Advertisement
১১ অক্টোবর ২০২৪
Suvendu Adhikari

‘গদ্দার’ ঘিরে শুভেন্দুর পাল্টা তৃণমূলেরও

সোমবার পাল্টা সভা থেকে দু’টি নিয়েই মুখ খুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুরকে আপনি (মমতা) নিজের ছেলে আর নন্দীগ্রামকে পিঠের ছেলে মনে করতেন।’’

Suvendu Adhikari and Mamata Banerjee.

বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র।

কেশব মান্না
খেজুরি শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৩ ০৬:৩৩
Share: Save:

যদিও বাম আমলের জমি আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নিঃশ্বাসে দু’টি নাম উচ্চারণ করা হয়, নন্দীগ্রামের থেকে সিঙ্গুরের প্রতি তবু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষপাতিত্ব ছিল বলে অভিযোগ করলেন শুভেন্দু অধিকারী। গত ৩ এপ্রিল খেজুরির ঠাকুরনগরে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সেখানে এক দিকে উদাহরণ দিয়ে তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, নন্দীগ্রামের সঙ্গে তাঁর যোগ কতটা নিবিড়। অন্য দিকে, বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে ‘গদ্দার’ বলে বিঁধেছিলেন তিনি। সোমবার পাল্টা সভা থেকে দু’টি নিয়েই মুখ খুলেছেন শুভেন্দু। তিনি বলেন, ‘‘সিঙ্গুরকে আপনি (মমতা) নিজের ছেলে আর নন্দীগ্রামকে পিঠের ছেলে মনে করতেন।’’ একই সঙ্গে মমতাকে পাল্টা ‘গদ্দার’ বলেও দেগে দিতে চেয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘রাজীব গান্ধী আপনাকে আবিষ্কার করেছেন, পরিচয় দিয়েছেন। সেই আপনি ১৯৯৮ সালে তৃণমূল তৈরি করে রাজীব গান্ধীকে ছুরি মেরেছেন।’’

শুভেন্দুর এই সব অভিযোগের জবাব দিয়ে গিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘রাজীব গান্ধী মারা গিয়েছেন ১৯৯১ সালে। আর তৃণমূল হয়েছে ১৯৯৭-৯৮ সালে। মনে রাখতে হবে, মমতা ছিলেন রাজীবের নয়নের মণি। তিনি বেঁচে থাকলে মমতাই এ রাজ্যে কংগ্রেসের দায়িত্ব পেতেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘নন্দীগ্রামের আন্দোলন সেখানকার মানুষের আন্দোলন। মমতাদি সেই আন্দোলনকে একটা উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। আর শুভেন্দু হচ্ছেন নন্দীগ্রাম আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে উঠে আসে একটা ফসল।’’

মমতা অনেক ক্ষেত্রেই ‘গদ্দার’ বিশেষণটি ব্যবহার করে থাকেন। জবাবে এ দিন শুভেন্দু পাল্টা একই কটাক্ষ করলেন তাঁকে। শুধু রাজীব গান্ধীর প্রসঙ্গই নয়, তিনি আরও বলেন, ‘‘কেউ যখন আপনাকে আশ্রয় দিচ্ছিল না, ভারতরত্ন অটলবিহারী বাজপেয়ী আপনাকে আশ্রয় দিয়েছেন। তাই আপনিই সব থেকে বড় গদ্দার।’’ এ প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘মমতা ও শুভেন্দু, দু’জনেই অর্ধসত্য বলছেন। দল ভাঙাতে কে কত বড় গদ্দার, ওঁরা বুঝবেন। কিন্তু বাংলার মানুষের কাছে দু’জনেই গদ্দার। যা করার কথা বলেছিলেন, তা না করে ১১ বছর ধরে দু’জনেই রাজ্যটাকে ধ্বংস করছেন!’’

নন্দীগ্রাম নিয়ে দুই শিবিরের মধ্যে অদৃশ্য টানাটানিও চলেছে। বিধানসভা ভোটের আগে যেমন, এখনও সেই প্রসঙ্গে টানা হয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের দৃষ্টান্ত। শুভেন্দু এ দিন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘‘নন্দীগ্রামের ১৭টা অঞ্চলের মধ্যে ২টো অঞ্চল আর ৪১ জন শহিদের মধ্যে যদি তিন জনের নাম বলতে পারলে বুঝব, আপনি নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন।’’ এর পরই সিঙ্গুরের তুলনা টেনে শুভেন্দুর অভিযোগ, ‘‘নন্দীগ্রামের আন্দোলনকে কোনও দিন আপনি স্বীকার করেননি।’’

খেজুরির সভায় মমতা জানিয়েছিলেন, ‘গণহত্যা’র পরে তিনি নন্দীগ্রামে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান। শুভেন্দুর পাল্টা দাবি, ‘‘আপনার সঙ্গে বুদ্ধবাবু ৪০ জন নিরাপত্তারক্ষী আর চারটে পাইলট কার দিয়েছিলেন। আমি নন্দীগ্রাম পুনরুদ্ধার করে দিয়েছিলাম। আপনি ১০ নভেম্বরও আসেননি।’’ তৃণমূল নেতা কুণাল যদিও বলছেন, ‘‘শুভেন্দু যদি নন্দীগ্রাম আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, তবে তাঁর বিরুদ্ধে কেন মামলা হয়নি? মমতাদি তো বারবার বাধা পেয়েছেন। কিন্তু শুভেন্দু কোথায় বাধা পেয়েছিলেন?’’

মুখ্যমন্ত্রী নিয়োগ দুর্নীতিতে তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন, তারও জবাব দিয়েছেন শুভেন্দু। চ্যালেঞ্জ ছুড়ে বলেছেন, ‘‘একটা নাম দেখান মুখ্যমন্ত্রী। একটা প্রমাণ দিন। আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব। আপনার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ক্ষমা চেয়ে নেব।’’ তার পরেই তাঁর পাল্টা দাবি, ‘‘মনে রাখবেন, সবাই জানে, আপনি চোরেদের রানি। আপনি এই সব সিন্ডিকেটের মাথা।’’

অর্থ প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘শুভেন্দু আজ যা হয়েছেন, তা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। ধাত্রী মা, জন্মদাত্রী মায়ের থেকে কম কিছু নয়। তা ভুলে প্রতিনিয়ত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে রুচিহীন মন্তব্য করে চলেছেন। তিনি রাজার দুলাল হয়েছেন, নিজের আয়নায় সকলকে দেখছেন। এ সব কথা কি ওঁর ২০২০ সালের আগে মনে ছিল না? ওঁর এই নোংরা মন্তব্যের জবাব রাজ্যের মানুষ দেবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari Mamata Banerjee TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE