ফাইল ছবি
সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা থেকে কলকাতার নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসারের বহির্বিভাগে ডাক্তার দেখাতে এসে শিবাণী সর্দার নামে এক রোগীকে নাস্তানাবুদ হতে হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিস্থিতি এমনই যে, দীর্ঘ অপেক্ষার পরেও অনেকে ক্লান্ত হয়ে ডাক্তার না দেখিয়ে ফিরছেন। কোথাও ভর্তি থাকা রোগীর পরীক্ষার জন্য রক্ত সংগ্রহও আগের মতো সাবলীল নয়। এই পরিস্থিতি কম-বেশি রাজ্যের প্রায় সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। কেন, সেই উত্তর নেই প্রায় কারও কাছেই। কর্তৃপক্ষের জবাব, পরিষেবা ও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক।
তা হলে কেন এমন পরিস্থিতি? অন্দরের খবর, সরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পরিকাঠামোয় পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি বা জুনিয়র রেসিডেন্টদের কাজের গতি কমেছে। ফলে প্রভাব পড়ছে রোগী পরিষেবায়। যদিও হাসপাতালের বিভাগীয় প্রধানদের দাবি, করোনার জেরে জুনিয়র রেসিডেন্টদের কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হলেও বাধা পায়নি রোগী পরিষেবা।
কিন্তু জুনিয়র রেসিডেন্টদের কাজের গতি কমছে কেন? স্বাস্থ্য ভবন সূত্রের খবর, প্রতি বছর জানুয়ারিতে মেডিক্যালের স্নাতকোত্তর এবং পিজি ডিপ্লোমার মতো ক্ষেত্রে সর্বভারতীয় স্তরে একটি প্রবেশিকা পরীক্ষা হয়। যার ভিত্তিতে সরকারি হাসপাতালে জুনিয়র রেসিডেন্টরা যোগ দেন। তিন বছরের এই পাঠ্যক্রমের পড়ুয়া-চিকিৎসকেরাই পরিষেবা নিয়মিত দেন। তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা হয় মার্চ-এপ্রিলে। কিন্তু ২০২০ সাল থেকে সেই ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়েছে। সে বার তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা হয়েছিল জুন-জুলাইয়ে। চলতি বছরের জানুয়ারির সর্বভারতীয় প্রবেশিকা, নিট পিছিয়ে হয়েছে সেপ্টেম্বরে। প্রতি বছরের মতোই সেই পরীক্ষায় কোটা সংক্রান্ত মামলা হয়। এ বারেও তেমন হওয়ায় আটকেছে কাউন্সেলিং। নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট এই সংক্রান্ত মামলার শুনানির সময় দিয়েছে জানুয়ারিতে। চিকিৎসকদের মতে, সব কিছু
ঠিক থাকলেও ২০২১-এর পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনিদের হাসপাতালে যোগ দিতে আগামী বছরের মার্চ মাস হয়ে যাবে। অর্থাৎ পরিষেবার মূল দায়িত্ব থাকে যাঁদের কাঁধে, সেই পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ট্রেনি চিকিৎসকদের প্রথম বর্ষে এখন কেউ নেই। এ দিকে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় বর্ষের চিকিৎসকেরা রোগীর পরিষেবা দেওয়ার পাশাপাশি গবেষণাপত্র তৈরি, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সম্মেলন নিয়েও ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অনুপস্থিত প্রথম বর্ষের দায়িত্ব সামলাতে হচ্ছে তাঁদেরই।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের এমডি চূড়ান্ত বর্ষের এক চিকিৎসক বলছেন, “প্রতিবাদ করলে প্রভাব পড়বে রোগীদের উপরে। তাই সে পথে না হাঁটলেও শরীর-মন সায় দিচ্ছে না। করোনাভাইরাসের শুরুর পর্বে ছিলাম প্রথম বর্ষে। যে ভাবে টানা পরিষেবা দিতে হয়েছিল, আজও গবেষণার ক্ষতি করে সে ভাবেই সামলাতে হচ্ছে।” অভিযোগ, সহযোগিতা মিলছে না প্রশাসনের। দেরি করছে আদালতও।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের দ্বিতীয় বর্ষের এক জুনিয়র রেসিডেন্ট বলছেন, “দু’বছর ধরে প্রথম বর্ষের কাজ করছি। অথচ খাতায়কলমে দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। পিপিই সব থেকে বেশি সময়ে পরে থাকতে হয় আমাদেরই। রোগীর পরিজনদের বিক্ষোভ থেকে শুরু করে যে কোনও অভিযোগ আমরাই সামলাচ্ছি। বড়রা না মানলেও এটা ঠিক কথা যে, আমরা না চাইলেও পরিষেবায় ঘাটতি হচ্ছে। প্রশাসন ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা বলছেন, “সরকার বিষয়টা নিয়ে অবগত বলেই ধারাবাহিকতা ভেঙে তৃতীয় বর্ষ পাশ করার পরেও স্নাতকোত্তর চিকিৎসকদের সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের সেই বিভাগেই বহাল রেখেছে। শীর্ষ আদালতের রায়ের বিষয়টি রাজ্য সরকারের হাতে নেই। তাই অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায় নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy