শাজাহান শেখ। —ফাইল চিত্র
তাঁর উত্থান উল্কার গতিকেও হার মানায়।
শুরুটা বাম আমলে। ‘দাদা ধরে’ উড়তে শুরু করেন শাজাহান শেখ। তৃণমূলের আমলেও তিনি এলাকার ‘বেতাজ বাদশা’। এলাকার বাসিন্দারা ফিসফিসিয়ে জানান, শাজাহানের দলবল রাস্তায় বেরোলে অন্যেরা রাস্তা ছেড়ে দেয়। কেউ বলেন, ভয়ে। কেউ বলেন, ভক্তিতে।
তৃণমূলের সন্দেশখালি ১ ব্লকের সভাপতি শাজাহান। জানা গেল, এলাকায় নিজস্ব বাহিনী সাজিয়েছেন তিনি। বছর পঁয়তাল্লিশের শাজাহানের শুরুর গল্পটা অবশ্য এমন জাঁকজমকের নয়। সরবেড়িয়ার গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, এক সময়ে দিন আনি দিন খাই অবস্থা ছিল শাজাহান আর তাঁর পরিবারের। তখন এলাকায় সিপিএমের দাপট। আর সরবেড়িয়ার শেষ কথা ছিলেন দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা মোসলেম শেখ। তিনি সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন। তৃণমূলের এক স্থানীয় নেতা বললেন, ‘‘তখন আমরা মোসলেমের অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতাম। পুলিশের কাছে গেলে পুলিশ অভিযোগ নিত না। বেশি কিছু বললে গ্রামছাড়া করার হুমকি মিলত।
২০০৬ সাল নাগাদ এ হেন মোসলেমের সঙ্গে জুটে যান শাজাহান। সম্পর্কে শাজাহান মোসলেমের আত্মীয়। ডাকাবুকো শাজাহান মোসলেমের রাজ্যপাট দেখভাল করতে থাকেন। কাজ সামলাতে থাকেন। কী কাজ? এক পুরনো সিপিএম নেতার কথায়, ‘‘এই এলাকায় কাজ বলতে তো ভেড়ির দখল আর ভেড়ি থেকে তোলা আদায়।’’
সুন্দরবন-লাগোয়া সন্দেশখালির দু’টি ব্লকেই ভেড়িতে চিংড়ি-সহ অন্যান্য মাছ চাষ প্রধান জীবিকা মানুষের। এখানকার চিংড়ি চালান যায় রাজ্যের নানা প্রান্তে। অনেক জমির মালিক নিজেরা চাষ করেন না। জমি লিজে দিয়ে দেন। সে জন্য জমি নিলাম হয়। এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, কবে কোন জমি নিলাম হবে, কারা সেই জমি পাবে, তা ঠিক করে দিতে শুরু করে শাজাহানরা। পিছনে মূল মাথা তখনও মোসলেম। পরে গোটা কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিতে শুরু করেন শাজাহান।
এরই মধ্যে ২০০৯ সালে বসিরহাট আসন বামেদের হাতছাড়া হয়। কিন্তু সরবেড়িয়া পঞ্চায়েতে তখনও বামেদের দখলে। এলাকায় কান পাতলে শোনা যায়, সেই জয়ের অন্যতম কারিগর ছিল মোসলেম-শাজাহান জুটি। বুথ দখল, ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ তোলে তৎকালীন বিরোধী দল তৃণমূল। ২০১১ সালের বিধানসভা ভোটেও সন্দেশখালি তৃণমূলের অধরা ছিল। এখানেও জোর করে ভোট করানোর অভিযোগ ছিল শাজাহানদের বিরুদ্ধে। সন্দেশখালি হাতে এলেও সরকারে বামেরা না থাকায় কারবার সামলাতে সমস্যায় পড়তে হয় শাজাহানদের।
২০১৩ সালে সুযোগ বুঝে জার্সি বদলে ঘাসফুল শিবিরে ভিড়ে যান শাজাহান। কিন্তু মোসলেম দল ছাড়েননি। মোসলেমের বাহিনী তখনও এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সিপিএমের এক নেতা বলেন, ‘‘দল বদলে ফেলে এলাকায় নিজের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করতে উঠেপড়ে লাগেন শাজাহান। শুরু হয় পুরনো গুরুর সঙ্গে টক্কর। একে একে মোসলেমের বাহিনীও ভিড়তে থাকে শাজাহান শিবিরে। অস্তিত্ব সংকট হয় মোসলেমের। ২০১৭ সালে বাধ্য হয়ে তৃণমূলে নাম লেখান মোসলেমও। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে ২০১৭ সালে শিষ্য মোসলেমের বশ্যতা মেনে নিয়ে তৃণমূলে নাম লেখান মোসলেমও। তখন অবশ্য তিনি পুরনো চেলা শাজাহানের দাপটে কোণঠাসা।
কিন্তু কী ভাবে ভেড়ির দখল নিত শাজাহানরা? (চলবে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy