Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Suvendu Adhikari

বিজেপি-যোগ ছ’বছরের, কবুল করলেন শুভেন্দু

তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, এক দলে ক্ষমতায় থেকে অন্য দলের সঙ্গে তলায় তলায় যোগাযোগ যিনি রেখে চলেছিলেন, তিনি যে কত বড় বিশ্বাসঘাতক তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গেল।

 পাশে: শনিবার দুপুরে মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু অধিকারী ও অমিত শাহ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

পাশে: শনিবার দুপুরে মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু অধিকারী ও অমিত শাহ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩০
Share: Save:

কাগজে-কলমে তিনি বিজেপিতে গেলেন শনিবার। তবে তৃণমূলের দায়িত্বশীল পদে থাকাকালীন সেই ২০১৪-১৫ সাল থেকেই যে গেরুয়া-শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন, এ দিন কার্যত তা স্বীকার করে নিলেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি, দিন কুড়ি আগে মন্ত্রিত্ব এবং দু’দিন আগে তৃণমূল ছেড়ে আসা শুভেন্দু এ দিন দাবি করলেন, বিগত দশ বছরে তৃণমূলের সরকার রাজ্যের উন্নয়নে কিছুই করেনি।

তৃণমূলের পাল্টা বক্তব্য, এক দলে ক্ষমতায় থেকে অন্য দলের সঙ্গে তলায় তলায় যোগাযোগ যিনি রেখে চলেছিলেন, তিনি যে কত বড় বিশ্বাসঘাতক তা এ দিন স্পষ্ট হয়ে গেল। তা ছাড়া, বিগত দশ বছরে রাজ্য সরকার যদি কোনও কাজ না-ই করে থাকে, তবে সেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে তার দায় শুভেন্দু নিজেও এড়াতে পারেন না।

বস্তুত, বিজেপিতে যোগদানের মুহূর্তে শুভেন্দু বারবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, শীর্ষ গেরুয়া নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বহু পুরনো। মেদিনীপুরের সভায় শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘অমিত শাহজির সঙ্গে আমার সম্পর্ক কতদিনের? তিনি তখন পার্টির মহামন্ত্রী, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, পূর্ব উত্তরপ্রদেশের দায়িত্বে, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তিনি দলকে জিতিয়েছেন, উত্তরপ্রদেশে ঝড় বইয়ে দিয়েছেন, তখন অশোক রোডের পুরনো পার্টি অফিসের একটা ছোট্ট ঘরে অমিতজি আমাকে দর্শন দিয়েছিলেন। আর সেই দর্শনের সুযোগ করে দিয়েছিলেন এখন উত্তরপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থনাথ সিংহ।’’ সঙ্গে এ-ও বলে রেখেছেন, ‘‘কিন্তু তিনি আমাকে বিজেপিতে যোগ দিতে বলেননি।’’

আরও পড়ুন: মোদীর ৬ বছরের পুরনো টুইট দিয়েই শাহি-ভোজনকে খোঁচা তৃণমূলের​

বিজেপি-র প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ অবশ্য এ দিন দাবি করেন, শুভেন্দু ২০১৫ সালেই বিজেপিতে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। রাহুলের কথায়, ‘‘সেটা ২০১৫ সাল। সেই সময়ে শুভেন্দু বহুবার আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। কোনও কারণে যোগদান হয়ে ওঠেনি।’’ বস্তুত, ২০১৪ সালের যে সময় শাহ-সাক্ষাতের কথা বলেছেন শুভেন্দু, সেই সময়ই তৃণমূলের রাজ্য যুব সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরানো হয়েছিল। দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল সৌমিত্র খাঁকে। সেই সৌমিত্রও এখন বিজেপিতে।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে অবশ্য এই অমিত শাহরাই নারদ-কাণ্ড সামনে রেখে শুভেন্দু, মুকুলদের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছিলেন। যদিও এ দিন মঞ্চে গলায়-গলায় দেখা গিয়েছে সেই শাহ আর শুভেন্দুকে। শাহের দরাজ প্রশংসা করে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘আমাকে বিজেপির পরিবারের প্রাথমিক সদস্য হিসেবে গ্রহণ করলেন যিনি, তিনি আমার বড় ভাই, আমার দাদা, দেশের আন-বান-শান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। আমি যখন কোভিডে আক্রান্ত হই, আমার দলের লোকেরা, একুশ বছর যাঁদের জন্য করেছি, যাঁদের জন্য অকৃতদার থেকে গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি, তাঁরা আমার খোঁজ নেয়নি। অমিতজি আমার খোঁজ দু’বার নিয়েছেন। তাঁকে আমি কোটি কোটি প্রণাম জানাই।’’ শাহও তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘‘ভাই শুভেন্দুকে মন থেকে বিজেপিতে স্বাগত জানাচ্ছি।’’

শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়ার পিছনে যে মুকুলের ভূমিকা যথেষ্ট, তা-ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন শুভেন্দু। তিনি বলেছেন, ‘‘মুকুল রায় আমাকে সব সময় উৎসাহিত করেছে। বলেছে, ‘শুভেন্দু আত্মসম্মানবোধ যদি তোর থাকে, তুই তৃণমূলে থাকবি না। তোর কিচ্ছু দরকার নেই, চলে আয়। আমরা সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকতে পারব।’ আজকে তাঁর কথাও রাখতে পেরেছি।’’

আরও পড়ুন: শুভেন্দুকে দিল্লি যেতে ডাক অমিতের, মোদী সাক্ষাতেই ঠিক হবে নির্বাচনী কৌশল​

তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন পাল্টা শুভেন্দুর উদ্দেশে বলেন, ‘‘কেন সাংসদ পদ ছেড়ে দিলেন? কেন ফিরে এসে মন্ত্রী হয়েছিলেন? আপনার জন্য উপ-নির্বাচন করতে হয়েছিল।’’ শুভেন্দুর নিজের জেলা পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া, নন্দীগ্রাম, কাঁথি-সহ নানা জায়গায় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’র প্রতিবাদ জানিয়েছেন তৃণমূল কর্মীরা। শুভেন্দুর ছবিকে কালিমালিপ্ত করা হয়। স্লোগান ওঠে, ‘বিশ্বাসঘাতক, তোলাবাজ শুভেন্দু নিপাত যাক’।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy