—ফাইল চিত্র।
অবশেষে টনক নড়ল কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা মাথা চাড়া দিতে শুরু করার প্রায় এক মাস পরে। সংক্রমণে রাশ টানতে লকডাউনের বর্ষপূর্তিতেই রাজ্যগুলিকে নতুন করে স্থানীয় পর্যায়ে কন্টেনমেন্ট জ়োন তথা বিধিনিষেধ ঘোষণার ক্ষমতা দিল কেন্দ্র।
মঙ্গলবার সব রাজ্যকে নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব অজয় ভল্লা। তাতে বলা হয়েছে, করোনা সংক্রমণ রুখতে রাজ্যগুলি প্রয়োজনে ওয়ার্ড, ব্লক, শহর বা জেলা পর্যায়ে স্থানীয় ভাবে সব ধরনের গতিবিধিতে বিধি-নিষেধ জারি করতে পারবে। ১ এপ্রিল থেকে এক মাসের জন্য ওই নিয়ম দেশ জুড়ে চালু হবে। কোনও এলাকায় সংক্রমণ মাত্রাছাড়া হলে, তাকে কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবেও ঘোষণা করতে পারবে রাজ্যগুলি। তবে এই নির্দেশিকায় কোথাও লকডাউন শব্দটি ব্যবহার করা হয়নি।
অতিমারি-পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হচ্ছে বুঝে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলাতেও আরটিপিসিআর এবং র্যাপিড অ্যান্টিজ়েন পরীক্ষার দৈনিক লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ দিন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে ভিডিয়ো-কনফারেন্স করেন স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা। প্রতি জেলায় কোন জ়োনে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তা চিহ্নিত করা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্র ও রাজ্যের তরফে এমন উদ্যোগের পরেও প্রশ্নের মুখে সরকারি ভূমিকা। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে দেশে সংক্রমণ বাড়ছে। অথচ তার প্রায় এক মাস পরে নড়েচড়ে বসছে মোদী সরকার। প্রশ্ন উঠছে, এত দেরি কেন? পশ্চিমবঙ্গ-সহ পাঁচ
ভোটমুখী রাজ্যে যে ভাবে নির্বাচনী জনসভাগুলিতে ভিড় হচ্ছে, তাতে আগামী দিনে সেখানে পরিস্থিতি কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কিত অনেকে। কিন্তু মাস্ক, পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার মতো করোনা-বিধি পালনের বিষয়ে উদাসীন দল নির্বিশেষে বহু নেতা। থোড়াই কেয়ার ভাব কর্মী-সমর্থকদেরও। শুধু তা-ই নয়। সতর্কতা-বিধি না-মানা, মাস্ক না-পরা, উৎসব-অনুষ্ঠানে সতর্ক না-থাকার প্রবণতা সাধারণ মানুষের বড় অংশের মধ্যেও। অনেকে এখনও সচেতন না-হলেও, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। তার উপরে রয়েছে বিদেশি স্ট্রেন। এই পরিস্থিতিতে সকলে সাবধান না-হলে, আগামী এক-দেড় মাসে সংক্রমণের বড় ধাক্কা (বিশেষত ভোটমুখী রাজ্যগুলিতে) আসতে চলেছে বলে অনেকের আশঙ্কা।
লকডাউনে কার্যত আইসিইউয়ে চলে যাওয়া অর্থনীতিতে প্রাণ ফেরার লক্ষণ দেখা গিয়েছে সবে। এই অবস্থায় হয়তো চট করে দেশ জুড়ে ফের ঘরবন্দির নিদান দিতে চাইবে না কেন্দ্র। কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, এমনকি স্থানীয় বিধিনিষেধও অর্থনীতির দ্রুত ছন্দে ফেরার পথে বাধা হবে। ধাক্কা খাবে বহু জনের রুজি-রুটি। তাই তা যথাসম্ভব এড়াতে কোভিড-সতর্কতা বিধি কড়া ভাবে মেনে চলার উপরে জোর দিচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু ভোটের প্রচার থেকে চৈত্র সেলের বাজার— কোনওখানে সেই সচেতনতা তেমন চোখে পড়ছে না।
দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় সামান্য কমেছে। কিন্তু তাতে আশ্বস্ত হওয়ার জো নেই। কারণ, একে তার পরেও সেই সংখ্যা ৪০ হাজারের উপরে, আর সঙ্গে দৈনিক মৃত্যুও প্রায় ২০০। তৃতীয়ত, ব্রিটেন, ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকার করোনা স্ট্রেনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫ দিনে বেড়েছে ৩৯৫। দেশে তাতে আক্রান্ত ৭৯৫ জন। পঞ্জাবে ৪০১ জনের জিনোম সিকোয়েন্সে দেখা গিয়েছে, ব্রিটেন স্ট্রেনে আক্রান্ত ৩২৬ জন।
পশ্চিমবঙ্গে এ দিন ৪০৪ জন আক্রান্ত। কলকাতা ও উত্তর ২৪ পরগনায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এ দিন কলকাতায় ১৫৩ জন, উত্তর ২৪ পরগনায় ১২৬, হাওড়ায় ২৮, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ১৩, পুরুলিয়ায় ১১, উত্তর দিনাজপুরে ১০ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যে ভাবে রাস্তায়, বাসে-ট্রাম-অটোতে অনেকে মাস্ক না-পরে ঘুরছেন, তাতে সমস্যা ঘোরালো হচ্ছে। সঙ্গে রয়েছে ভোট-প্রচার।
বাকি দেশেও ছবি একই। উত্তরপ্রদেশের বরসানায় এক মন্দির চত্বরের ভিডিয়োয় ধাক্কাধাক্কি করে হাজার-হাজার মাস্কহীন জনতাকে লাড্ডু লুফতে দেখা যাচ্ছে। একই চিত্র ‘লাঠ মার হোলি’ অনুষ্ঠানে। তবে বৃহন্মুম্বই পুরসভা প্রকাশ্যে ও ব্যক্তিগত পরিসরে হোলি খেলা নিষিদ্ধ করেছে। দিল্লিতেও প্রকাশ্যে হোলি বন্ধ করার পাশাপাশি হোলি, নবরাত্রি এবং শবে-বরাত উপলক্ষে জমায়েত নিষিদ্ধ করেছে প্রশাসন। গুজরাতে ৭ বিধায়ক করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় বিধানসভায় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়েছে।
কন্টেনমেন্ট জোন ও তার পাশের বাফার জ়োনের বাসিন্দাদের ইনফ্লুয়েঞ্জার উপসর্গ বা শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করে দেখতে বলা হয়েছে। মন্ত্রকের নির্দেশ, কন্টেনমেন্ট এলাকায় কোভিড-বিধি বা পরীক্ষা সংক্রান্ত নিয়ম মানা হচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্বে থাকবেন জেলা আধিকারিক, পুলিশ ও পুরকর্মীরা। জোর দেওয়া হচ্ছে মাস্ক পরায়। প্রতি রাজ্য প্রশাসনকে বলা হয়েছে, খোলা জায়গায় বা কাজের জায়গায় কেউ মাস্ক না-পরলে, জরিমানা নিতে হবে। প্রতি ১০০টি পরীক্ষার মধ্যে ৭০টি আরটিপিসিআর পরীক্ষা করতে বলা হয়েছে। সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে ১৪ দিন নিভৃতবাসে রাখতে বলা হয়েছে। কেন্দ্রের মতে, সব রাজ্যে টিকাকরণের গতি সমান নয়। ফলে, সংক্রমণের শৃঙ্খল ভাঙা যাচ্ছে না। তাই প্রতি রাজ্যে টিকাকরণের হার বাড়াতে বলা হচ্ছে। বিশেষত দেখতে বলা হচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মী, ফ্রন্টলাইন ওয়ার্কার ও প্রবীণদের যাতে তা দেওয়া দ্রুত শেষ হয়।
উত্তর ২৪ পরগনায় দৈনিক ১২০০ আরটিপিসিআর, ৮০০ র্যাপিড অ্যান্টিজ়েন, হাওড়ায় ৭০০ আরটিপিসিআর এবং ৩০০ র্যাপিড অ্যান্টিজ়েন পরীক্ষা করতে হবে। র্যাপিড অ্যান্টিজ়েনের রিপোর্ট ২ ঘণ্টায় পাওয়া যায়। তাই অন্তঃসত্ত্বা, সঙ্কটজনক রোগীকে ওই পরীক্ষা করতে হবে। সূত্রের খবর, এ দিন বৈঠকেও রাজ্যের স্বাস্থ্যকর্তারা কলকাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, পশ্চিম বর্ধমানের উপরে বিশেষ জোর দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy