বর্ধমানের খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এর সদস্য তারিকুল ওরফে সাদিকের সঙ্গে আনসারুল্লা বাংলা টিম (এবিটি)-এর অসম মডিউলের মাথা নুর ইসলাম মণ্ডলকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতে চায় রাজ্য পুলিশের এসটিএফের গোয়েন্দারা। নুর এখন এসটিএফের হেফাজতে থাকলেও তারিকুল রয়েছে বহরমপুর জেলে। সূত্রের খবর, দুই জঙ্গিকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার জন্যই তারিকুলকে ফের নিজেদের হেফাজতে নিতে চাইছেন গোয়েন্দারা। আগামী সপ্তাহে এর জন্য বহরমপুর আদালতে আবেদন করতে পারেন তদন্তকারীরা। সাজাপ্রাপ্ত তারিকুলকে মাস খানেক আগে এক বার সাত দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল এসটিএফ।
গত ডিসেম্বরে অসম পুলিশ জঙ্গি দমনে নেমে ১৪ জন এবিটি জঙ্গিকে গ্রেফতার করে। তার মধ্যে রয়েছে এ রাজ্যের দু’জন। তাদের নাম মিনারুল শেখ এবং আব্বাস আলি। ওই দু’জনকে মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া থেকে গ্রেফতার করা হয়। সেই সঙ্গে এবিটি-র অসম মডিউলের মাথা নুর ইসলাম মণ্ডল এবং শাব শেখ ওরফে শাদ রাডিকেও গ্রেফতার করা হয়। উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বাসিন্দা শাবের এ রাজ্যের দু’টি বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটার তালিকায় নাম রয়েছে। এ ছাড়া ভুয়ো নথি দিয়ে এ রাজ্য থেকে পাসপোর্ট বানিয়েছিল শাব রাডি। রাজ্য এসটিএফ গত সপ্তাহে ওই চার জনকে অসম পুলিশের হাত থেকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। ২০১৪ সালে খাগড়াগড় বিস্ফোরণের আগে থেকেই নুর এবং বাংলাদেশি তারিকুলের যোগাযোগ ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রের খবর। তবে গোয়েন্দাদের জেরার মুখে তারিকুল এখন তা অস্বীকার করছে বলে জানা গিয়েছে ।
এক তদন্তকারী অফিসার জানান, নুর এবং তারিকুলের কথার মধ্যে অসঙ্গতি রয়েছে বিস্তর। তদন্তকারীদের সূত্রে দাবি খাগড়াগড় বিস্ফোরণের আগে তারিকুলই বীরভূমে নুরকে অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেয় বলে নানা আভাস-ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়েছিল। কিন্তু এখন সে তা অস্বীকার করছে বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তদন্তকারীদের সূত্রটি জানায়, তারিকুল এখন নুরকে চেনেই না বলে দাবি করছে। অবশ্য নুর তারিকুলকে চেনে এবং তার সঙ্গে কথা হয়েছে বলেই জেরায় মেনে নেয় বলে দাবি। পাশাপাশি আরও বেশ কিছু বিষয়ে দু’জনের কথার মধ্যে ফারাক রয়েছে বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
গোয়েন্দারা জানান, যে চার জনকে অসম পুলিশের কাছ থেকে আনা হয়েছে, তার মধ্যে নুর হল এবিটির এ দেশের মাথা। একাধিকবার সে এ রাজ্যে এসে মিনারুল এবং আব্বাসের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আবার তারিকুল জেলে থাকাকালীন নুরই মিনারুল, আব্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতো। তাই এ রাজ্যে জঙ্গি জাল কতটা ছড়িয়েছে তা জানার জন্য ওই দু’জনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করা দরকার বলে মনে করেছেন তদন্তকারীরা। সূত্রের দাবি, ওই মুখোমুখি জেরার আবেদন মঞ্জুর না হলে জেলে গিয়েই তারিকুলের সামনে বসিয়ে বাকিদের জেরা করা হতে পারে বলে গোয়েন্দারা মনে করেছেন।
তদন্তকারীরা জানিয়েছে, ২০১৮-এর আগে নুরের সঙ্গে এ রাজ্যের মিনারুল ও আব্বাসের আলাপ। নুরের পরিচিত হামিদুলের (অসম পুলিশের হাতে গ্রেফতার) এক আত্মীয় মুর্শিদাবাদের একটি মাদ্রাসায় পড়ত। সেখানে মিনারুলের ছেলেও পড়ত। সেই সূত্রেই হামিদুলের মাধ্যমে মিনারুলের সঙ্গে আলাপ হয় নুরের।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)