পুজো করছেন অদিতিদেবী। ছবি: কল্যাণ আচার্য
প্রতিমার বায়না দেওয়া থেকে শুরু করে পুজোর যাবতীয় প্রস্তুতি সারা। হঠাৎই নির্ধারিত পুরোহিত অশৌচ দশায় পড়ে যান। অন্য পুরোহিতও মেলেনি। ফলে সরস্বতী পুজো নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল বীরভূমের লাভপুর সত্যনারায়ণ শিক্ষা নিকেতন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। মুশকিল আসান হয়ে স্কুলেরই এক শিক্ষিকা পুরোহিতের দায়িত্ব নিয়ে পুজো করলেন।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি বছরের মতো এ বারও সরস্বতী পুজোর জন্য পুরোহিত সাধন হাজরাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু মায়ের মৃত্যুতে অশৌচ পালন করতে হবে বলে তিনি পুজোয় অক্ষমতা প্রকাশ করেন। বিস্তর খোঁজাখুঁজি করেও অন্য পুরোহিত মেলেনি। পুরোহিতের অভাবে পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।
অনেক দিন পরে স্কুল খোলায় ছাত্রীরা খুব যত্ন করে সরস্বতী পুজোর আয়োজন করেছিল। সব জেনে তাদের মুখ ভার। এই সময়ে ত্রাতা হয়ে ওঠেন স্কুলেরই শারীরশিক্ষা বিভাগের শিক্ষিকা অদিতি নায়ক। পুজো তিনিই করবেন বলে জানান। শনিবার মন্ত্রপাঠ থেকে শুরু করে ছাত্রী এবং সহকর্মীদের পুষ্পাঞ্জলি-সহ সমস্ত দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন ওই শিক্ষিকা।
অদিতিদেবীকে পুরোহিতের ভূমিকায় পেয়ে সহশিক্ষিকা থেকে শুরু করে ছাত্রীরা উচ্ছ্বসিত। মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকী, একাদশ শ্রেণির পুতুল হাঁসদা, অষ্টম শ্রেণির দিতিপ্রিয়া হাঁসদারা বলেন, ‘‘ভাগ্যিস দিদি ছিলেন, না হলে হয়তো এ বার পুজোটাই হত না!’’ শিক্ষিকা গোপা চট্টোপাধ্যায়, কৃষ্ণা মণ্ডলের কথায়, ‘‘দিদি বাড়িতে পুজোপাঠ করেন শুনেছিলাম। কিন্তু, সেই পুজো এক জন পেশাদার পুরোহিতকেও হার মানিয়ে দিতে পারে, তা আজ জানলাম।’’
অদিতিদেবী বর্তমানে বোলপুরের বাসিন্দা হলেও আসানসোলের ব্রাহ্মণ পরিবারে মেয়েবেলা কেটেছে। বাবা, জ্যাঠামশাইকে বাড়িতে দুর্গা, সরস্বতী-সহ বিভিন্ন পুজো করতে দেখেছেন। শুনে শুনে মন্ত্রোচ্চারণ মুখস্থ করেছেন। এক দিন বাবার কাছে পুজো করার বায়না ধরেন তিনি। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে মেয়েদের গায়ত্রীমন্ত্র উচ্চারণ করতে নেই। অদিতিদেবী জানালেন, তাই প্রথম দিকে তাঁর বাবার একটু সংশয় ছিল। পরে তিনি রামকৃষ্ণ মিশন থেকে দীক্ষা নেন। যাবতীয় সংশয় কেটে যায়। দীক্ষামন্ত্রের পরে গায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারণের অনুমতি মেলে। সেই থেকে নিজের বাড়িতেই সরস্বতী-সহ অন্য পুজো করে আসছেন। অদিতিদেবীর কথায়, ‘‘ছোটবেলার সেই ইচ্ছে যে নিজের স্কুলের কাজেও লেগে যাবে, তা কখনও ভাবিনি।’’
স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি জ্ঞানেন্দ্রমোহন ঘোষ, প্রধান শিক্ষিকা মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় এমনিতেই এ বার সরস্বতী পুজো নিয়ে দোটানা ছিল। তার উপরে আচমকা পুরোহিত অশৌচ দশায় পড়ে যাওয়ায় পুজো হবে কি না, চিন্তায় ছিলাম। এক সময়ে নারীশিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই স্কুল গড়ে উঠেছিল। আজ অদিতিদেবীর হাত ধরে নারীদের পুজোর অধিকারও প্রতিষ্ঠিত হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy