আরজি কর মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে। গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। নির্যাতিতার জন্য বিচারের দাবিতে পথে নেমেছিলেন বহু মানুষ। ঘটনার চার মাস পরেও আরজি করের ঘটনা নিয়ে অনেকের মনে একটাই প্রশ্ন, ‘‘বিচার কবে মিলবে?’’ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর মামলার শুনানিতে প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নাও একই প্রশ্ন তুললেন। জানতে চাইলেন, নিম্ন আদালতে কী অবস্থায় রয়েছে এই মামলা? কত দিনে শেষ হবে বিচারপ্রক্রিয়া?
গত ৯ অগস্ট আরজি করের মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনা সংক্রান্ত মামলা স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই শুনবে বলে জানিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। এত দিন এই মামলার শুনানি হত প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের বেঞ্চে। তিনি অবসর নেওয়ার পর মঙ্গলবার এই মামলা প্রথম বার শুনলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না। তাঁর বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি সঞ্জয় কুমার। দুই বিচারপতির বেঞ্চ শুনানির প্রথমেই মামলার তদন্তের অগ্রগতি জানতে চায়। সিবিআইয়ের আইনজীবী তথা কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে তদন্তের অগ্রগতি সংক্রান্ত বিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্ট পড়তে পড়তেই প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘‘নিম্ন আদালতে মামলা কী অবস্থায় রয়েছে?’’
আরজি করের ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় ইতিমধ্যেই সিবিআই শিয়ালদহ আদালতে চার্জশিট পেশ করেছে। চার্জ গঠনের পর শুরু হয়েছে বিচারপ্রক্রিয়াও। সুপ্রিম কোর্টে বিষয়টি জানান সিবিআইয়ের আইনজীবী। তিনি আরও জানান, নিম্ন আদালতে দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে।
মঙ্গলবারের শুনানিতে নির্যাতিতার পরিবারের তরফে ‘দ্রুত বিচারের’ দাবি তোলা হয়। তাদের আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদনে বলেন, ‘‘দ্রুত বিচার দেওয়া হোক।’’ তবে তিনি এ-ও জানান, ‘‘ছুটির দিন ছাড়া প্রতি দিনই নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়া চলছে।’’ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে তা শেষ হয়ে যেতে পারে বলে জানান বৃন্দা।
কত দিনে ‘বিচার’ শেষ হবে? প্রধান বিচারপতির প্রশ্নে সিবিআইয়ের আইজীবী জানান, ৫২ জনের মধ্যে ৪৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এক মাসের মধ্যে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হয়ে যাবে। যা শুনে প্রধান বিচারপতি জানতে চান, ‘‘এক মাসের মধ্যে যে ট্রায়াল শেষ হবে, তা কি আমরা রেকর্ডে নিতে পারি?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হবে। বিচারপ্রক্রিয়ায় অভিযুক্তের কোনও আইনজীবী রয়েছেন কি না, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘অভিযুক্ত নিজের আইনজীবী রয়েছে? না কি লিগ্যাল সার্ভিসেস থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়েছে?’’ সিবিআইয়ের আইনজীবী তুষার জানান, লিগ্যাল সার্ভিসেস থেকে আইনজীবী রয়েছেন অভিযুক্তের পক্ষে।
মঙ্গলবারের শুনানিতে ডিএনএ রিপোর্টের উপর জোর দেন প্রধান বিচারপতি। ডিএনএ রিপোর্ট করা হয়েছে কি না, তা জানতে চান তিনি। উক্ত পরীক্ষা হয়েছে, জানানোয় রিপোর্ট দেখতে চান প্রধান বিচারপতি খন্না। তুষার জানান, ডিএনএ রিপোর্ট মিলে গিয়েছে। সওয়াল-জবাবের শেষেও প্রধান বিচারপতির গলায় বিচারপ্রক্রিয়ার কথা শোনা যায়। তিনি জানান, শিয়ালদহ আদালতে যদি কোনও কারণে বিচারপ্রক্রিয়া দেরি হয়, তবে তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করা যাবে। প্রয়োজনে পরবর্তী শুনানির আগেই সেই বিষয়টি শুনবেন তিনি। উল্লেখ্য, আরজি কর মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী ১৭ মার্চ।খুন এবং ধর্ষণ মামলার বিচারপ্রক্রিয়া ছাড়াও মঙ্গলবারের শুনানিতে আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি, ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের প্রসঙ্গও উঠেছে। এ ছাড়াও কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আরজি করের আর্থিক দুর্নীতির তদন্তের অগ্রগতি
মঙ্গলবারের শুনানিতে আরজি কর আর্থিক দুর্নীতি মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে কি না, তা জানতে চান প্রধান বিচারপতি। যা নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে সিবিআই। তাদের আইনজীবী তুষার জানান, এ বিষয়ে অন্য কোর্টে মামলা চলছে। তবে দুই অভিযুক্ত সরকারি পদে কাজ করেছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে রাজ্যের অনুমতি প্রয়োজন। কিন্তু রাজ্যের অনুমতি পাওয়া যাচ্ছে না। সিবিআইয়ের জবাবের প্রেক্ষিতে রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল বলেন, “আমাদের কাছে এমন কোনও তথ্য নেই।” সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, ২৭ নভেম্বর সরকারি পদে কাজ করা দুই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য রাজ্যের অনুমতি চাওয়া হয়েছিল। ২৯ নভেম্বর চার্জশিট দেওয়া হয়। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, “প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুন।”
টাস্ক ফোর্সকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ
আরজি করের মামলার প্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট একটি ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স গঠন করে দিয়েছিল। সারা দেশের চিকিৎসক, চিকিৎসক পড়ুয়া এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা বিষয়ে নজরদারি চালাবে তারা। মঙ্গলবারের শুনানিতে সেই টাস্ক ফোর্সকে রিপোর্ট দেওয়ার নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট। শুনানিতে জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহ একটি নিরপেক্ষ কমিটির দাবি জানান। তাঁর কথায়, “আমার অনুরোধ রাজ্যের পদক্ষেপের উপর নজরদারি করতে নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হোক।” সেই আর্জি শুনে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আপনাদের যা বলার ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্সের কাছে বলুন। টাস্ক ফোর্সকে আমরা নির্দেশ দিতে পারি।’’ তার পরই তিনি বলেন, “একটি ইমেল আইডি চালু করবে ন্যাশনাল টাস্ক ফোর্স (এনটিএফ)। সেখানে দাবি বা অভিযোগ জানাতে পারবেন চিকিৎসকেরা। সব খতিয়ে দেখে ১২ সপ্তাহ পরে রিপোর্ট দেবে টাস্ক ফোর্স।’’
বিনীত গোয়েলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি
আরজি কর-কাণ্ডে নির্যাতিতার নাম প্রকাশ করার অভিযোগে কলকাতা হাই কোর্টে প্রথমে একটি জনস্বার্থ মামলা হয় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীতের বিরুদ্ধে। সেটি হাই কোর্টে বিচারাধীন। এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্টে চলা আরজি কর মামলার সঙ্গে নতুন করে বিনীতের বিরুদ্ধে একটি মামলা যুক্ত হয়। মঙ্গলবারের আরজি কর মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্না জানান, বিনীত সংক্রান্ত মামলাটি হাই কোর্টে বিচারাধীন রয়েছে। তাই ওই আবেদনটির শীর্ষ আদালতে শুনানি হবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy