পানাগড়কাণ্ডে ‘ইভটিজ়িংয়ের’ কোনও ঘটনা ঘটেনি বলেই দাবি করেছিল আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেট। তদন্তকারীদের সেই দাবিকে উড়িয়ে দিয়ে এ বার চন্দননগর থানায় ‘ইভটিজ়িংয়েরই’ অভিযোগ দায়ের করলেন সুতন্দ্রা চট্টোপাধ্যায়ের মা তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায়। পাশাপাশিই মেয়ের মৃত্যুর জন্য দু’টি গাড়িকেই দায়ী করেছেন তিনি।
গত রবিবার রাতে পানাগড়ে গাড়ি দুর্ঘটনায় প্রাণ গিয়েছে চন্দননগরের বাসিন্দা, একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কর্ণধার সুতন্দ্রা (২৭)-র। প্রাথমিক ভাবে অভিযোগ ওঠে, কয়েক জন মত্ত যুবক একটি সাদা গাড়িতে করে এসে সুতন্দ্রাদের নীল গাড়িটিকে বার বার ধাক্কা দেন। তার ফলেই উল্টে যায় সুতন্দ্রাদের গাড়ি। ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তরুণীর। এই দাবি করেছিলেন ঘটনার সময় সুতন্দ্রার গাড়িতে থাকা সহকর্মীরা। ঘটনার পর পরেই সুতন্দ্রার গাড়িচালক রাজদেও শর্মা প্রথমে ‘ইভটিজ়িং’-এর কথা বলেছিলেন। দাবি করেছিলেন, সাদা গাড়ির লোকজন তরুণীকে লক্ষ্য করে অশ্লীল ইঙ্গিত করেছিলেন। যদিও পরে সেই বয়ান বদলে ‘ইভটিজ়িং’-এর তত্ত্ব উড়িয়ে দেন গাড়িচালক।
সুতন্দ্রার মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শোরগোলের পর সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে এনে পুলিশ দাবি করেছিল, রেষারেষির কারণেই গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটেছিল পানাগড়ে। সুতন্দ্রাদের গাড়িটিকে বার বার ধাক্কা দেওয়ার অভিযোগ কার্যত উড়িয়ে দিয়ে পুলিশের দাবি ছিল, তরুণীর গাড়িই যুবকদের সাদা গাড়িটিকে তাড়া করছিল ওই রাতে। কয়েকটি সিসি ফুটেজেও সুতন্দ্রার গাড়িটিকে যুবকদের গাড়ির পিছনে পিছনে যেতে দেখা গিয়েছে। সেই সময় সুতন্দ্রার গাড়ির গতিও বেশি ছিল। পাশাপাশি, পুলিশ স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিল, পানাগড়কাণ্ডে ‘ইভটিজ়িং’ হয়নি।
পানাগড়ের ঘটনায় পুলিশ ইতিমধ্যেই সাদা গাড়ির চালক বাবলু যাদবকে গ্রেফতার করেছে। তিনি বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে। কিন্তু সাদা গাড়িতে থাকা বাকিদের কেন এখনও গ্রেফতার করা হয়নি, তা নিয়ে নিত্যদিন প্রশ্ন তুলছে সুতন্দ্রার পরিবার। সুতন্দ্রার মায়ের বক্তব্য, মেয়ের গাড়িতে থাকা সহকর্মী এবং গাড়িচালককেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক। সেই দাবি তুলেই এ বার চন্দননগর থানার দ্বারস্থ তিনি।
তনুশ্রীর দাবি, সাদা গাড়ি এবং নীল গাড়িতে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সকলেই মেয়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সকলকেই জিজ্ঞাসাবাদ করে সঠিক তদন্ত হোক। তার ভিত্তিতে সাজা হোক দোষী বা দোষীদের। তনুশ্রী বলেন, ‘‘পুলিশের উপর আমাদের আস্থা রয়েছে। আশা করি, মেয়ের সঠিক বিচার পাব।’’ চন্দননগর থানা সূত্রে খবর, তনুশ্রীর দায়ের করা অভিযোগটি কাঁকসা থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।