শুভেন্দু অধিকারী এবং (ডান দিকে) তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তী। —ফাইল চিত্র।
শুভেন্দু অধিকারীর প্রাক্তন দেহরক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর রহস্যমৃত্যুর তদন্তে নেমে তাঁর স্ত্রী তথা অভিযোগকারিণী সুপর্ণা চক্রবর্তীর বয়ান রেকর্ড করল সিআইডি। কিসের পরিপ্রেক্ষিতে শুভব্রতের মৃত্যুকে ষড়যন্ত্র ও খুন বলে অভিযোগ করছেন সুপর্ণা, তা খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সুপর্ণার পাশাপাশি শুভব্রতর দাদা দেবব্রত চক্রবর্তীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিআইডি। এই মামলা ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত’ বলে শুভেন্দুর দাবিকে নস্যাৎ করেছেন তাঁর প্রাক্তন দেহরক্ষীর দাদা। দেবব্রতর সাফ দাবি, এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই।
সোমবার দুপুরে সিআইডি-র এক মহিলা আধিকারিক-সহ ৩ সদস্যের একটি দল হাজির হয় সুপর্ণার মহিষাদলের বাড়িতে। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে সুপর্ণার বয়ান রেকর্ড করেন তদন্তকারীরা। কাঁথি থানায় লিখিত অভিযোগে সুপর্ণা জানিয়েছিলেন, ২০১৮-র ১৩ অক্টোবর গুলিবিদ্ধ শুভব্রতর চিকিৎসা নিয়ে টালবাহানা করা হয়েছিল। এমনকি, চিকিৎসার জন্য তাঁকে কলকাতায় নিয়ে যেতেও অযথা দেরি করার অভিযোগ করেন তিনি। সেই সঙ্গে, শুভব্রতর ময়নাতদন্তের সময় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হয় বলেও অভিযোগ করেন সুপর্ণা।
শুভব্রত যে দিন গুলিবিদ্ধ হন, সে দিন দুর্গাপুজোর পঞ্চমী ছিল। ওই দিন সকালে ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু বাড়ি ফেরার আগে আচমকাই ওই দিনই সকালে কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন তৎকালীন সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর দেহরক্ষী শুভব্রত ওরফে বাপি (৩৮)। ঘটনার পর তাঁকে কাঁথি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে রাতের দিকে তাঁকে কলকাতায় বাইপাসের ধারে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় আইসিইউ-অ্যাম্বুল্যান্সে করে। পরের দিন সেখানেই মৃত্যু হয় শুভব্রতের। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদল থানার সরবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা শুভব্রতর মৃত্যুর ওই ঘটনাকে প্রাথমিক ভাবে আত্মহত্যা বলেই মন্তব্য করেছিলেন তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপার ভি সলোমন নেশাকুমার।
এই ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর গত ৭ জুলাই সুপর্ণা ওই ঘটনা নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছেন। শুভেন্দুর প্রাক্তন দেহরক্ষীকে ষড়যন্ত্র করে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে অভিযোগ করেন সুপর্ণা। এর পরেই ওই ঘটনা নিয়ে খুনের মামলা রুজু করে কাঁথি থানার পুলিশ। ঘটনায় ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত’ তদন্ত শুরু করা হয়েছে বলে দাবি করেন বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা নন্দীগ্রামের বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু। কেন খুনের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ঘটনার প্রায় আড়াই বছর পর করা হল, সে প্রশ্নও তুলেছেন তিনি। তবে সুপর্ণা তাঁর অভিযোগপত্রে দাবি করেছেন, ঘটনার সময় শুভেন্দু রাজ্যের প্রভাবশালী মন্ত্রী ছিলেন বলেই সে সময় ওই ঘটনার তদন্ত চেয়ে মামলা করেননি তিনি।
ভাইয়ের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে সেই সময় দাদা দেবব্রতই প্রথম ছুটে গিয়েছিলেন কাঁথি থানায়। আহত ভাইয়ের চিকিৎসা-সহ শুভব্রতর শেষ মুহূর্ত— প্রায় প্রতিটি ঘটনার সাক্ষী তিনিই। তাই অভিযোগকারিণী সুপর্ণার পাশাপাশি দেবব্রতর বয়ানও এই মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। সোমবার দেবব্রত বলেন, ‘‘ভাইয়ের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চেয়েছি আমরা। শুভব্রতর মৃত্যু স্বাভাবিক নয় বলেই আমাদের মনে হয়েছে। যদি এই ঘটনা আত্মহত্যার হয়, তা হলে কেন সে এমনটা করল? কারও প্ররোচনা বা চাপে পড়েই গুলি চালিয়েছিল কি না, জানতে চাই আমরা।’’ এর পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই বলেই দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সুপর্ণা এবং দেবব্রত বয়ান রেকর্ড করা ছাড়াও এর পাশাপাশি শুভব্রতর পরিবারে কোনও সমস্যা ছিল কি না অথবা প্রায় ৭ বছর ধরে শুভেন্দুর দেহরক্ষী হিসাবে কর্মরত থাকাকালীন কর্মক্ষেত্রে কোনও জটিলতার বিষয়ে বাড়িতে জানিয়েছিলেন কি না, সেই দিকগুলিও গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy