সপ্তাহে একটা গোটা ডিম কি পড়ুয়াদের আদৌ দেওয়া যাবে? নাকি সেই ‘আধা ডিম’ বা ছিটেফোঁটা ডিম ভুজিয়ার পরম্পরাই জারি থাকবে রাজ্যের স্কুলে স্কুলে? সম্প্রতি ডিমের দাম বাড়ায় স্কুলের মিড-ডে মিলের ভোজপাত নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠে গেল।
সম্প্রতি প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বেড়ে হয়েছে ৬ টাকা ১৯ পয়সা। উচ্চ প্রাথমিকের পড়ুয়াদের জন্য তা হয়েছে ৯ টাকা ২৯ পয়সা। এ দিকে ডিমের দাম এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ টাকা। এই দাম আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। তাই প্রশ্ন উঠছে, মিড-ডে মিলের বর্ধিত বরাদ্দের পরেও কি পড়ুয়াদের পাতে একটা আস্ত ডিম দেওয়া সম্ভব হবে? শিক্ষকদের একাংশের মতে, মিড-ডে মিলে বরাদ্দ বর্ধিত হয়ে পড়ুয়াদের কোনও লাভ হল না।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার মিড-ডে মিলের বরাদ্দ বৃদ্ধি করেছে। প্রাথমিকে অর্থাৎ প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ছিল ৫টাকা ৪৫ পয়সা এবং ষষ্ঠ থেকে অষ্টম অর্থাৎ উচ্চ প্রাথমিকে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ছিল ৮ টাকা ১৭ পয়সা। প্রাথমিকে ৭৪ পয়সা বেড়ে সেই বরাদ্দ এখন হয়েছে ৬ টাকা ১৯ পয়সা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ১ টাকা ১২ বয়সা বেড়ে হয়েছে ৯ টাকা ২৯ পয়সা।
এই পরিস্থিতিতে মিড-ডে মিলের বরাদ্দ ছিটেফোঁটা বেড়ে কী লাভ হল, প্রশ্ন তুলেছেন বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা। আনন্দ বলেন ‘‘মি-ডে মিলের এই প্রকল্পের গালভরা নাম ‘পি এম পোষন’ দেওয়াই সার! ডিমের পুষ্টিটুকুও তো ছোটদের মুখে তুলে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে।’’
ডোমজুড়ের কেশবপুর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক দীপঙ্কর দাস বলেন, ‘‘আমাদের যে মিড-ডে মিলের চার্ট সেখানে দু’দিন ডিম দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সেটা বাস্তবে সম্ভব হত না। বরাদ্দ বৃদ্ধির সঙ্গে ভেবেছিলাম, এ বার হয়তো দু’টো ডিম দেওয়া যাবে। কিন্তু ডিমের দাম যে ভাবে বাড়ছে তাতে বোঝা গেল, সেটা সম্ভব নয়। ডিম ভুজিয়া বা তরকারির মধ্যে মেশানো ডিমই দিতে হবে। এই সামান্য বরাদ্দ বৃদ্ধির মানে কী?’’ অল পোস্ট গ্র্যাজুয়েট টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক চন্দন গড়াই বলেন, ‘‘পড়ুয়াদের পুষ্টি সেই অধরাই থেকে যাচ্ছে। আমরা দাবি করছি প্রাথমিকে বরাদ্দ ১২ টাকা এবং উচ্চ প্রাথমিকে ১৫ টাকা করা হোক।’’
ডিমের দাম এখনই কমার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল পোল্ট্রি ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মদনমোহন মাইতি। মদন বলেন, ‘‘মুরগির খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। মুরগির অন্যতম প্রধান খাবার ভুট্টার কিলো ২৮ টাকা। কিছু দিন আগে অনেকটাই কম ছিল।’’ তবে মদনমোহনের মতে, শীতকালে উৎসবের মরসুমে ডিমের চাহিদা বেশি। তাই দামটাও বেশি। পরে দাম কমতে পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)