ছাত্রীদের বিশেষ সময়ের প্রয়োজনে রাজ্যের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়েই স্যানিটারি ন্যাপকিনের ভেন্ডিং মেশিন রাখার আবেদন করেছিল রাজ্য মহিলা কমিশন। কিন্তু ছ’মাস পরেও সেই ব্যবস্থা কার্যত হয়ে ওঠেনি রাজ্যের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেই। এমনকী বিষয়টি নিয়ে উদাসীন খাস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ও।
রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় জানান, ঋতুচক্রের সময়ে যাতে অসুবিধা না হয়, তাই যেখানে মহিলাদের যাতায়াত বেশি থাকে সেখানে এই ভেন্ডিং মেশিন বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। যে মেশিন চালু করে যথাস্থানে টাকা ফেললেই বেরিয়ে আসবে একটি করে স্যানিটারি ন্যাপকিন। গত নভেম্বরে মহিলা কমিশনের অফিসেই বসানো হয় ওই মেশিন। এই মেশিন বসানোর আবেদন করা হয়েছিল রাজ্যের মেডিকেল কলেজ, পুরসভা, জেলা শাসকদের দফতর এবং বিশেষত ছাত্রীদের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়েও। কিন্তু সুনন্দাদেবীর আক্ষেপ, ‘‘অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়েই ওই পরিষেবা চালু হল না! মেয়েদের প্রতি এতটাই অবহেলা যে সামান্য কিছু টাকা ব্যয় করতে পারলেন না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?’’
পাশাপাশি, পরিবেশের কথা ভেবে ভেন্ডর মেশিনের কাছেই রাখার কথা হয়েছিল ‘ডেস্ট্রয় মেশিন’ও। সুনন্দাদেবী জানান, ব্যবহৃত ন্যাপকিন নষ্ট করার
জন্য এই ডেস্ট্রয় মেশিন। ভেন্ডিং মেশিন থেকে নতুন স্যানিটারি ন্যাপকিন নেওয়ার পরে ব্যবহৃত ন্যাপকিন ডেস্ট্রয় মেশিনে ফেলে দিলে সেখানে তা তাপ দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। এর মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা যাবে। কিন্তু সে ব্যবস্থাও বাস্তবায়িত হয়নি বলে জানালেন সুনন্দাদেবী।
কিন্তু রাজ্য মহিলা কমিশনের তরফ থেকে ওই চিঠি পাওয়ার পরেও কেন এই ভেন্ডিং মেশিনের ব্যবস্থা করলেন না কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ?
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে খবর, গত নভেম্বরে কমিশনের কাছ থেকে ওই চিঠি পাওয়ার পরেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ক্লিন ক্যাম্পাস পলিসি কমিটির অন্তর্ভুক্ত করা হয় ভেন্ডিং মেশিন কেনার প্রকল্পকে। ঠিক হয়, কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাস, আলিপুর, রাজাবাজার, বালিগঞ্জ ও বিহারীলাল কলেজে ছাত্রীদের শৌচাগারের কাছে একটি করে ভেন্ডিং মেশিন রাখা হবে। প্রতিটির জন্যে খরচ ধরা হয় পনেরো হাজার টাকা। কিন্তু তার পরে তা আর এক ধাপও এগোয়নি। অভিযোগ, অর্থ দফতরে গিয়ে কার্যত ধামা চাপা পড়ে রয়েছে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি। দ্রুত তা বাস্তবায়িত করার চেষ্টা হবে।’’
বারাসত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসব চৌধুরীও বলেন, ‘‘আমরা দ্রুত চেষ্টা করছি যেন এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত করা যায়। উচ্চশিক্ষা দফতর থেকেও একটি নির্দেশ ছিল।’’ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতির সদস্য আশিস দাস বলেন, ‘‘এখনও বিশ্ববিদ্যালয়ে ওই ব্যবস্থা নেই।’’ ব্যবস্থা নেই বলে জানালেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মলয় সামন্তও।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রদীপ ঘোষ বলেন, ‘‘আমি ইতিমধ্যেই অর্ডার পাশ করিয়ে দিয়েছি। সমস্ত জায়গায় রয়েছে কি না, খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’ যাদবপুরে অবশ্য ছাত্রী আবাসনে একটি ভেন্ডিং মেশিন রয়েছে। এই মেশিন রয়েছে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়েও। উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকার বললেন, ‘‘আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু জায়গায় ভেন্ডিং মেশিন লাগানো রয়েছে। আমি মনে করি এটা খুবই প্রয়োজনীয়।’’ নিজে থেকেই এই ব্যবস্থা নিয়েছে সিটি কলেজও, জানালেন সুনন্দাদেবী।
কিন্তু বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় যদি পারে, তা হলে কেন পারল না অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলি?
— প্রশ্ন কমিশনের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy