Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Saidul Laskar

‘শোনা হয়নি’ মনের কথা, দেখা মেলেনি মোদীর, স্মারক ফেরালেন কলকাতার ট্যাক্সিচালক শাহিদুল

শাহিদুল আশা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে হাসপাতালের সবিস্তার পরিকল্পনার কথা বলতে পারবেন। সমস্যার কিছু সুরাহা হবে। কিন্তু কোথায় কী?

রাজ্যপালের হাত থেকে উত্তরীয় ফিরিয়ে দিলেন শাহিদুল লস্কর। রবিবার রাজভবনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

রাজ্যপালের হাত থেকে উত্তরীয় ফিরিয়ে দিলেন শাহিদুল লস্কর। রবিবার রাজভবনে। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ মে ২০২৩ ০৬:৩৬
Share: Save:

প্রধানমন্ত্রী ‘মনের কথা’ আপন মনে বলে চলেন। কিন্তু মানুষের মনের কথা কি সত্যিই তাঁর কানে পৌঁছয়?

নরেন্দ্র মোদীর ‘মন কি বাত’-এর ১০০তম পর্ব দেশ জুড়ে উদ্‌যাপনের পটভূমিতে উঠে এল প্রশ্নটি। এবং তা উস্কে দিলেন বঙ্গের এক ট্যাক্সিচালক।

রবিবার কলকাতার রাজভবনের অনুষ্ঠানমঞ্চে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ট্যাক্সিচালক শাহিদুল লস্কর ফিরিয়ে দিলেন স্মারক। বছর পাঁচেক আগে তাঁর মন কি বাতে শাহিদুলের প্রসঙ্গ প্রথম পাড়েন মোদী। এ রাজ্যের দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের পুঁড়ি গ্রামে নিজের অকালমৃত বোনের স্মৃতিতে একটি হাসপাতাল গড়ে তুলেছেন শাহিদুল। প্রধানত যাত্রীদের কাছে চেয়েচিন্তে এ এক দুঃসাধ্য সাধনের কাহিনি। মন কি বাতের ৪৯তম পর্বে মোদী তাঁর কথা বলার পরে দিল্লিতে আমন্ত্রণও পেয়েছিলেন শাহিদুল। এ বার শততম পর্ব সম্প্রচারের দিনে, রবিবার কলকাতার রাজভবনেও ডাক পেয়েছিলেন। অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে হঠাৎ কেন বেসুর বাজলেন তিনি?

শাহিদুল এ দিন আনন্দবাজারকে বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী তো তাঁর মনের কথা বলছেন। কিন্তু আমিও ওঁকে আমার মনের কথা বলতে চেয়েছিলাম। সে আর শুনলেন কই! পরপর দু’বার কত আশা নিয়ে দিল্লি গেলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে চোখের দেখাটুকুই দেখতে পেলাম না!’’ চিকিৎসার অভাবে মৃতা বোন মারুফার নামে হাসপাতালটি ২০০৪ থেকে প্রাণপণ চেষ্টায় গড়ে তুলছেন শাহিদুল। তেতলা বাড়ি হয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সপ্তাহে দু’দিন বহির্বিভাগ ছাড়া কিছুই এগোতে পারেননি। শাহিদুল বলেন, ‘‘সপ্তাহে দু’দিন নিখরচায় ওষুধ দিই। কিন্তু আমি তো ৫০ শয্যার হাসপাতাল তৈরি করতে চেয়েছিলাম। এখনও পর্যন্ত লোককে ভর্তি রেখে চিকিৎসা শুরুই করা গেল না। প্রধানমন্ত্রী আমায় নিয়ে কত কথা বললেন। কিন্তু আমার স্বপ্নটা এখনও স্বপ্নই থেকে গেল!’’

শাহিদুল আশা করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা হলে হাসপাতালের সবিস্তার পরিকল্পনার কথা বলতে পারবেন। সমস্যার কিছু সুরাহা হবে। কিন্তু কোথায় কী? মোদীর জন্য বারুইপুরের বিখ্যাত পেয়ারা হাতে করে নিয়ে গিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। প্রসার ভারতীর চেয়ারম্যানের হাতে তা সঁপে দিয়ে ফিরে আসতে হয়। এই ২০২৩-এ দিল্লি গিয়েও প্রধানমন্ত্রীর দেখা পাননি শাহিদুল।

এ দিন রাজভবনে শাহিদুল শুনেছেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন ‘মন কি বাত’ হল তাঁর দেশের মানুষ পুজোর অনুষ্ঠান। রাজ্যপালও এ দিন বলেন, ‘‘ইন্দ্রধনুর মতোই প্রধানমন্ত্রীর এই অনুষ্ঠান হল মনের সঙ্গে মন জোড়ার ‘নরেন্দ্র-ধনু’!’’ অনুষ্ঠানেও দেখা যায়, দেশের নানা প্রান্তের কৃতীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী কথা বলছেন। এর পরে মঞ্চে শাহিদুলকে ডাকা হতেই সুর যায় কেটে। রাজ্যপালকে নমস্কার করে সবিনয়ে উত্তরীয় পরতে বা স্মারক গ্রহণে তাঁর অপারগতার কথা জানিয়ে দেন শাহিদুল। তিনি ঠিক কী বলছেন, তা অবশ্য মাইক না-থাকায় শোনা যায়নি। রাজ্যপাল খানিক অপ্রস্তুত হয়ে থমকে যান। এর পরে ফের অন্যদের স্মারক বিলি চলে।

রাজভবনে এ দিন রাজ্যের অনেক অখ্যাত গুণিজনের দেখা মিলেছে। তাঁদের মধ্যে সাঁওতালিতে সংবিধানের তর্জমাকারী শ্রীপতি টুডু, রামায়ণের পট আঁকিয়ে শিল্পী পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার সেরামুদ্দিন চিত্রকর, কৃতী গরিব ছাত্র অভয় গুপ্তদের কথাও প্রধানমন্ত্রী তাঁর অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্বে বলেছেন। জলপাইগুড়ির সারিন্দাবাদক ১০২ বছরের মঙ্গলাকান্তি রায়-সহ পদ্মসম্মান প্রাপ্ত অনেকেও এ দিন এসেছিলেন। ছিলেন বিনোদন ও শিক্ষা জগতের কিছু মুখও।

শুধু এই ভিড়ের মাঝখানে ছিটকে এসেছে ব্যতিক্রমী, ট্যাক্সিচালক শাহিদুলের কথা, ‘‘কী করব, আমার যে খুব কষ্ট হচ্ছিল! মনের এই কথাটাই সবাইকে বোঝাতে চাইলাম।’’

অন্য বিষয়গুলি:

mann ki baat CV Ananda Bose West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy