এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্যের জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে গেল। ২৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার পর্যন্ত সিবিআই হেফাজত হল তাঁর। সিবিআইয়ের যুক্তি, বড় ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িয়ে আছেন উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনকার উপাচার্য। সেই ষড়যন্ত্রের খোঁজ পেতে তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে হবে। প্রাথমিক ভাবে আদালত এই আবেদনে রায়দান আপাতত স্থগিত রাখে। পরে ২৬ তারিখ পর্যন্ত সিবিআই হেফাজত হয় সুবীরেশের। সুবীরেশের আইনজীবী তমালকান্তি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওঁর ২৬ তারিখ পর্যন্ত সিবিআই হেফাজত হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আইনজীবী থাকার আবেদন করা হয়েছে। এ নিয়ে এখনও কোনও নির্দেশ আদালত দেয়নি, রায় স্থগিত রাখা হয়েছে।’’
মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে তোলা হয় সুবীরেশকে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। কেন্দ্রীয় সংস্থার আইনজীবী জানান, যে সময়ে পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ, তার অনেকটা সময় সুবীরেশই ছিলেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান পদে। অথচ তাঁর কাছে নিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়ে সদুত্তর পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি তদন্তকেও বিপথে চালিত করার চেষ্টা করছেন। যদিও এর পাল্টা সুবীরেশের আইনজীবী তমালকান্তি আদালতকে বলেন, নিয়োগ দুর্নীতিতে বড় মাথাদের বাঁচাতে বলি দেওয়া হচ্ছে এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে।
উল্লেখ্য, সুবীরেশ নিজেও বার বার জানিয়ে এসেছেন, তাঁর আমলে এসএসসি নিয়োগে পদ্ধতিগত কিছু ত্রুটি থাকলেও কোনও দুর্নীতি হয়নি। কিন্তু তার পরও সোমবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে। সোমবার তাঁকে নিজাম প্যালেসে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠিয়েছিল সিবিআই। গত ২৪ অগস্ট তাঁর শিলিগুড়ির দফতরে এবং ২৫ অগস্ট কলকাতার বাঁশদ্রোণীর ফ্ল্যাটে তল্লাশি অভিযানও চালানো হয়। সিবিআই সূত্রে খবর, ওই ফ্ল্যাট থেকে এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি পাওয়া যায়। কিন্তু সোমবার এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রশ্নে সুবীরেশের জবাবে সিবিআই আধিকারিকরা সন্তুষ্ট হননি বলে সূত্রের খবর। সিবিআই সূত্রে এমনও জানা গিয়েছে যে, তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগেই গ্রেফতার করা হয় তাঁকে। মঙ্গলবারও আদালতে সিবিআইয়ের আইনজীবী সে কথাই বলেছেন। সুবীরেশের আইনজীবী অবশ্য এসএসসির প্রাক্তন চেয়ারম্যানকে নির্দোষ বলে দাবি করে তাঁর জামিনের আবেদন করেছেন। কিন্তু তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
-
আফগানিস্তানের ছেলেমেয়েরা ‘খারাপ’ হয়ে যাচ্ছে, এই যুক্তি দিয়ে পাবজি, টিকটক নিষিদ্ধ করছে তালিবান সরকার
-
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শুরুর ১৮ দিন আগে রোহিত-কোহলীদের দেশ ছাড়তে বলছেন দ্রাবিড়, কেন?
-
বহু স্টেশনে ‘রেল রোকো’, একাধিক ট্রেন বাতিল করল দক্ষিণ-পূর্ব রেল, রইল তালিকা
-
মহিলাদের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলা থেকে এক ধাপ দূরে বাংলাদেশ, সহেলির হাত ধরে শেষ চারে
সুবীরেশ প্রসঙ্গে তদন্তকারীদের বক্তব্য ছিল, তিনি এসএসসির চেয়ারম্যান ছিলেন ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। মূলত সেই সময়েই শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে বলে তদন্তে জানা গিয়েছে। এমনকি এসএসসি দুর্নীতি সংক্রান্ত কলকাতা হাই কাের্টের প্রাক্তন বিচারপতি রঞ্জিতকুমার বাগের নেতৃত্বাধীন তদন্ত কমিটির রিপোর্টেও ওই সময়েই শিক্ষা নিয়োগে দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে। সিবিআই সূত্রে খবর, সুবীরেশকে তাঁর জমানায় এই নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি সহযোগিতা করেননি।
সিবিআই এ-ও বলেছে যে, এসএসসির চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যাওয়ার পরও সুবীরেশে প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে। তিনি এখনও উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। দার্জিলিং হিলস বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য। সেই সঙ্গে কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ কলেজের অধ্যক্ষ, নিখিল বঙ্গ অধ্যক্ষ পরিষদের সভাপতি এবং রাজ্যের উপাচার্য পরিষদের সম্পাদক। বহু পদের অধিকারী এই সুবীরেশ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি চক্রের ‘বড় মাথা’ ছিলেন বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের। বিষয়টির গভীরে পৌঁছতেই সুবীরেশকে হেফাজতে নিয়ে জেরা করতে চায় সিবিআই।