গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
টানাপড়েনে আচমকা ইতি, বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা গ্রহণ করে নিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আর সঙ্গে সঙ্গে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সংক্রান্ত জল্পনাও আবার নতুন মোড় নিয়ে নিল।
বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ফের তৃণমূলের হয়ে সক্রিয় হওয়ার কথা বেশ কিছু দিন ধরেই বলছিলেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু গত ১৪ অগস্ট বিজেপিতে যোগ দেওয়া শোভন চট্টোপাধ্যায় এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেননি সে দল ছাড়ার কথা। কলকাতার প্রাক্তন মেয়র তথা রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী শোভনের সঙ্গে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার আগেই মিল্লি আল-আমিন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদ থেকে তথা চাকরি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন। কিন্তু পার্থ সে ইস্তফা গ্রহণ করেননি। যে সব অভিযোগ তুলে বৈশাখী পদত্যাগ করছিলেন, সেই অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন বরং। কিন্তু পরিস্থিতি না বদলানোয় চলতি মাসের ৫ তারিখে ই-মেল করে ফের পার্থকে পদত্যাগপত্র পাঠান বৈশাখী। সে বারেও পার্থ জানিয়ে দেন যে, ইস্তফা তিনি গ্রহণ করছেন না। মিল্লি আল-আমিন কলেজের সমস্যার সমাধান দ্রুত করার আশ্বাস তিনি ফের বৈশাখীকে সে দিন দেন বলে জানা গিয়েছিল। কিন্তু তার ১২ দিনের মাথায় খবর এল, গৃহীত হয়েছে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা। নতুন টিচার ইনচার্চ নিযুক্ত করা হয়েছে পারভিন কউরকে।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়েই শোভনকে কটাক্ষ এবং ভর্ৎসনা শুরু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিক্ততা বাড়তে থাকায় শোভন মন্ত্রিত্ব এবং মেয়র পদে ইস্তফা দিয়েছিলেন গত বছর। পরে তৃণমূলই ছেড়ে দেন। এ দিন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফা গৃহীত হওয়ার খবরে তাই স্বাভাবিক কারণেই মুখ খুলেছেন শোভন। ‘‘গত সপ্তাহেও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানো হল যে, ইস্তফা গ্রহণ করা হবে না, কলেজের সমস্যার সমাধান দ্রুত করা হবে। তা হলে এই ক’দিনে কী পরিস্থিতি তৈরি হল বা অবস্থার কী এমন পরিবর্তন হল যে, আচমকা এ ভাবে কিছুই না জানিয়ে ইস্তফা গৃহীত হয়ে গেল?’’ মঙ্গলবার এই প্রশ্নই তুলেছেন শোভন চট্টোপাধ্যায়।
বিজেপিতে যোগ দিলেও সে দলের হয়ে শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রিয় ভাবে ময়দানে নামেননি। বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের সঙ্গে বনিবনা না হওয়াতেই যে তাঁদের দূরে সরে থাকা, সে কথা শোভন-বৈশাখী আকারে-ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিয়েছেন একাধিক বার। তার পরে ভাইফোঁটার দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে শোভন এবং বৈশাখী যাওয়ায়, জল্পনা নতুন বাঁক নেয়। মমতার সঙ্গে শোভনের সম্পর্কের বরফ গলেছে এবং শোভন আবার তৃণমূলে ফেরার পথে— এই গুঞ্জন শুরু হয়। আর ঘরে বসে না থেকে শোভন এ বার ময়দানে নেমে পড়ুন— এই বার্তা খোদ মমতা-ই ভাইফোঁটার দিন দিয়েছিলেন বলেও তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছিল। কিন্তু তার পরেও শোভন বিজেপি ছাড়ার কথা ঘোষণা করেননি। তৃণমূলের হয়েও মাঠে নামেননি। তার জেরেই কি শিক্ষামন্ত্রীর মেজাজ বদল হল? প্রশ্ন রাজনৈতিক শিবিরে।
বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতি বা আমার শিক্ষকতা, অসম্মান নিয়ে কোনওটাই যে করা সম্ভব নয়, তা আমি তো একাধিক বার বলেছি। রাজনীতি থেকে আগেই নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। কলেজের পরিস্থিতির পরিবর্তন না হলে সেখানেও যে আর থাকতে চাই না, তা-ও শিক্ষামন্ত্রীকে বার বার জানিয়েছিলাম। শিক্ষামন্ত্রীই আমার ইস্তফা নিতে চাননি। বার বার ইস্তফা ফিরিয়ে দিয়েছেন। বার বার আশ্বস্ত করেছেন যে, কলেজের সমস্যার সমাধান দ্রুত করা হবে। কিন্তু আজ আচমকা জানলাম, আমার ইস্তফা গৃহীত হয়েছে। সেটাও নতুন টিচার ইনচার্জের কাছ থেকে জানলাম।’’ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এ দিন অসৌজন্যের অভিযোগ তুলে বৈশাখী বলেন, ‘‘এত বার উনিই আমাকে আটকালেন। বার বার বললেন, কলেজের নতুন পরিচালন সমিতি বানিয়ে দেবেন, সব সমস্যা মিটিয়ে দেবেন। তার পরে হঠাৎ শুনলাম আমার চাকরি আর নেই। কিন্তু সেটা পার্থবাবুর কাছ থেকে আর শুনলাম না। তিনি যে সিদ্ধান্ত বদলেছেন, তিনি যে আমার ইস্তফা গ্রহণ করছেন, তা আমাকে জানানোর ন্যূনতম প্রয়োজনটাও তিনি অনুভব করলেন না।’’
মিল্লি আল-আমিন কলেজে নতুন টিচার ইনচার্জ নিয়োগের চিঠি। —গ্রাফিক শৌভিক দেবনাথ
অসন্তোষ গোপন করছেন না শোভনও। শিক্ষা দফতরের এই সিদ্ধান্তে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা দেখছেন তিনি। শোভনের কথায়, ‘‘আমার উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার ইচ্ছা যদি থাকে, তা হলে ওঁরা তা করতেই পারেন। কিন্তু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন প্রতিহিংসার শিকার বানালেন? কলেজের চাকরিটা তো বৈশাখীকে তৃণমূল দেয়নি। ওটা তো তাঁর নিজের অর্জন। রাজনীতির সঙ্গে ওটার কী সম্পর্ক ছিল? কেন দিনের পর দিন ওঁর কলেজের সমস্যাটাকে ঝুলিয়ে রাখা হল, কেন আচমকা এ ভাবে ইস্তফা গৃহীত হল, বুঝলাম না।’’
শোভন আরও বলেন যে, ‘‘আমার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আমি নিজে নিই। কারও কথায় চলি না। আমার কোনও সিদ্ধান্ত কারও পছন্দ হচ্ছে না বলে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে যদি তার ফল ভোগ করতে হয়, তা হলে খুব দুর্ভাগ্যজনক।’’
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, তিনি কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
শোভনের প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু ক্ষোভ স্পষ্ট। ফলে তাঁর তৃণমূলে ফেরার জল্পনা ফের জলে চলে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy