বাম আমলেও ছিলেন মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠ, তৃণমূল জমানাতেও পার্থ এবং মানিকের ‘কাছের লোক’ তাপস! গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে নতুন নতুন তথ্য। সেখানে নয়া সংযোজন ‘গোল্ড মেডেলিস্ট’ তাপস মণ্ডল। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট(ইডি)-এর দাবি, তাপসের শিক্ষক শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান থেকেই দুর্নীতি শুরু করেন প্রাথমিক শিক্ষক পর্ষদের অপসারিত সভাপতি তথা বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য। এক সময় রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও নাকি সুসম্পর্ক ছিল তাপসের। তাঁর প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হলেই নাকি টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়ার দরজা খুলে যেত।
কে এই তাপস মণ্ডল? কী ভাবে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়া হরেকৃষ্ণপুর গ্রামের নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় ছেলে তাপসের ‘উত্থান’? কী ভাবে নিয়োগ ‘দুর্নীতি’ নাম জড়াল তাঁর?
বর্তমানে উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের বাসিন্দা তাপসের আদি বাড়ি পাঁশকুড়ায়। স্থানীয় সূত্রে খবর, এক সময় সিপিআই কর্মী ছিলেন তিনি। আশির দশকে যোগ দেন মার্ক্সসিস্ট ফরওয়ার্ড ব্লকে স্থানীয় সূত্রে খবর, প্রভাবশালীদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার সহজাত ক্ষমতা রয়েছে তাপসের। তৃণমূল আমলে পার্থ-মানিকের কাছের লোক তাপসের সঙ্গে বাম আমলের দমকল মন্ত্রী রাম চট্টোপাধ্যায়েরও ঘনিষ্ঠতা ছিল। এমনকি, সে সময় প্রভাব খাটিয়ে পাঁশকুড়ার বেশ কয়েক জনকে দমকলে চাকরি পাইয়ে দেন তাপস। বিনিময়ে টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে এক বার গ্রেফতারও হয়েছিলেন তাপস।
বর্তমানে তাপস একাধিক ট্রাস্ট চালান। সেই ট্রাস্টের অধীনে রয়েছে একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে মূল প্রতিষ্ঠানটি রয়েছে মহিষবাথানে। সেখানেই প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের অপসারিত সভাপতি মানিকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার শুরু বলে খবর। গত শনিবার সেখানে তল্লাশি করেন ইডির তদন্তকারীরা। এ ছাড়াও, কলেজ স্ট্রিটের একটি ঠিকানা ও তাপসের বারাসতের বাড়ি টানা তল্লাশি চালান ইডি আধিকারিকরা।
‘মিনার্ভা এডুকেশনাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’-এর কর্ণধার হিসাবে কাজ করে আসছেন। বারাসতের বালক আশ্রমের পাশে একটি বাড়িতে থাকেন তাপস। সূত্রের খবর, ২০১২ সালে বারাসতের কামাখ্যা বালক আশ্রমের ডিএলএড কলেজের সঙ্গেও যুক্ত হন আশ্রমের কলেজের কার্যকারী সভাপতি পদে থাকা তাপস। ওই আশ্রমের কর্ণধার মাধব ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘তাপস মণ্ডল একজন শিক্ষাবিদ এবং স্বর্ণপদক প্রাপ্ত।’’ তা কীসে স্বর্ণপদক পেয়েছিলেন তাপস? মাধব জানাচ্ছেন, তা জানেন না। ওই পরিচয়টুকুই ছিল তাঁর কাছে।
রাজ্য ডিএলএড কলেজ ইউনিয়নের সভাপতি ছিলেন তাপস। এ ছাড়া, ‘অল বেঙ্গল টিচার্স ট্রেনিং অ্যাসোসিয়েশন’ এরও সভাপতি ছিলেন। ইডির অভিযোগ, চাকরি দেওয়ার নামে অনেক চাকরিপ্রার্থীর কাছে টাকা নিয়েছেন তাপস। এমনকি, উচ্চপ্রাথমিকে চাকরি দেবেন বলেও অনেকের কাছ থেকে ‘অগ্রিম’ টাকা নিয়েছেন। কিন্তু সেই প্যানেল তৈরি না হওয়ার কারণে চাকরি দিতে পারেননি বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি নিয়ম-বহির্ভূত ভাবে নিয়োগের অভিযোগে হাই কোর্টের নির্দেশে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি খুইয়েছেন তাপসের ভ্রাতৃবধূ পারমিতা মণ্ডল। এই পারমিতার নামে আবার রয়েছে পাতন্দা গ্রামে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ। পারমিতার স্বামী, তাপসের ভাই বিভাস সেটির দেখাশোনা করেন বলে খবর। তাপসকে আগামী ২০ অক্টোবর সকাল ১১টায় সমস্ত নথি নিয়ে বিধাননগরের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হতে বলেছে ইডি। কিন্তু তাপসের ছেলে ব্রজেশ জানিয়েছেন, বাবা রয়েছেন হরিদ্বারে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy