Advertisement
০৬ জানুয়ারি ২০২৫
madhyamik exam

Education: পরীক্ষা না দিয়েই ক্লাস টেনে, কী হবে মাধ্যমিকে!

লালগড়ের সিজুয়া পঞ্চায়েতের ছোটপেলিয়া গ্রামে আমার বাড়ি। আমার বাবা কুনারাম মুর্মু চাষ করে। মাত্র বিঘে দেড়েক জমি আছে আমাদের।

সুন্দরী মুর্মু (দশম শ্রেণির ছাত্রী)
শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২১ ০৬:২০
Share: Save:

গত বছর নবম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে স্কুল বন্ধ হয়ে গেল। তখন গ্রামের এক গৃহশিক্ষকের কাছে সব বিষয় পড়তাম। মাসে দু’শো টাকা নিতেন। কিন্তু তিনি পড়াশোনার জন্য কলকাতায় চলে গেলেন। বাবা-মা লেখাপড়া জানে না। বাবা শুধু নাম সই করতে পারে। মা নিরক্ষর। আমার পড়াশোনা করা মুশকিল হয়ে পড়ল।

আমি কাঁটাপাহাড়ি বিবেকানন্দ বিদ্যাপীঠের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আমার ভাই লক্ষ্মীকান্ত কাঁটাপাহাড়ির এক প্রাথমিক স্কুলের প্রাক-প্রাথমিকের পড়ুয়া। লালগড়ের সিজুয়া পঞ্চায়েতের ছোটপেলিয়া গ্রামে আমার বাড়ি। আমার বাবা কুনারাম মুর্মু চাষ করে। মাত্র বিঘে দেড়েক জমি আছে আমাদের। মা সুমি মুর্মুকে তাই খেতমজুরি করতে হয়। সংসারের প্রয়োজনে বাবাকে ভিন্‌ জেলায় খেতমজুরের কাজ করতেও যেতে হয়। ছোটপেলিয়া গ্রামে টিনের চালের মাটির বাড়িতে বাবা, মা, ভাই, দাদু, ঠাকুমার সঙ্গে থাকি। অভাবের সংসার।

আমার গ্রাম থেকে লালগড় ব্লক সদর ৮ কিমি দূরে। ‘সবুজসাথী’র সাইকেল পেয়েছি। কিন্তু ৮ কিমি দূরে গিয়ে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে গেলে মাইনে দিতে পারবে না বাবা। স্কুল থেকে বলা হল, অনলাইনে ক্লাস হবে। সেই ক্লাস হচ্ছেও। কিন্তু বড় ফোনটাই (স্মার্ট ফোন) কিনে দিতে পারল না বাবা। কিনবে কেমন করে? একটা, দু’টো বাড়িতে বড় ফোন থাকলেও গ্রামে নেটওয়ার্ক ধরে না। বাবার একটা ছোট ফোন ছিল। কিন্তু আমাদের গ্রামে মোবাইলে নেটওয়ার্ক পাওয়াই যায় না। ছোট ফোনটা খারাপ হয়ে যাওয়ায় বাবা তাই সেটা সারায়নি।

পরীক্ষা না দিয়েই গত বছর দশম শ্রেণিতে উঠে গেলাম। সরকারি বইও পেলাম। অনেক কষ্টে বাবা সহায়ক বই কিনে দিয়েছে। বাড়িতে নিজেই পড়ছি। কিন্তু অঙ্ক আর যে বিষয়গুলো বুঝতে পারি না, সেগুলো দেখিয়ে দেওয়ার মতো কেউই নেই! ২০২২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার কথা আমার। শুনছি, স্কুল খোলার পর টেস্ট পরীক্ষা হতে পারে। কী পরীক্ষা দেব জানি না। সকালে উঠোন ঝাঁট দিই। টিউবওয়েল থেকে জল নিয়ে আসি। মা খেতমজুরির কাজে গেলে রান্নাও করি। মুরগিদের খাবার দিই। গোয়ালে দু’টো গরুর দেখভাল করি। জামাকাপড় কাচি। মায়ের সঙ্গে জঙ্গলে গিয়ে শালপাতা তুলে আনি। নিমের কাঠি দিয়ে শালপাতা গেঁথে গোলপাতা বানাই। এক হাজার গোলপাতা বানিয়ে মহাজনকে বিক্রি করলে ২৪০ টাকা মেলে। কিন্তু এক হাজার গোলপাতা বানাতে চারদিন সময় লাগে। সেই কারণে সারাদিনে পড়াশোনার সময় পাই না। রাতে বই নিয়ে বসি। বাড়িতে অবশ্য বিদ্যুতের আলো রয়েছে। দু’টো বাল্ব আছে। সেই আলোয় পড়ি।

১৬ তারিখ স্কুল খুলছে। আঠারো মাস পরে স্কুলে যাব। পাশের মেলখেড়িয়া গ্রামের রিলামালা হেমব্রম আমার সহপাঠী। ওর সঙ্গে স্কুলে যাব। ভাল লাগার পাশাপাশি, দুশ্চিন্তাও হচ্ছে— মাধ্যমিকে কী করব?

অন্য বিষয়গুলি:

madhyamik exam Coronavirus in West Bengal Covid 19 corona
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy