‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। ফাইল চিত্র
গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে কিছু খাচ্ছিলেন না ‘কালীঘাটের কাকু’ ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্র। এ নিয়ে কিছুটা চিন্তাতেও ছিল তাঁকে হেফাজতে নেওয়া ইডি। তবে মঙ্গলবার চিন্তার অবসান হয়েছে বলে ইডি সূত্রে খবর। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটির তরফে জানা গিয়েছে, সুজয়কৃষ্ণ প্রায় গোটা একটি দিনের উপবাস ভেঙে অবশেষে খাবার খেয়েছেন। রুটি, ভাত এবং তরকারি অল্প করে খেয়েছেন।
মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতার করা হয়েছিল সুজয়কে। তার আগে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে ইডির দফতরে টানা ১১ ঘণ্টা জেরা করা হয় তাঁকে। জেরা চলাকালীন তিনি কিছু খেয়েছিলেন কি না, জানা যায়নি। তবে গ্রেফতারির পর থেকে সুজয় কিছু খাচ্ছেন না বলেই বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে জানিয়েছিল ইডি। বিচারককে ইডির আইনজীবী এ-ও বলেছিলেন যে, উনি কিছু না খেলে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। সে ক্ষেত্রে সুজয়ের জিজ্ঞাসাবাদ এড়িয়ে যাওয়ার একটা সুযোগ থাকবে বলে মনে করছেন ইডির আধিকারিকেরা। এর ফলে তদন্তও ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
বস্তুত, সুজয় কিছু না খাওয়ায় তাঁর স্বাস্থ্যপরীক্ষাতেও বিলম্ব হয়েছে বলে জানিয়েছিল ইডি। মঙ্গলবার রাতে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সুজয়কৃষ্ণকে গ্রেফতার করার পর বুধবার স্বাস্থ্যপরীক্ষার জন্য তাঁকে জোকা ইএসআই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আদালতে ইডি জানায়, সুজয়কৃষ্ণ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন, এই আশঙ্কায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে দেরি হয়েছে সুজয়ের। এর পরও অবশ্য বুধবার সুজয়ের ১৪ দিনের ইডি হেফাজতের নির্দেশ দেয় আদালত। কিন্তু সুজয়ের স্বাস্থ্য তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে মনে করে চিন্তাতেই ছিল ইডি। অবশেষে মঙ্গলবার ইডি সূত্রে জানা গেল, কালীঘাটের কাকু খেয়েছেন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে এর আগে যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের অনেকের সঙ্গেই সুজয়ের আর্থিক লেনদেনের সম্পর্ক ছিল বলে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছিল ইডি। তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ এমনকি গোপাল দলপতির কাছ থেকেও ‘কালীঘাটের কাকু’ তথা সুজয়ের নাম জানতে পারেন তদন্তকারীরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি অফিসে এক সময় কাজ করতেন সুজয়। যদিও কুন্তল পরে বলেছিলেন ‘কালীঘাটের কাকু’ আর সুজয় এক ব্যক্তি নন।
ইডির দাবি মোতাবেক, কী ভাবে ‘কালীঘাটের কাকু’র কাছে অর্থ পৌঁছেছিল, কী ভাবেই বা সেই অর্থ অন্যত্র যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছে। আরও প্রশ্ন, ‘কাকু’র বহু আত্মীয়ের আয়ের সঙ্গে সঙ্গতিবিহীন সম্পত্তি নিয়েও। সূত্রের খবর, ইডি এমনই বহু প্রশ্নের উত্তর চাইছেন কাকুর কাছ থেকে।
আগে যা ঘটেছে
রাজ্যে শিক্ষায় নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই গ্রেফতার করে বেসরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ সংগঠনের নেতা তাপস মণ্ডলকে। তাঁর মুখেই প্রথম ‘কালীঘাটের কাকু’র কথা শোনা যায়। নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তদন্তে নাম এসেছে গোপাল দলপতির। তাঁর মুখেও ‘কাকু’র নাম শোনা গিয়েছিল। এর পরেই গোয়েন্দাদের আতশকাচের তলায় আসেন সুজয়।
সিবিআই সুজয়কে দু’বার তলব করে। প্রথম বার সিবিআই দফতরে গিয়ে হাজিরা দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু পরের বার নিজের আইনজীবীকে দিয়ে নথিপত্র পাঠিয়েছিলেন। সেই সময় সুজয় জানিয়েছিলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার পক্ষে তাঁর কাছে কিছু নথি চাওয়া হয়েছিল। সেগুলি তিনি আইনজীবী মারফত পাঠিয়েও দিয়েছেন সিবিআই দফতরে। একই সঙ্গে সুজয় দাবি করেছিলেন, তাঁর স্ত্রী-কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের নথিও তিনি পাঠিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে।
গত ২০ মে সুজয়ের বেহালার ফকিরপাড়া রোডের ফ্ল্যাট, বাড়ি, অফিস-সহ বহু জায়গায় তল্লাশি চালায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই দিনই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত কুন্তল ঘোষের চিঠি সংক্রান্ত মামলায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। সুজয় এক সময় অভিষেকের অফিসে কাজ করতেন। ‘কাকু’র সঙ্গে সংযোগ রয়েছে এমন ৩টি সংস্থাতেও তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। সেই সংস্থার মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ওই ৩টি সংস্থার মধ্যে একটি সংস্থা বিশেষ করে নজরে রয়েছে তদন্তকারীদের। সেই সংস্থা ‘কালীঘাটের কাকু’ নিয়ন্ত্রণ করতেন বলে তদন্তকারীদের ধারণা। ওই সংস্থাগুলির ডিরেক্টর এবং অ্যাকাউন্ট্যান্টদের তলব করা হয় আগেই। এর পরেই মঙ্গলবার (৩০ মে) তলব করা হয় সুজয়কে। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিয়ন্ত্রণে থাকা সংস্থার কাছ থেকে ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের জমিতে বিনিয়োগ করেছিলেন কাকু। এ ছাড়াও নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে উঠে আসা বেশ কিছু তথ্য নিয়ে সুজয়কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে বলে ইডি সূত্রে খবর। তার আগে, গত ৪ মে সুজয়ের ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়েছিল সিবিআই। সেই তল্লাশি অভিযানে সুজয়ের বাড়ি থেকে কয়েক লক্ষ নগদ টাকা বাজেয়াপ্ত করে সিবিআই। তিনি অবশ্য দাবি করেছিলেন, তাঁর বোন হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসার বিল মেটানোর জন্য ওই অর্থ তুলেছিলেন। পাওয়া গিয়েছিল একটি অ্যাডমিট কার্ডও। সুজয় দাবি করেছিলেন, সেটা পুরসভায় চাকরির পরীক্ষা দেওয়ার জন্য তাঁর শ্যালিকার পুত্রের অ্যাডমিট কার্ড। সুজয়ের একটি ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়।
নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত তাপস সিবিআইয়ের কাছে দাবি করেছিলেন, অযোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কুন্তল বলতেন, ‘‘কালীঘাটের কাকুর সঙ্গে কথা হয়ে গিয়েছে। চিন্তার কোনও কারণ নেই।’’ ইডি সূত্রে খবর, পরে গোপাল আর তাপসকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা যায়, কুন্তলের ওই ‘কালীঘাটের কাকু’ রাজ্যের এক প্রভাবশালী শীর্ষনেতার সংস্থার চিফ এগ্জ়িকিউটিভ অফিসার (সিইও)। তার পর থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আতশকাচের তলায় সুজয়। যদিও কুন্তল দাবি করেছিলেন, তিনি ওই ‘কাকু’কে চেনেন না। কুন্তল এ-ও দাবি করেন, যে সুজয়কে নিয়ে আলোচনা চলছে, তিনি ‘কালীঘাটের কাকু’ নন। সুজয় নিজে দাবি করেছিলেন, কেন তাঁকে ‘কালীঘাটের কাকু’ বলা হচ্ছে, তা তাঁর কাছে স্পষ্ট নয়। নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে তাঁর কাছে কোনও টাকা জমা পড়েনি বলেও দাবি করেন সুজয়। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমার কর্মস্থল নিউ আলিপুর। ‘কালীঘাটের কাকু’ কথাটা কোথা থেকে এল, আমার পক্ষে সেটা বলা সম্ভব নয়। যাঁরা এটা বলছেন, তাঁরাই এর ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy