অনুষ্ঠানে শুভেন্দু। —নিজস্ব চিত্র।
আর জি কর-কাণ্ডের আবহে ভোট রাজনীতিতে মেরুকরণের অস্ত্রেই শাণ দিলেন বিজেপির দুই শীর্ষ নেতৃত্ব।
পূর্ব মেদিনীপুরের সুতাহাটার দ্বারিবেড়িয়া স্কুলমাঠে রবিবার বিজেপির তমলুক সাংগঠনিক জেলার বিজয়া সম্মিলনীতে উপস্থিত হয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘সিপিএম শুধু হিন্দু ভোট কাটছে। তার জন্য গত লোকসভা নির্বাচনে ১২টি আসনে বিজেপি পরাজিত হয়েছে।’’ দু’দিন আগে সিঙ্গুরে গিয়ে বিরোধী দলনেতা বলেছিলেন, তৃণমূল কংগ্রেসকে হারানোর আগে সিপিএমকে নির্মূল করতে হবে! কারণ, সিপিএম জিততে না-পারলেও যা ভোট পাচ্ছে, তাতে তৃণমূলের জয়ের রাস্তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে। শুভেন্দুর মুখে এ দিন উঠে এসেছে তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র নন্দীগ্রামের প্রসঙ্গ। বিজয়া সম্মিলনীতে তথ্য দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, নন্দীগ্রাম বিধানসভা এলাকায় হিন্দু ভোটের অনেকটাই সিপিএম থেকে বিজেপিতে এসেছে। তিনি বলেছেন, ২০২১ -এর বিধানসভা নির্বাচনে নন্দীগ্রাম কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় পেয়েছিলেন ৬২০০ ভোট। লোকসভা নির্বাচনে সেই ব্যবধান কমে হয়েছে ৩৭০০। বিরোধী দলনেতার বক্তব্য, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে ২৫০০ হিন্দু ভোট সিপিএম থেকে বিজেপিতে এসেছে। বাকি ৩৭০০ ভোট বিজেপির পক্ষে আনতে হবে। আগামী ২০২৬-এ নন্দীগ্রামে হিন্দুদের ৯০% ভোট বিজেপিতে নিয়ে আসব!’’
গত লোকসভা ভোটের পর থেকেই হিন্দুত্বের তাসে নতুন করে জোর দিচ্ছেন শুভেন্দু। আর জি কর-কাণ্ডকে ঘিরে চলমান আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। রাজনৈতিক শিবিরের একাংশের মতে, নাগরিক আন্দোলন জোরালো হলেও তার নেপথ্যে বামেদের ভূমিকা ও প্রভাব স্পষ্ট হয়েছে অনেকটাই। প্রধান বিরোধী দল হলেও বিজেপি সে ভাবে দাঁত ফোটাতে পারেনি। তাই শুভেন্দু বামেদের তীব্র আক্রমণের পাশাপাশি মেরুকরণের অস্ত্রেই শাণ দিচ্ছেন।
আর জি কর-কাণ্ডের জেরে সিপিএম অথবা কংগ্রেস যাতে ভোটে সুবিধা করতে না পারে, সে বিষয়ে এ দিন সতর্ক করেছেন রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষও। দলের সদস্য সংগ্রহ অভিযানে যোগ দিতে খড়্গপুরে গিয়ে এ দিন তিনি বলেছেন, ‘‘ঐতিহাসিক প্রতিবাদ আন্দোলন হয়েছে জুনিয়ার ডাক্তারদের নেতৃত্বে। সাধারণ মানুষ মাসের পর মাস তা চালিয়ে যাচ্ছেন। একটা অনুকূল বাতাবরণ হয়েছে। তবে সিপিএম ও কংগ্রেস এই পরিবেশ ঘেঁটে দিতে চাইছে।’’ তিনি যোগ করেন, “এখানকার সিপিএম-কংগ্রেস চাইছে পরিবেশটা ঘেঁটে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচিয়ে রাখতে। যাতে বিজেপি ক্ষমতায় না আসে। এই নির্বাচনে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেমন দোষী, তেমন আন্দোলনকে যারা বিপথগামী করতে চাইছে, তারাও দোষী।” আসন্ন উপনির্বাচনের তালিকায় রয়েছে মেদিনীপুর বিধানসভা কেন্দ্র। দিলীপ সেই উপনির্বাচনের কথা উল্লেখ করেছেন। উপনির্বাচনে মেদিনীপুরের বিজেপি প্রার্থী শুভজিৎ রায় এ দিন প্রচার শুরুর আগে খড়্গপুরে পৌঁছে দিলীপের আশীর্বাদও নিয়েছেন।
দলীয় বৈঠকে খড়্গপুরে গিয়ে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘‘এক সময়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সৈনিক হয়ে শুভেন্দু বামেদের বিরুদ্ধে নেমেছিলেন। তার পরেও দু’জনে লাল ঝান্ডাকে নির্মূল করতে চেয়েছেন। কিন্তু সেটা কিছুতেই হচ্ছে না দেখে মমতা এবং শুভেন্দুর দু’দলই এখন আবার সিপিএমকে আক্রমণে নেমেছে। বিজেপি ও তৃণমূল, দু’টো দলই যে দু’দলের উপরে ভরসা করে আছে, সেটা বারবার বোঝা যাচ্ছে!’’ শুভেন্দুর মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের নেতা কুণাল ঘোষের দাবি, ‘‘বিজেপি জাতপাত, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে। তৃণমূল উন্নয়নের রাজনীতি করে। পশ্চিমবাংলার মানুষ উন্নয়নের পক্ষে ভোট দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy