ঝড়ে ভেঙে পড়েছে লাইট পোস্ট। রবিবার কাঁকিনাড়ায়। — নিজস্ব চিত্র
ছুটির সকালে ছিল মেঘলা আকাশ। ভ্যাপসা গরম। বিকেল গড়াতেই মহানগরের অনেক জায়গায় নামল বৃষ্টি। সঙ্গে ঝড়। আবার ঝড়বৃষ্টির সঙ্গে শিলাও পড়ল উত্তর ২৪ পরগনার ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এবং লাগোয়া নদিয়ায়।
শেষ-চৈত্রের এই ক্ষণদুর্যোগের দু’রকম প্রভাব পড়েছে আমজনতা আর ভোটপ্রার্থীদের উপরে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ব্যারাকপুর মহকুমায় অন্তত ৫০০ বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছে আম ও ফুলচাষের। কলকাতার তিলজলাতেও বৃষ্টির জেরে একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। ঝড়বৃষ্টির জেরে রাত পর্যন্ত অবশ্য হতাহতের কোনও খবর নেই। তবে শিয়ালদহের বিভিন্ন শাখায় ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভুগতে হয়েছে যাত্রীদের।
আমজনতা ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়লেও ভোট-প্রচারে সুবিধেই হয়েছে নেতানেত্রীদের। কলকাতায় পুরভোটের আগে শেষ রবিবার। তাই সকাল থেকেই প্রচারের ‘স্লগ ওভারে’ মাঠে নেমেছিলেন প্রার্থীরা। মেঘলা আকাশের জন্য তাপের কষ্ট সইতে হয়নি। বরং দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি কম। তবে ঘামের অস্বস্তির কাঁটাটা ছিলই। কেউ কেউ অস্বস্তি এড়াতে ঘনঘন রুমাল-তোয়ালে দিয়ে ঘাম মুছেছেন, কেউ আবার গলা ভিজিয়েছেন বোতলের জলে। উত্তর-মধ্য কলকাতার লিফটহীন বহুতলে উঠতে গিয়েও গলদ্ঘর্ম হয়েছেন অনেক প্রার্থী। এর মধ্যে দুপুরের পর কালো মেঘের আনাগোনা দেখে রবি-সন্ধ্যার প্রচার মাটি হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছিলেন প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বেলা সাড়ে ৩টে থেকে ঘণ্টাখানেক বৃষ্টি-হাওয়ার সময়টা হয়ে দাঁড়াল প্রচার-যুদ্ধের ‘বিরতি পর্ব’। ঝড়বৃষ্টি কমতেই পুরোদমে মাঠে নামেন নেতা-কর্মীরা। আবহাওয়া তখন অনেকটাই মোলায়েম। সকালের ঘামের অস্বস্তি ঝে়ড়ে ফেলে তাঁরা তখন অনেক বেশি চনমনে।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের বিজ্ঞানীরা বলছেন, সকালের ভ্যাপসা গরম এবং বিকেলের ঝড়বৃষ্টির পিছনে কারণ একই। বাংলাদেশ ও লাগোয়া এলাকায় থাকা একটি ঘূর্ণাবর্ত এবং অসম থেকে রাজ্যের উপর দিয়ে ছত্তীসগঢ় পর্যন্ত বিস্তৃত একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা। এর ফলে সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প দক্ষিণবঙ্গে ঢুকছে। সেই জলীয় বাষ্পই ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করেছে। মেঘলা আকাশের জন্য এ দিন কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও ছিল স্বাভাবিকের নীচে।
বেলা যত গড়িয়েছে, ততই জলীয় বাষ্পের জোগান বেড়েছে। সেই জোলো হাওয়া গরম হয়ে উঠে গিয়েছে বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে। তা আরও ঘনীভূত হয়ে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি করেছে। তা থেকেই ঝড়বৃষ্টি। শিলাবৃষ্টি নিয়ে আবহবিদদের ব্যাখ্যা, অক্ষরেখার সঙ্গে বাংলাদেশ লাগোয়া ঘূর্ণাবর্তের ফলে উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ায় জলীয় বাষ্পের জোগান বেশি। গরম হাওয়া ঠেলে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরে উঠলে বজ্রগর্ভ মেঘ তৈরি হয়। অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প থাকায় সেই জলকণা জমে তৈরি হয় বরফকণা। তা থেকেই শিলাবৃষ্টি।
আলিপুর হাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘জলীয় বাষ্পের জোগান বেশি থাকলে শিলাবৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এ দিনও তা-ই হয়েছে।’’
প্রশাসন জানাচ্ছে, এ দিনের ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল এবং লাগোয়া এলাকায় প্রায় ১৫০টি বাড়ির দেওয়াল ও ছাদ ভেঙে পড়েছে। এ ছাড়াও প্রায় ৩৫০ বাড়ি আংশিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। মহকুমা প্রশাসনের দাবি, ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে ত্রিপল ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে। বাড়ি ভাঙার পাশাপাশি ক্ষতি হয়েছে ফসলেরও। চৈত্রের শেষ বেলায় অনেক গাছেই আম ধরেছে। কোথাও গুটি। কোথাও বা একটু বড় আম। শিলার ঘায়ে তার ক্ষতি হয়েছে। ঝরে গিয়েছে বহু গুটিও। বোরো ধানের শিষও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলকাতায় শিলাবৃষ্টি তেমন না-হলেও প্রবল বৃষ্টিতে তিলজলা রোডের একটি তেতলা বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ে। তবে কেউ হতাহত হননি। পুলিশ ও পুরসভার বিল্ডিং বিভাগঘটনাস্থলে যায়। পুরসভা সূত্রের খবর, ওই বাড়িটি বিপজ্জনক হিসেবে চিহ্নিত। বিল্ডিং বিভাগের কর্মীরা বিপজ্জনক অংশটি ভেঙে ফেলেন।
হাওয়া অফিস সূত্রের খবর, নিম্নচাপ অক্ষরেখা এবং ঘূর্ণাবর্তটি রবিবার রাত পর্যন্ত সক্রিয় রয়েছে। পরিমণ্ডলের মতিগতি দেখে আবহবিজ্ঞানীদের অনুমান, সেটি আজ, সোমবারেও সক্রিয় থাকবে। তার ফলে দক্ষিণবঙ্গে ফের ঝ়ড়বৃষ্টির পূর্বাভাস দিচ্ছেন তাঁরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy