কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ। —ফাইল চিত্র।
কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী প্রতাপচন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে যে মামলায় অভিযোগ উঠেছিল, তার নিষ্পত্তি করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি এই মামলায় দায়ের হওয়া এফআইআরে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেও মন্তব্য করে আদালত। যদিও পরে রাজ্যের আইনজীবীর যুক্তিতে আদালত সন্তুষ্ট হয়েছে।
শুক্রবার মামলাটির শুনানি ছিল সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খন্না এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চে। আদালত মামলাটির নিষ্পত্তি করে দিয়েছে। শুনানি চলাকালীন রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘‘এফআইআরে কোনও রকম রাজনীতি টেনে আনবেন না।’’ কেন মামলাটি শুরুর আগে রাজ্য ক্যাভিয়েট দাখিল করেনি, সেই প্রশ্নও তোলেন বিচারপতি। তবে পরে গোটা বিষয়টি আদালতে বুঝিয়ে বলেন রাজ্যের আইনজীবী।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের হয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি লড়েন আইনজীবী আস্থা শর্মা। তাঁর বক্তব্য, ‘‘সম্পত্তি বিবাদের একটি মামলায় রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল। কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহের স্বামী তথা আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে-র বিরুদ্ধে বেআইনি ভাবে ওই মামলায় প্রভাব খাটানোর অভিযোগ ওঠে। শুনানি চলাকালীন শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, এই মামলায় রাজ্য পুলিশ যে এফআইআর দায়ের করেছে, তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এ ছাড়া, মামলাটিতে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার আগে রাজ্য কোনও ক্যাভিয়েট দাখিল করেনি বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি। যা নিয়ে তিনি অসন্তোষ প্রকাশও করেন। তবে পরে রাজ্যের আইনজীবী সুনীল ফার্নান্ডেজের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত হয়েছে আদালত।’’
রাজ্যের আইনজীবী আরও বলেন, ‘‘রাজ্য আদালতে জানিয়েছে, শুনানির আগেই তারা মামলার অগ্রিম কপি নিয়ম মেনে জমা দিয়েছিল। এই মামলায় হাই কোর্টের বিচারপতির বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ থাকায় রাজ্য পুলিশ সেই মতো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করে। তা না করলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারত। শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার নিষ্পত্তি করে দিয়েছে।’’
ক্ষমতার অপব্যবহার করে একটি অপরাধের মামলায় অবৈধ ভাবে হস্তক্ষেপ করার অভিযোগ ওঠে বিচারপতি সিংহের স্বামীর বিরুদ্ধে। তিনি পেশায় আইনজীবী। ৬৪ বছরের এক বিধবা এবং তাঁর মেয়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। পরে অবশ্য এই মামলায় বাড়তি পদক্ষেপ করা যাবে না বলে জানিয়েছিল তারা। তার পর ডিসেম্বরে এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট আবার জানায়, পুলিশ আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ করতে পারবে।
ঠিক কী অভিযোগ বিচারপতি সিংহের স্বামীর বিরুদ্ধে?
একটি জমি সংক্রান্ত বিষয়ে ৬৪ বছরের বিধবার সঙ্গে তাঁর কয়েক জন আত্মীয়ের বিরোধ শুরু হয়। মামলা গড়ায় আদালতে। আবেদনকারী সুপ্রিম কোর্টে জানান, পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তাঁকে বঞ্চিত করার জন্য বাপের বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন দাদা এবং অন্যান্য আত্মীয়। একাধিক বার তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এমনকি, বৃদ্ধার আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেলকে যে মারধর করা হয়েছে, তার প্রমাণ রয়েছে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এর প্রেক্ষিতে ওই বৃদ্ধা আত্মীয়দের বিরুদ্ধে দু’টি ফৌজদারি অভিযোগ করেন।
বিবাদী পক্ষের আইনজীবী তথা বিচারপতি সিংহের স্বামী তদন্তকারীদের উপর বেআইনি ভাবে প্রভাব খাটান বলে অভিযোগ করেন বিধবা। অভিযোগ, দু’টি মামলার তদন্ত যাতে বাধাপ্রাপ্ত হয়, তার সব রকম চেষ্টা করেছেন তিনি। সুপ্রিম কোর্টে বিধবার আর্জি ছিল, আইনজীবী কিংবা তাঁর বিচারপতি স্ত্রীর প্রভাব ছাড়াই দু’টি ফৌজদারি অভিযোগের যাতে সঠিক ভাবে তদন্ত হয়, তার নির্দেশ দিক শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে বিচারপতি এবং আইনজীবী স্বামীর ওই কাজের জন্য তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হোক।
আদালতের নির্দেশে বিচারপতির স্বামীর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছিল রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডি। তারা বিচারপতির স্বামীকে বেশ কয়েক বার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলবও করে। ঘটনাচক্রে, বিচারপতি সিংহের এজলাসে নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলার শুনানি হয়েছে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আয়ের উৎস নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন বিচারপতি সিংহ। একাধিক মামলায় তাঁর নির্দেশ রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy