চালু হওয়ার আগেই প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হল রাজ্যের মিষ্টি হাব ঘিরে। প্রথমে ঠিক হয়েছিল, ২৪ ঘণ্টাই খোলা থাকবে নিউ টাউনের মিষ্টি হাব। কারণ, বিদেশের বেশির ভাগ বিমানই রাতে ছাড়ে, তাই যে কোনও সময়ে ক্রেতারা এসে যাতে মিষ্টি কিনতে পারেন, সেই জন্যই ওই পরিকল্পনা করা হয়েছিল। কিন্তু তাতে বেঁকে বসেছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। তাঁদের সাফ বক্তব্য, ২৪ ঘণ্টা মিষ্টি হাব খুলে রাখা সম্ভব নয়! শুধু তাই নয়, একাধিক প্রসিদ্ধ মিষ্টি বিপণি সংস্থা প্রথম দিকে রাজি থাকলেও শেষ পর্যন্ত তারা দরপত্রে অংশগ্রহণ করেনি। প্রসঙ্গত, সোমবারই ছিল মিষ্টি হাবের দরপত্র পূরণের শেষ দিন।
সারা ক্ষণ দোকান খুলে রাখার আপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করে ব্যঙ্গের সুরে ব্যবসায়ীদের ব্যাখ্যা, একমাত্র শ্মশানেই ২৪ ঘণ্টা মিষ্টির দোকান খোলা থাকে। অন্যত্র তেমনটা হয় না। তাই নিউ টাউনের মিষ্টি হাবেও ২৪ ঘণ্টা দোকান খুলে রাখা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, ২৪ ঘণ্টা খুলে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামাও অনেকের নেই। সে কথা ইতিমধ্যেই ওই হাব তৈরির দায়িত্বে থাকা হিডকোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। প্রসঙ্গত, বর্ধমানেও একটি মিষ্টি হাব তৈরি করা হয়েছে সরকারের তরফে। কিন্তু সেখানেও ভাল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন মিষ্টি ব্যবসায়ীদের একাংশ।
বছর খানেক আগেই নিউ টাউনের ইকো পার্কে আন্তর্জাতিক মানের একটি মিষ্টি হাব তৈরির পরিকল্পনা করেছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিকল্পনা মতো সেখানে শুধু বিভিন্ন জেলার বিখ্যাত মিষ্টিই নয়, পাওয়া যাবে কলকাতার প্রসিদ্ধ সব দোকানের বিশেষ বিশেষ মিষ্টিও। এমনিতে বাংলার মিষ্টি নিয়ে বিদেশি পর্যটকদের আলাদা আগ্রহ রয়েছে। ভিন্ রাজ্য থেকেও যখনই কেউ আসেন, তাঁরাও এখানকার মিষ্টি সঙ্গে করে নিয়ে যান। তাই বিদেশি পর্যটকদের পাশাপাশি ভিন্ রাজ্যের পর্যটকেরাও যাতে নিজেদের পছন্দ মতো মিষ্টি সঙ্গে নিয়ে যেতে পারেন, সে কারণে বিমানবন্দরে যাওয়ার পথেই ওই মিষ্টি হাবের পরিকল্পনা করা হয়েছে।
শহরের এক বিখ্যাত মিষ্টি বিপণির কর্ণধার ধীমান দাশ বলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা মিষ্টির দোকান কোথাও খোলা থাকে না একমাত্র শ্মশান ছাড়া। কিন্তু মিষ্টি হাবে তেমনটা কেন হবে? তা ছাড়া মিষ্টি বাসি হয়ে যাওয়ারও একটা ব্যাপার থাকে। অনেকেই বাসি মিষ্টি কিনতে চান না। এটাই প্রচলিত রীতি। তাই ২৪ ঘণ্টা যে দোকান খুলে রাখা সম্ভব নয়, তা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি।’’ একটি মিষ্টি বিপণির কর্ণধার সুদীপ মল্লিক অবশ্য জানিয়ে দেন, ২৪ ঘণ্টা দোকান খুলে রাখায় তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু তাঁর প্রশ্ন, ‘‘ক্রেতারা আসবেন সেটা নিশ্চিত তো? ২৪ ঘণ্টা দোকান খুলে রাখার জন্য যথেষ্ট খরচ হবে।’’
যদিও শহরের একাধিক প্রসিদ্ধ মিষ্টি বিপণি সংস্থা শেষ পর্যন্ত দরপত্র প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণই করেনি। প্রসিদ্ধ এক মিষ্টি বিপণির কর্ণধার প্রদীপ নাগ বলেন, ‘‘লোকবলের অভাব রয়েছে। এটা তো সাময়িক ব্যাপার নয়, এটা একটা স্থায়ী ব্যাপার। তাই দরপত্রে অংশগ্রহণ করা হয়নি।’’ অন্য মিষ্টি বিপণির কর্ণধার সন্দীপ সেনও বলেন, ‘‘দোকান দেখভালের লোকজনের অভাব রয়েছে। তাই আমরাও দরপত্র পূরণ করিনি।’’
হিডকোর তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, কতক্ষণ দোকান খোলা রাখবেন ব্যবসায়ীরা, সেটা তাঁদের উপরেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, ‘‘এটা ওঁদের ব্যবসা। ওঁরাই ঠিক করবেন। কেউ যদি মনে করেন সারাক্ষণ চালাবেন না, সেটা তাঁদের ব্যাপার।’’ মিষ্টি হাব সম্পূর্ণ হতে এখনও কিছুটা কাজ বাকি রয়েছে। তবে তা দ্রুত শেষ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন দেবাশিসবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy