তৃণমূল সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিজেদের হেফাজতে রেখে আরও তিন দিন জেরা করবে সিবিআই। সোমবার বিকেলে ভুবনেশ্বরের বিশেষ সিবিআই আদালতে সুদীপকে হাজির করে আট দিনের জন্য তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়েছিলেন তদন্তকারীরা। বিচারক প্রশান্ত মিশ্র তিন দিন মঞ্জুর করেছেন। ১২ জানুয়ারি সুদীপকে ফের আদালতে তুলতে হবে সিবিআইকে।
এ দিন এক তদন্তকারী অবশ্য বেশ বড়সড় বোমা ফাটিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘খাতায়-কলমে সুদীপ রোজ ভ্যালির কোনও পদে না থাকলেও তিনিই যেন সংস্থার মাথা ছিলেন। গৌতম কুণ্ডু সুদীপের কর্মচারী।’’ সিবিআইয়ের আরও অভিযোগ, সুদীপের পরামর্শেই রোজ ভ্যালির টাকা বাইরে পাচার করা হয়েছে। সিবিআইয়ের আইনজীবীরা এ দিন আদালতে জানান, রোজ ভ্যালি থেকে সুদীপ যে টাকা নিয়েছেন, তারও প্রমাণ রয়েছে তদন্তকারীদের কাছে। তাই সুদীপকে আরও জেরার প্রয়োজন। অন্য দিকে সুদীপের আইনজীবীর বক্তব্য, ‘‘সুদীপ রেলের যে স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য, এ দিন তার বৈঠক ছিল। সুদীপ সেই বৈঠকে না-থাকায় রেলের উন্নয়ন পরিকল্পনা ব্যাহত হচ্ছে। তিনি তদন্তে সাহায্য করছেন। তাই জামিন মঞ্জুর করা হোক।’’
অভিযোগ, ২০১১-র মার্চে রোজ ভ্যালিকে সেবি নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পরেও সুদীপ সংস্থার অফিসে একাধিক বার গিয়েছেন। আইনজীবীরা জানান, সুদীপের পরামর্শেই রোজ ভ্যালি কর্তা কলকাতার একটি নামী স্কুলে ৭১ লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছিলেন।
এ দিন ভুবনেশ্বর আদালতের লকআপে সুদীপের সঙ্গে দেখা করেন স্ত্রী নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। নয়নার মা অসুস্থ, তাই সোমবার রাতেই কলকাতা ফেরেন তিনি। নয়নার অভিযোগ, সিবিআই নয়, নরেন্দ্র মোদীর হেফাজতে রাখা হয়েছে সুদীপকে। স্কুলে অনুদান দেওয়ার প্রসঙ্গে নয়না বলেন, ‘‘সুদীপ জনপ্রতিনিধি। নানা সংস্থাকে অনুদান দেওয়ার জন্য সুপারিশ করে থাকেন। এতে অপরাধ হয় বলে মনে করি না।’’
সম্প্রতি পর্ণশ্রীর বাসিন্দা শিখা মাইতি বেহালা থানা এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার কাছে রোজ ভ্যালির বিরুদ্ধে লাখ চারেক টাকা প্রতারণার অভিযোগ করেছিলেন। ওই অভিযোগের কথা সিবিআইকে জানিয়ে দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।
সুদীপের গ্রেফতারির প্রতিবাদে এ দিন থেকে সল্টলেকে সিবিআই দফতরের সামনে তিন দিনের জন্য ধর্নায় বসেছে তৃণমূল। এ দিন ধর্নায় বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, বিধায়ক সুজিত বসুরা হাজির ছিলেন। ধর্না চলাকালীন সিবিআই দফতরে হাজিরা দিতে আসেন সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত মদন মিত্র। যে ফটকের সামনে বিক্ষোভ হচ্ছিল, সিজিও কমপ্লেক্স থেকে বেরোনোর সময় সেই ফটক এড়িয়ে অন্য দিক দিয়ে বেরিয়ে যান মদনবাবু। তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় এ দিন অভিযোগ করেন, ‘‘সুজন চক্রবর্তী, বিমান বসু, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যরা বিভিন্ন চিট ফান্ডের সঙ্গে যুক্ত। শোনা যাচ্ছে, আব্দুল মান্নানও গোল্ডেন ট্রাস্টের সঙ্গে যুক্ত। কংগ্রেসের আবু হাসেম খান চৌধুরীর নামও জড়িয়েছে চিট ফান্ডে।’’
বিক্ষোভের আঁচ এ দিন পৌঁছেছে রাজধানী দিল্লিতেও। এ দিন দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাউথ অ্যাভিনিউয়ে অস্থায়ী দলীয় কার্যালয়ের সামনে লাগাতার মোদী-বিরোধী স্লোগান দিয়ে গেলেন তৃণমূলের জনা তিরিশেক সাংসদ। সন্ধ্যায় ধর্না শেষ হওয়ার পরে খুলে দেওয়া হয় এই ‘ভিভিআইপি’ সরণি।
গত বৃহস্পতিবার তৃণমূলের বিক্ষোভের পরে যথেষ্ট বিব্রত হন নিরাপত্তা অফিসার এবং আমলারা। প্রধানমন্ত্রী সে দিন পটনায় ছিলেন। পরে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের কাছে তিনি জানতে চেয়েছিলেন, কেন এ ভাবে নিরাপত্তা শিথিল হল। তাই এ দিন আর ঝুঁকি নিতে চায়নি পুলিশ। তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদারের কথায়, ‘‘সাত-সকালে আমার বাড়ি পুলিশ এসে হাজির। জানতে চাওয়া হয়, আজ তৃণমূলের কী কর্মসূচি!’’
তবে একটু বেলার দিকে তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন সাউথ অ্যাভিনিউ থানায় চিঠি লিখে জানিয়ে দেন, তাঁরা সেখানে শান্তিপূর্ণ ধর্নায় বসছেন। আগামী দু’দিন তাঁরা ওখানেই ধর্না দেবেন। প্রশ্ন উঠছে, প্রথম দু’দিন দিল্লির রাজপথে প্রায় জঙ্গি আন্দোলন করার পরে হঠাৎই ‘শান্তিপূর্ণ’ ধর্নায় কেন বসলেন তৃণমূল নেতারা? ডেরেক শুধু বলেছেন, ‘‘আমরা আগামী তিন দিন বিনা বাধায় আন্দোলন জিইয়ে রাখতে চাইছি।’’
সারদা কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবযানীর মা শর্বরী মুখোপাধ্যায় সোমবার দেবযানীর আইনজীবী অনির্বাণ গুহঠাকুরতার বাড়িতে এক সাংবাদিক বৈঠক ডেকে বলেন, ‘‘এ দিন সকালে জেল থেকে মেয়ে ফোন করে বলেছে, সে সিবিআইয়ের কাছে সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ দায়ের করেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy