ফাইল চিত্র।
কমবেশি দশ বছর আগে পার্ক স্ট্রিটে ধর্ষণের যে-ঘটনা আলোড়ন তুলেছিল, এত দিন পরে তা নতুন মোড় নিয়েছে। সেই মামলার প্রধান অভিযুক্ত কাদের খানের বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন ধর্ষিত যুবতী যে-বয়ান দিয়েছিলেন, সাক্ষ্য হিসেবে তা ব্যবহার করা যাবে না বলে কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী শুক্রবার তাঁর নির্দেশে জানিয়ে দিয়েছেন।
পুরনো বয়ানের প্রসঙ্গ ওঠার কারণ, সেই যুবতী ২০১৫ সালে মারা গিয়েছেন। কাদের ধরা পড়েছে তারও বছরখানেক পরে। ফলে কাদেরের বিচার পর্বে সেই যুবতীর পক্ষে সশরীরে হাজির থেকে বয়ান দেওয়া সম্ভব নয়। ব্যাঙ্কশাল কোর্টে পুলিশের আবেদন ছিল, এর আগে এই ঘটনায় ধৃত চার জনের বিচার চলাকালে নির্যাতিতা যে-সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, সেটাই কাদেরের বিচার পর্বে ব্যবহার করা হোক। নিম্ন আদালতের বিচারক সেই আবেদন মঞ্জুরও করেছিলেন।
তার বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আবেদন করে কাদের। ওই অভিযুক্তের কৌঁসুলি রাজদীপ মজুমদার এ দিন বলেন, “পুলিশ তো জানত যে, কাদের অধরা। তা হলে যুবতীর মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই কেন আবেদন করে বলা হয়নি যে, তাঁর পুরনো বয়ানকে ব্যবহার করা হবে। কাদের ধরা পড়ে ২০১৬ সালে। কাদেরের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০১৮-য়। তখন পুলিশ আদালতে এক আবেদনে জানায়, যুবতীর পুরনো বয়ান ব্যবহার করা হবে।” আইনজীবীদের মতে, কাদেরের বিচার পর্বে যদি নির্যাতিত যুবতীরই সাক্ষ্য না-থাকে, বিষয়টি হালকা হয়ে যেতে পারে মামলা।
তৃণমূল কংগ্রেস তখন সবে রাজ্যের ক্ষমতায় এসেছে। ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি। সন্ধ্যায় ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটে গাড়ির ভিতরে ওই যুবতীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে পাঁচ যুবকের বিরুদ্ধে। আলোড়ন পড়ে যায় সারা বাংলায়। সেই সময় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে ‘ছোট ঘটনা’ বলে অভিহিত করায় সরব হয় বিরোধী শিবির। তদন্তে নামেন পুলিশকর্ত্রী দময়ন্তী সেন। চার অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়। ২০১৩ সালে সেই চার জনের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং ১০ বছরের সাজা ঘোষণা করা হয় ২০১৫-র ১০ ডিসেম্বর।
সেই মামলায় নির্যাতিত যুবতীর সাক্ষ্য ছিল সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নথি। কারণ, গাড়ির ভিতরে ধর্ষণের সেই ঘটনায় দ্বিতীয় কোনও সাক্ষীর থাকার সম্ভাবনা ছিল না। ২০১২ সাল থেকে চার আসামির সাজার মেয়াদ শুরু হয়। তাই সেই শাস্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় তারা ছাড়াও পেয়ে গিয়েছে।
ধর্ষণ কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত ছিল কাদের। এক অভিনেত্রীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সেই যুবক ঘটনার পর থেকে ফেরার ছিল। ২০১৫ সালে মারা যান যুবতী। কাদের ধরা পড়ে ২০১৬ সালে। ২০১৮-য় তার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পরে স্বাভাবিক ভাবেই সেই যুবতীর সাক্ষ্যের কথা ওঠে। আগে চার অভিযুক্তের বিচার প্রক্রিয়া চলার সময় তিনি যে-সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, কাদেরের বিচার পর্বে সেটাকেই ব্যবহার করার আর্জি জানায় পুলিশ। এ দিন হাই কোর্টে সেই আবেদনটাই খারিজ হয়ে গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy