সুকন্যা মণ্ডলকে যথেষ্ট ‘প্রভাবশালী’ বলল ইডি। ফাইল চিত্র।
অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা সুকন্যা মণ্ডল নিজেও যথেষ্ট ‘প্রভাবশালী’, তাই সুকন্যা জামিনে ছাড় পেলে গরু পাচার কাণ্ডের তদন্তের সাক্ষীদের প্রভাবিত করা বা সাক্ষ্যপ্রমাণ নষ্ট করার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না বলে ইডি দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে যুক্তি দিল। ইডি-র দাবি, গরু পাচারের টাকা আর কোথায় কোথায়, কার কাছে পৌঁছেছে, সুকন্যা জামিনে ছাড়া পেলে তার সুলুকসন্ধান (‘মানি ট্রেল’) মুছে দেওয়ার চেষ্টা করবেন।
অনুব্রতের মতোই দিল্লির তিহাড় জেলে আটক সুকন্যা রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে জামিনের আর্জি জানিয়েছিলেন। কিন্তু ইডি তার জোরদার বিরোধিতা করে জানিয়েছে, গরু পাচার থেকে ঘুষের কালো টাকা সাদা করার কাজে সুকন্যা সক্রিয় ভাবে যুক্ত ছিলেন। ফলে গরু পাচারের টাকায় অনুব্রত ও তাঁর পরিবারের নামে যে ৪৮ কোটি টাকার বেশি সম্পত্তি গড়ে উঠেছে, তার সঙ্গে সুকন্যা জড়িত। গত ২৬ এপ্রিল দিল্লিতে ইডি-র সদর দফতরে জিজ্ঞাসাবাদের পরে সুকন্যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তিন দিন ইডি-র হেফাজতে থাকার পরে তাঁকে তিহাড় জেলে পাঠানো হয়। ইতিমধ্যে অনুব্রতের পাশাপাশি ইডি সুকন্যার বিরুদ্ধেও চার্জশিট দায়ের করেছে। তারপরেই সুকন্যা জামিনের আবেদন করেন। ইডি নিজের বক্তব্য জানানোর পরে আজ বিশেষ আদালত জানিয়েছে, ২৬ মে জামিনের মামলার শুনানি হবে। আজ সুকন্যাকে আদালতে পেশ করা হয়। তাঁর বিচারবিভাগীয় হেফাজতের মেয়াদ ১২ জুলাই পর্যন্ত বাড়িয়ে দিয়েছে আদালত।
গ্রেফতারের আগে পর্যন্ত ৩২ বছর বয়সি সুকন্যা ইডি-র তদন্তকারী অফিসারদের প্রশ্নের মুখে দাবি করেছিলেন, তিনি তাঁর নামে বিপুল সম্পত্তি, সংস্থা, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে কোটি কোটি টাকার বিষয়ে কিছুই জানতেন না। বাবা যেখানে সই করতে বলতেন, তিনি করে দিতেন। ইডি পাল্টা যুক্তি দিয়েছে, অনুব্রতের তুলনায় সুকন্যা উচ্চশিক্ষিত। তিনি সব কিছু বাবার কথায় করতেন বলে দাবি করতে পারেন না। তা ছাড়া, অভিযুক্ত মণীশ কোঠারি ও একাধিক সাক্ষী ইডি-কে জানিয়েছেন, সুকন্যাই মণ্ডল পরিবারের ব্যবসা, বিভিন্ন সংস্থার কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন। তিনি জিজ্ঞাসাবাদের সময় তদন্তে অসহযোগিতা করেছেন। সত্যটা প্রকাশ করেননি।
সুকন্যার জামিনের আর্জিতে তাঁর আইনজীবী অমিত কুমার যুক্তি দিয়েছিলেন, চার্জশিট পেশ করার পরে সুকন্যাকে আর আটক রাখার প্রয়োজন নেই। সুকন্যা দু’দফায় জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। শারীরিক অসুস্থতার জন্য চেন্নাইয়ে তাঁর চিকিৎসা চলছে। তাঁর একটি অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা। ২৬ এপ্রিল সে কারণে সুকন্যা কলকাতা থেকে চেন্নাইয়ের বিমানের টিকিট কেটে ফেলেছিলেন। কিন্তু ইডি সমন পাঠানোয় তিনি দিল্লি চলে আসেন। মহিলা ও অসুস্থ বলেও তিনি জামিন পাওয়ার যোগ্য। সুকন্যার বান্ধবী, দুরারোগ্যে আক্রান্ত সুতপা পাল তাঁর উপরেই নির্ভরশীল।
ইডি যুক্তি দিয়েছে, আর্থিক নয়ছয় প্রতিরোধ আইনে জামিন পেতে গেলে দু’টি শর্ত পূরণ করতে হয়। এক, ইডি-র বক্তব্য শুনতে হবে। দুই, আদালতকে মনে করতে হবে যে অভিযুক্ত অপরাধী নয় ও জামিনে মুক্তি পেলে একই অপরাধ করবে না। সুকন্যার বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলেছে, তাতে দ্বিতীয় শর্ত পূরণ হয় না। তা ছাড়া সুকন্যা বয়স্ক, অসুস্থ বা অশক্ত নন। হেফাজতে থাকাকালীন তাঁর কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা যায়নি। আইনত জেল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার ব্যবস্থা করলে অসুস্থতার কারণে জামিন দেওয়া যায় না। সুকন্যার আইনজীবী জানিয়েছেন, আগামী সপ্তাহে তাঁরা সুকন্যার গ্রেফতারিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দিল্লি হাই কোর্টে মামলা করবেন। কারণ, ইডি গ্রেফতারির সময় সুকন্যাকে অপরাধী বলে দিয়েছে। দিল্লিতে গরু পাচারের তদন্ত সরানো নিয়েও তাঁদের প্রশ্ন রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy