Advertisement
০৬ অক্টোবর ২০২৪
school

School Reopening: ভয়ে ভয়েই স্কুলে যাব, ক’জন আসবে জানি না

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

ভুজেন মণ্ডল
মুর্শিদাবাদ শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২৮
Share: Save:

লকডাউনে স্কুলটা বন্ধ হতেই মাথায় বাজ পড়েছিল আমার। তখনই বুঝতে পেরেছিলাম, সব থেকে বড় ক্ষতিটা হবে আমাদের মতো চর এলাকার পিছিয়ে পড়া এলাকার ছাত্রছাত্রীদের। যাদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। যাদের পঠন-পাঠনের জায়গা বলতে এক মাত্র স্কুল। মনেপ্রাণে চেষ্টা করেও এখানকার অনেক ছাত্রছাত্রীদের আমরা অনলাইন ক্লাসের আওতায় আনতে পারিনি। কাউকে ফোন করলে তার বাবা ধরে বলেছেন, ‘‘আমি কাজে বেরিয়েছি। অনেক রাতে ফিরব।’’ কোথাও শুনছি, স্মার্টফোন নেই। যদি সব ঠিক থাকে, তা হলেও ইন্টারনেট খুবই দুর্বল। দু’দিক থেকে মরিয়া চেষ্টা করেও যোগাযোগ ধরে রাখতে পারছি না। তাই আমরা অনলাইনের পঠন-পাঠন সুষ্ঠু ভাবে চালাতে পারিনি। কিন্তু শিক্ষকরা ছাত্রদের সঙ্গে যতটা সম্ভব ফোনে যোগাযোগ রেখেছি, প্রশ্ন-উত্তর হয়েছে ফোনে। কিন্তু এ ভাবে কতটা সম্ভব? কেবল আগ্রহী কিছু পড়ুয়া আর অভিভাবকের চেষ্টায় কয়েক জনকে লেখাপড়ার সংস্পর্শে রাখা সম্ভব হয়েছে।

রাজশাহী শহরের ঠিক উল্টো দিকে মুর্শিদাবাদের রানিনগরে আমার স্কুল চর দুর্গাপুর হাই স্কুল। রানিনগরের বিস্তীর্ণ চর এলাকা ছাড়াও নির্মল চরের বেশ কিছু ছাত্রছাত্রী এই স্কুলে লেখাপড়া করে। মোট এগারোশো ছাব্বিশ জন পড়ুয়া। তেইশ জন শিক্ষক। একেবারে প্রত্যন্ত এলাকা। বর্ষাকালে আগে পদ্মার জলে ভেসে যেত গোটা এলাকা, স্কুল পুরোপুরি বন্ধ থাকত। এখন পাকা রাস্তা হয়েছে। তবে নির্মল চর এলাকার শতাধিক ছাত্রছাত্রীকে এখনও পদ্মার শাখা নদী পেরিয়ে আসতে হয় স্কুলে।

এই দেড় বছরে মিড ডে মিল বিতরণের সময় অভিভাবকদের সঙ্গে কথা হত। অনেকেই পেশায় দিনমুজর, কেউ ছোটখাট ব্যবসা বা কাজ করেন। চাকরিজীবী খুবই কম। লকডাউনে তাঁদের রোজগার ধাক্কা খেয়েছে। তবু তাঁদের বারবার করে বলতাম, ছেলেকে একটা স্মার্টফোন কিনে দিন। তখন অনেকেই প্রশ্নটা ছুড়ে দিয়েছিলেন আমাদের দিকে, ‘‘চাল কেনার পয়সা নেই, ফোন কিনব কোথা থেকে মাস্টারমশায়?’’ এমনকি ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ব্যাপারে জানতে চাইলেও তাঁদের সটান উত্তর, ‘‘স্কুল বন্ধ থাকায় উচ্ছন্নে গেল ছেলেটা। দিনরাত খেলাধুলো নিয়ে মেতে থাকছে।’’ শুনতে পাই, অনেক অভিভাবকের প্রচ্ছন্ন মদতেই নাবালক পড়ুয়ারা এই লম্বা ছুটির সময় কাজের খোঁজে পাড়ি দিয়েছে ভিন্ রাজ্যে। তবে নাবালিকা বিবাহের খবর আমাদের কানে পৌঁছয়নি।

স্কুল খুললে ভয়ে ভয়েই যাব। পড়াশোনার ক্ষতি কত দূর হয়েছে, বুঝতে পারব। তবে ক’জন পড়ুয়া আসতে পারবে, তা জানি না।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক, চর দুর্গাপুর হাই স্কুল

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE