পরবর্তী মেয়াদের রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের মুখে সুকান্ত মজুমদারের নয়াদিল্লির বাড়িতে বৈঠকে শুভেন্দু অধিকারী। বৈঠকে আমন্ত্রিত বঙ্গ বিজেপির সব সাংসদও। হঠাৎ সুকান্তের দিল্লির বাসভবনে সাংসদের নিয়ে রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতার বৈঠক কেন, তা নিয়ে কোনও পক্ষই আনুষ্ঠানিক ভাবে মুখ খুলছে না। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সাংসদদের ভূমিকা কী হওয়া উচিত, তার ‘রূপরেখা’ এই বৈঠকে নির্ধারিত হতে পারে।
কোনও কেন্দ্রীয় নেতা সোমবার সন্ধ্যায় এই বৈঠকে থাকছেন না। তাই বৈঠক শেষে নৈশভোজেও আদ্যোপান্ত বাঙালি আহার। তার জন্য সুকান্ত খুঁজে নিয়েছেন বাঙালি কেটারার এবং বাঙালি রাঁধুনিও।
বাংলার ভোটের রণকৌশল নিয়ে আলোচনা দিল্লিতে কেন? কলকাতাতেও সব সাংসদকে নিয়ে রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতা বৈঠক করতে পারতেন। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, বৈঠক দিল্লিতে হওয়ার মূল কারণ সংসদের অধিবেশন। সুকান্ত নিজে এবং অন্য সাংসদেরা যে হেতু অধিবেশনে যোগ দিতে দিল্লিতে, তাই কলকাতায় বৈঠক হলে সোমবার সন্ধ্যায় আবার সকলকে কলকাতা ফিরতে হত। তার পরে মঙ্গলবার ভোরে আবার দিল্লি ছুটতে হত। অথবা বৈঠকের জন্য সপ্তাহান্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হত। তার চেয়ে শুভেন্দুকে দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে সোমবারই বৈঠক করে নেওয়া সুবিধাজনক। তাই দিল্লিতেই বৈঠক ডাকা হয়েছে।
কিন্তু পাঁচ-ছ’দিন পরে সাংসদেরা কলকাতায় ফিরলেও বৈঠক ডাকা যেত। তা না-করে এত দ্রুততার সঙ্গে বৈঠক ডাকা হল কেন, তা নিয়েও প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেন না। কিন্তু বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, রাজ্য সভাপতি নির্বাচন আর কয়েক দিনের মধ্যেই হয়ে যেতে পারে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব চাইছেন, তার আগেই রাজ্য বিজেপির দুই শীর্ষনেতা পরস্পরের সঙ্গে বৈঠকে বসুন এবং নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়ে নিন। গত কয়েক সপ্তাহে বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব সুকান্ত এবং শুভেন্দুর সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেছেন। পরবর্তী মেয়াদের রাজ্য সভাপতি কে হচ্ছেন, সে বিষয়ে দু’জনকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব যা বলার বলে দিয়েছেন। তার পর থেকেই দুই নেতা দ্রুত নিজেদের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর উপর জোর দিয়েছেন। সেই কারণে সাংসদদের নিয়ে দুই নেতার প্রস্তাবিত বৈঠকও রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের আগেই সেরে ফেলা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন দফতরে যাওয়ার আগে সুকান্ত-শুভেন্দুর মধ্যে ফোনে দীর্ঘ কথোপকথন হয়। দিন তিনেক আগে ফের দুই নেতার মধ্যে কথা হয়েছে বলে বিজেপির একটি সূত্রের দাবি। সেখানেই সাংসদদের নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব বৈঠকে বসার সিদ্ধান্ত হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে সাংসদেরা নিজের এলাকায় কী কী ধরনের কর্মসূচি নিতে পারেন, বিধায়কেরা নিজের নিজের নির্বাচনী এলাকা নিয়ে ব্যস্ত থাকাকালীন সাংসদেরা কী ভাবে সংগঠনকে সাহায্য করতে পারেন, দিল্লিতে থাকাকালীন নির্বাচন কমিশনের কাছে বঙ্গ বিজেপির বক্তব্য নিয়মিত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাংসদেরা কোনও ভূমিকা নিতে পারেন কি না, তা নিয়ে এই বৈঠকে কথা হতে পারে। রামনবমী পালনের রূপরেখা নিয়েও বিশেষ ভাবে আলোচনা হতে পারে সোমবারের বৈঠকে।
সুকান্তর ৩০ নম্বর এপিজে আবদুল কালাম রোডের বাসভবনে বৈঠকশেষে নৈশভোজের ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। মেনুকার্ডে দিল্লির কোনও ছোঁয়াচ নেই। আমিষ পদ হিসেবে থাকছে কাতলা মাছের কালিয়া, চুনো মাছের ঝাল আর মাংস। সোমবার কয়েক জন সাংসদ নিরামিষ খান। তাঁদের জন্য ডাল, সব্জি, পনিরের ব্যবস্থা হচ্ছে। শেষ পাতে সকলের জন্য চাটনি আর গুড়ের মিষ্টি। বাঙালি ভোজে বাঙালিয়ানার ছোঁয়া নিশ্চিত করতে দিল্লিতে এক বাঙালি কেটারার খুঁজে নিয়েছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত। কেটারার মালিক কথা দিয়েছেন, রাঁধুনিও বাঙালিই হবেন।