কাজে যাবেন। সেখানে গিয়ে কেউ যদি করোনায় আক্রান্ত হন, তিনি কী ভাবে মিড-ডে মিল দিতে আসবেন? তাই সামগ্রী বিলির দিন বাড়ানো দরকার।

অন্য বিষয়গুলি:

Government Schools Mid Day Meal headmaster
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy