চলছে প্রশিক্ষণ। নিজস্ব চিত্র
প্রশ্ন: কবে থেকে ‘পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমি’-র সঙ্গে পথচলা শুরু?
উত্তর: ২০১৮-র পয়লা এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে সাফল্যের সঙ্গে তা এক বছর পূর্ণ করল।
প্রশ্ন: কী ভাবে রামকৃষ্ণ মিশন পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হল?
উত্তর: রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের যে শিক্ষাকেন্দ্রগুলি রয়েছে সেগুলিতে কোনও না কোনও ভাবে বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। এত দিন সেখানেই আমরা ছেলেদের এবং কোনও কোনও জায়গায় মেয়েদেরও প্রশিক্ষণ দিতাম। প্রশিক্ষণ শেষে শংসাপত্রও দেওয়া হত। পড়ুয়ারা উচ্চমানের প্রশিক্ষণ পেলেও চাকরির বাজারে তাঁদের চাহিদা কম ছিল। কারণ, আমাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি ‘ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন’ (এনএসডিসি)-এর দ্বারা অনুমোদিত ছিল না। ফলে, আমরা যে শংসাপত্র দিতাম তাতে এনএসডিসি কর্তৃপক্ষের সিলমোহর থাকত না। বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবনাচিন্তা শুরু করলাম। এত ভাল প্রশিক্ষণ দিচ্ছি, এত ভাল শিখছেন পড়ুয়ারা, তার পরেও চাকরির বাজারে চাহিদা কম। কী ভাবে ওঁদের সাহায্য করা যায়, এই নিয়ে ভাবনাচিন্তা যখন চলছে, তখন এক দিন ঘটনাচক্রে পিয়ারলেসের কর্ণধার এসকে রায় এসে অনুরূপ একটি প্রস্তাব দিলেন।
প্রশ্ন: প্রস্তাবটি কী ছিল?
উত্তর: এসকে রায় আমাদের জানান, তাঁর একটি পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি হল, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন এবং পিয়ারলেস এক সঙ্গে এনএসডিসি-এর অনুমোদন পাওয়ার কাজটি করতে পারে কি না। আমরা সেই প্রস্তাবে রাজি হওয়ায় রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে পিয়ারলেস একটি সংস্থা তৈরি করে। যার নাম ‘পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমি’ (পিএসএ)।
প্রশ্ন: এই সংযুক্তিকরণে সুবিধা কী হবে?
উত্তর: ‘পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমি’ এনএসডিসি-র অনুমোদনপ্রাপ্ত। ফলে, তারা শংসাপত্র দিতে পারবে। এত দিন আমরা প্রশিক্ষণ শেষে শুধু রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের শংসাপত্র দিতাম। এই সংযুক্তির ফলে, শংসাপত্রটি দেবে এনএসডিসি। তাতে চাকরির বাজারে আমাদের পড়ুয়াদেরও চাহিদা বাড়বে।
প্রশ্ন: রাজ্যের কোথায় কোথায় রয়েছে এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র?
উত্তর: রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের যে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলি রয়েছে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে, সেখান থেকে প্রথম পর্যায়ে আটটিকে বেছে নিয়ে পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করা হয়েছিল। বলতে দ্বিধা নেই, সাফল্য মিলেছে ১০০ শতাংশ। রাজ্যের যে সব জেলায় আমাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে, সেখানেই এই স্কিল অ্যাকাডেমি চালু করা হয়েছে।
প্রশ্ন: বর্তমানে রাজ্য জুড়ে কতগুলি কেন্দ্র চলছে?
উত্তর: আটটি থেকে শুরু করে এক বছরের মধ্যে তা আরও বিস্তার লাভ করেছে। এখন মোট ১৮টি কেন্দ্র চলছে গোটা রাজ্যে।
প্রশ্ন: আগামী দিনে কি কেন্দ্রের সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে?
উত্তর: অবশ্যই। আগামী দিনে বাইরের কোনও কোনও রাজ্য, যেখানে আমাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে, যেমন ‘পিএসএ’ চালু করা হবে, তেমনই যে সব স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান এমন স্কুল চালাচ্ছে, তাদেরকেও ‘পিএসএ’-র অধীনে আনা হবে। এটা তো সবে শুরু। ধীরে ধীরে গোটা ভারতকে এর আওতায় আনা হবে। এখন ছোট চারাগাছ। এক দিন তা-ই মহীরূহে পরিণত হবে।
প্রশ্ন: কী কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় এই স্কিল অ্যাকাডেমিতে?
উত্তর: বিভিন্ন বিষয়ের উপরে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে বিষয়টি মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত—(১) স্বনির্ভরতা, (২) ওয়েজ এমপ্লয়মেন্ট, (৩) মিডিয়া কোর্স (চলচ্চিত্র সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ) এবং (৪) কম্পিউটার সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ।
প্রশ্ন: প্রশিক্ষণ পেতে গেলে যোগ্যতা ও বয়সের মাপকাঠি কী?
উত্তর: স্বনির্ভরতার প্রশিক্ষণ পেতে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও মাপকাঠি না থাকলেও অন্য ক্ষেত্রে ন্যূনতম অষ্টম শ্রেণি পাশ হতে হবে। তবে প্রতি ক্ষেত্রেই বয়স হতে হবে ১৮ বছর।
প্রশ্ন: কোর্সের খরচ কত?
উত্তর: শিক্ষাকেন্দ্রের পরিকাঠামো, শিক্ষক— সবই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের নিজস্ব। তবে পরিকাঠামো উন্নয়নে রাজ্য সরকার এবং পিয়ারলেস কর্তৃপক্ষের তরফেও কখনও কখনও সহযোগিতা পাই। পড়ুয়াদের থেকে সামান্য ফি নেওয়া হয়। সেটি পিয়ারলেসকে তুলে দেওয়া হয়, তাদের প্রশাসনিক ব্যয় বহন করার জন্য।
প্রশ্ন: পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরে চাকরির বাজারে পড়ুয়াদের চাহিদা কেমন?
উত্তর: বিষয়টি হল, যাঁরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, তাঁরা এত দিন কোনও স্বীকৃত শংসাপত্র পেতেন না। এখন তাঁরা সেটি পাচ্ছেন। আর স্বাভাবিক ভাবেই চাকরির ইন্টারভিউতে রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়াদের প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিশেষ একটা আগ্রহ থাকে। কারণ, তাঁদের রামকৃষ্ণ মিশনের উপরে বিশ্বাস ও আস্থা রয়েছে। আর রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষাও উচ্চমানের।
প্রশ্ন: রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়াদের উপরে আস্থা রাখার আরও কি কোনও কারণ রয়েছে?
উত্তর: নিশ্চয়ই। এখানকার ছেলেমেয়েরা স্বাভাবিক ভাবে সততা, দৃঢ়তা, নিরপেক্ষতা, অধ্যবসায় এবং সর্বোপরি পবিত্রতা নিয়ে কাজ করতে জানেন। যাঁরা রামকৃষ্ণ মিশনের পড়ুয়াদের চাকরি দিচ্ছেন, তাঁরা পরবর্তী সময়ে দেখছেন, সিদ্ধান্তে কোনও ভুল হয়নি। কারণ, চাকরিদাতাদের প্রত্যাশা আমাদের পড়ুয়ারা অনেকটাই পূরণ করতে পারছেন। এ সবের জন্যই চাকরির বাজারে ‘পিএসএ’ থেকে পাশ করা এবং এনএসডিসি-র শংসাপত্র পাওয়া আমাদের পড়ুয়ারা প্রাধান্য পাচ্ছেন। আর তাতে শিক্ষকদেরও উৎসাহ বাড়ছে।
প্রশ্ন: সব মিলিয়ে পিয়ারলেস স্কিল অ্যাকাডেমি সম্পর্কে কী বলবেন?
উত্তর: সব মিলিয়ে একটা সার্বিক উন্নয়নের দিশা দেখতে পাচ্ছি। প্রশিক্ষণের গুণগত মান, শিক্ষকদের উৎসাহ, পড়ুয়াদের একাগ্রতা ও পরিকাঠামোর উন্নয়ন—এই চারটি বিষয় একত্রিত হওয়ার ফলে এখানকার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলির সার্বিক উন্নয়ন ঘটছে।
প্রশ্ন: এই স্কিল অ্যাকাডেমির লক্ষ্যের বিষয়ে কী বলবেন?
উত্তর: যুব সম্প্রদায়, মহিলা ও দুঃস্থদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে সহযোগিতা করা। স্বামী বিবেকানন্দ প্রান্তিক জনগণের কথা বলেছিলেন। স্বামী বিবেকানন্দ নতুন ভারতের যে স্বপ্ন দেখেছেন সেখানে তিনি বলেছেন, ‘নূতন ভারত বেরুক। বেরুক লাঙল ধরে, চাষার কুটির ভেদ করে, জেলে মালা মুচি মেথরের ঝুপড়ির মধ্য হতে। বেরুক মুদির দোকান থেকে, ভুনাওয়ালার উনুনের পাশ থেকে। বেরুক কারখানা থেকে, হাট থেকে, বাজার থেকে। বেরুক ঝোড় জঙ্গল পাহাড় পর্বত থেকে’। এই যে প্রান্তিক জনগণ, যাঁদের আমরা জনতা-জনার্দন বলি, যাঁদের চোখের জলের হিসেব কেউ নিলেন না। তাঁদের চোখের জলের হিসেব নেওয়া আমাদের কর্তব্য। স্বামীজীর দর্শন তার উপরেই দাঁড়িয়ে আছে। স্বাভাবিক ভাবেই এই কাজটি শ্রীরামকৃষ্ণ, মা সারদা ও স্বামী বিবেকানন্দের দর্শনের সঙ্গে একশো ভাগ মিলে যাচ্ছে।
সাক্ষাৎকার: শান্তনু ঘোষ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy