শুভেন্দু অধিকারী। —ফাইল চিত্র
স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আগামী সোমবার সশরীরে বিধানসভায় গিয়ে ইস্তফাপত্রে সই করে আসবেন শুভেন্দু অধিকারী। শুক্রবার তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে তেমনই জানানো হয়েছে। তবে পাশাপাশিই ওই সূত্র জানিয়েছে, আজ অমিত শাহের সভায় শুভেন্দুর যোগদানও পাকা। প্রসঙ্গত, আনন্দবাজার ডিজিটালেই একমাত্র লেখা হয়েছিল, স্পিকার চিঠি পাঠিয়ে তাঁকে ডাকলে তিনি আবার বিধানসভায় স্পিকারের কাছে গিয়ে সশরীরে ইস্তফাপত্রে সই করে আসবেন। বাস্তবেও তার অন্যথা হচ্ছে না।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার বিধানসভা ভবনে গিয়ে স্পিকারের সচিবালয়ে বিধায়কপদ থেকে তাঁর ইস্তফাপত্র দিয়ে এসেছিলেন শুভেন্দু। পাশাপাশি, ইমেলেও স্পিকারকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শুক্রবার স্পিকার বলেন, শুভেন্দুর ইস্তফাপত্র ‘বৈধ’ নয়। কারণ, সেটি সশরীরে এসে তাঁর স্পিকারের কাছে জমা দেওয়ার কথা। বস্তুত, যে কোনও আইনসভার সদস্যই যদি পদত্যাগ সকরতে চান, তা হলে তাঁকে নিজে গিয়ে সংশ্লিষ্ট আইনসভার স্পিকারের কাছে ইস্তফাপত্র জমা দিতে হয়। সেটিই আইন। সেইমতোই স্পিকার বলেন, ‘‘শুভেন্দুর ইস্তফাটি বৈধ নয়। আমি তাঁকে আগামী ২১ জিসেম্বর, সোমবার বেলা দুটোর সময় এসে আমার সঙ্গে দেখা করে আবার ইস্তফা দিতে বলেছি।’’ পাশাপাশিই স্পিকার জানান, শুভেন্দুর হাতে লেখা ইস্তফাপত্রটিতে কোনও তারিখ দেওয়া নেই। যদিও ইমেলে পাঠানো ইস্তফাপত্রে তারিখ আছে। স্পিকারের কথায়, ‘‘ফলে আমার বিধানসভায় তিনি এখনও খাতায়কলমে তৃণমূলেরই বিধায়ক।’’
তৃণমূলের একাংশের বক্তব্য, ইস্তফাপত্র গৃহীত না-হওয়ায় শুভেন্দু যেহেতু এখনও খাতায়কলমে তৃণমূলের বিধায়ক এবং সোমবার পর্যন্ত তিনি তা-ই থাকবেন, তাই আজ তিনি বিজেপি-তে যোগ দিলে তা তাঁর পক্ষে ‘অনৈতিক’ হবে। শাসকদলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘শুভেন্দু তো খুব নীতির কথা বলে। তা হলে কী ভাবে ও তৃণমূলের বিধায়ক থেকে বিজেপি-তে যোগ দেবে!’’
আরও পড়ুন: মেদিনীপুর সমাবেশে কৃষক ও তফশিলি উপস্থিতি চান অমিত, তৎপর বিজেপি
শুভেন্দু শিবির অবশ্য এ সব হেলায় উড়িয়ে দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, সারা দেশ দেখেছে, শুভেন্দু নিজে বিধানসভায় গিয়েছিলেন। সিঁড়ি বেয়ে দোতলায় উঠেছেন। স্পিকারের সচিবালয়ে ইস্তফা জমা দিয়েছেন। চিঠির প্রতিলিপিতে ‘রিসিভ্ড’ স্ট্যাম্প দিইয়ে নিয়েছেন এবং ইস্তফাপত্রটি সর্বসমক্ষে তুলে ধরে দেখিয়েছেন। এক শুভেন্দু-অনুগামীর কথায়, ‘‘স্পিকার ভুল কিছু বলেননি। আইনের এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই যা বলার বলেছেন। কিন্তু সেটা নিছকই একটা টেকনিক্যাল বিষয়। সারা দেশ, সারা রাজ্য দেখেছে এবং সকলে জানেন, শুভেন্দু অধিকারী আর বিধায়ক নন। তিনি সর্বসমক্ষে ইস্তফা দিয়েছেন। তবু স্পিকার তাঁকে ডেকে পাঠানোয় তিনি তাঁকে সম্মান জানিয়ে নির্দিষ্ট দিনে, নির্দিষ্ট সময়ে বিধানসভায় স্পিকারের কাছে যাবেন। স্পিকার যদি পুরোন ইস্তফাপত্রে সই করতে বলেন, তা করবেন। যদি নতুন ইস্তফাপত্র দিতে বলেন, তা-ও করবেন।’’ হাল্কাচালে ওই অনুগামীর আরও বক্তব্য, ‘‘সারা দেশে সাংসদ বা বিধায়ক দল ছাড়ার পর দল তাঁদের বিধায়ক বা সাংসদপদ থেকে যথাসম্ভব দ্রুত ছেঁটে ফেলার চেষ্টা করে। এখানে তো উলটপুরাণ! দেখা যাচ্ছে, উনি দল ছেড়েছেন। কিন্তু দল তাঁকে ছাড়তে চাইছে না!’’
খাতায়কলমে তৃণমূলের বিধায়ক থাকা সত্ত্বেও শুভেন্দু বিজেপি-তে যোগ দিলে তৃণমূল তো তাঁর বিরুদ্ধে ‘নীতিহীনতা’র অভিযোগ আনতে পারে?
আরও পড়ুন: শুভেন্দুর ইস্তফা গ্রহণ করলেন না স্পিকার, সোমবার হাজিরার নির্দেশ
শুভেন্দু-শিবিরের দাবি, ‘‘বাংলার মানুষ জানেন, কে নীতিপরায়ণ আর কারা নীতিহীন।’’ বস্তুত, শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠরা উদাহরণ দিয়ে বলছেন, বিজেপি-র তরফে শনিবার কর্ণগড়ে সনাতন সিংহের বাড়িতে অমিতের সঙ্গে শুভেন্দুকে মধ্যাহ্নভোজে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তিনি সবিনয়ে জানিয়েছেন, দলে যোগ দেওয়ার আগে তাঁর পক্ষে ওই কর্মসূচিতে অংশ না-নেওয়াই ভাল। বিজেপি নেতৃত্ব তাঁর সেই আবেদন মেনে নিয়েছেন বলেই শুক্রবার রাত পর্যন্ত খবর। ওই উদাহরণ দিয়ে শুভেন্দুর অনুগামীদের বক্তব্য, ‘‘নীতির কথা যদি তোলা হয়, তা হলে এটাই হল নীতিপরায়ণতা। ইস্তফায় পদ্ধতিগত ত্রুটির কথা তুলে তৃণমূল যদি কিছু বলতে চায় এবং তার থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চায়, সেটা বাংলার মানুষ বুঝতে পারবেন। ওঁদের উপর সেই ভরসা আমাদের রয়েছে। শুভেন্দু অধিকারী একের পর এক সরকারি পদ ছেড়েছেন। মন্ত্রিত্ব ছেড়েছেন। তারপর বিধায়কপদ ছেড়েছেন। শেষে দলেরও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দলনেত্রীকে চিঠি লিখে। ফলে উনি সমস্তদিক থেকেই নজির তৈরি করেছেন। ওঁর বিরুদ্ধে নীতিহীনতার অভিযোগ তুলে কোনও লাভ হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy