Advertisement
২৩ জানুয়ারি ২০২৫
‘এনকাউন্টার’ বিতর্ক
Rajeev Kumar

বার্তা দিতে আটঘাট বেঁধেই কড়া পথে রাজীবের পুলিশ

কোর্ট লক-আপে এক শাগরেদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পেয়ে জেলে ফেরার পথে গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়ায় পুলিশের উপরে গুলি চালিয়ে পালিয়েছিল সাজ্জাক আলম।

রাজীব কুমার।

রাজীব কুমার। —ফাইল চিত্র।

সন্দীপন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০২৫ ০৫:৫২
Share: Save:

আলিপুরদুয়ারে গত বছর অক্টোবরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ নিয়ে শোরগোল চলছে, সেই সময়ে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, ‘‘যত দিন এই মুখ্যমন্ত্রী ক্ষমতায় রয়েছেন, তত দিন এমন ঘটনা ঘটবে। যোগী-রাজ্যে এমন কিছু ঘটলে আদালত পর্যন্ত যেতে হত না। রাস্তাতেই পুলিশি ব্যবস্থা নিয়ে নিত!’’

উত্তরবঙ্গেরই উত্তর দিনাজপুরে পুলিশের গুলিতে এক দুষ্কৃতীর মৃত্যুর পরে সেই সুকান্তের মন্তব্য, ‘'গোয়ালপোখরে পুলিশ এনকাউন্টার করে এক কুখ্যাতকে মেরেছে। ভাবতাম, থ্রি নট থ্রি বন্দুকগুলো চলে না! দেখে খুশি হয়েছি যে, পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ গুলি চালাতে জানে। কম সে কম গুলি তো চালাতে পেরেছে!’’

কয়েক মাসের মধ্যে এই পরিবর্তিত প্রতিক্রিয়া তৈরি করে দিয়েছে রাজ্য পুলিশ। সৌজন্যে ‘এনকাউন্টার’! যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যের বহুচর্চিত কৌশল এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জমানাতেও দেখা যাবে কি না, শুরু হয়ে গিয়েছে সেই চর্চা। অভিযুক্তের বিচার আইনি পথেই হওয়া উচিত, নাকি ‘বিচার’ দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশ নিজের হাতে তুলে নিতে পারে, সেই পুরনো বিতর্কও ফের সক্রিয়। তবে পুলিশ-প্রশাসনের শীর্ষ সূত্রের ইঙ্গিত, কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত হয়েছে সব রকম ভাবনা-চিন্তা করেই। সেই অর্থে বলতে গেলে আটঘাট বেঁধেই গোয়ালপোখরে ‘এনকাউন্টার’ করেছিল পুলিশ।

কোর্ট লক-আপে এক শাগরেদের কাছ থেকে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে পেয়ে জেলে ফেরার পথে গোয়ালপোখরের পাঞ্জিপাড়ায় পুলিশের উপরে গুলি চালিয়ে পালিয়েছিল সাজ্জাক আলম। সেই ঘটনায় আহত পুলিশকর্মীদের দেখতে উত্তরবঙ্গে গিয়েছিলেন রাজ্য পুলিশের ‘ভারপ্রাপ্ত’ ডিজি রাজীব কুমার। সেখানেই তিনি বলে এসেছিলেন, পুলিশের উপরে এক রাউন্ড গুলি চললে পুলিশ পাল্টা চার রাউন্ড চালাবে! তার দু’দিনের মধ্যে পলাতক সাজ্জাকের মৃত্যু হয় পুলিশের গুলিতে। শেষ পর্যন্ত যোগী-রাজ্যের দাওয়াই এই রাজ্যেও প্রয়োগ শুরু হল কি না, সেই প্রশ্নে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক। পুলিশি পদক্ষেপের বিরোধিতায় সরব হয়েছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। পুলিশের গুলিতে সাজ্জাকের মৃত্যুর ঘটনারপ সিআইডি তদন্তও শুরু হয়েছে নিয়ম মেনে।

রাজ্য পুলিশের এক প্রথম সারির কর্তার মতে, ‘‘পুলিশ কোথাও মাত্রা ছাড়ায়নি। যে কোনও সাধারণ অভিযুক্তের ক্ষেত্রেও কিছু করা হয়নি। প্রথমত, ওই দুষ্কৃতী ওই পুলিশের উপরে গুলি চালিয়ে পলাতক ছিল। দ্বিতীয়ত, পরে যখন তার গতিবিধি জেনে পুলিশ ঘিরে ফেলেছিল, সে দিন ছাড়া পেয়ে গেলে সে বাংলাদেশে পালিয়ে যেত। এর কোনওটাই পুলিশ বাহিনীর জন্য কাঙ্ক্ষিত ছিল না।’’ রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ সূত্রেরও বক্তব্য, ‘‘আক্রমণের মুখে পড়লে পুলিশ টেবিলের তলায় লুকোয়, এই ভাবমূর্তি প্রচার হয়ে গিয়েছে এই রাজ্যে। পুলিশ কড়া হাতে পরিস্থিতি মোকাবিলা না-করলে বাহিনীর মনোবল আরও ধাক্কা খাবে, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কেও ভুল বার্তা যাবে।’’ তবে প্রশাসনেরই কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, অভিযুক্ত সাজ্জাকের দেহের নিম্নাংশে গুলি চালিয়েও পুলিশ তাকে কাবু করতে পারতো। ‘চরম’ পথে যাওয়া হয়েছে দুষ্কৃতীদের মধ্যে পুলিশ সম্পর্কে ভয় ধরানোর লক্ষ্যেই।

পুলিশ ও প্রশাসনিক মহলে ব্যাখ্যা মিলছে, ‘ডাকাবুকো’ আইপিএস রাজীব সেই স্পেশ্যাল টাস্ক ফোর্সে (এসটিএফ) থাকার সময় থেকেই বাহিনীর প্রতি সহমর্মী। গোয়ালপোখরেও পুলিশ আক্রান্ত হওয়ার পরে তিনি আহতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়েছেন এবং কড়া সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। যাতে তাঁর বাহিনীর মনোবল অটুট থাকে। আবার পাশাপাশি প্রশাসনিক শিবিরের এক সূত্রেই ব্যাখ্যা, সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে অবাধ বিচরণের কারণে ডিজি-র নানা সিদ্ধান্তে ইদানিং ‘পছন্দ-অপছন্দ’ বাছবিচারের অভিযোগ আছে এবং তার জেরে পুলিশের অন্দর মহলে ‘অসন্তোষ’ও আছে। নিচু তলার পুলিশের পাশে দাঁড়িয়ে পুলিশের শীর্ষ কর্তা এক ঢিলে সেই পাখিও মারতে চেয়েছেন!

অঙ্ক কষে সিদ্ধান্ত হলেও এর পরে থাকছে রাজনৈতিক চর্চা। ‘এনকাউন্টারে’র পক্ষে একাধিক বার সওয়াল শোনা গিয়েছে শাসক দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিশেষ আস্থাভাজন’ ডিজি কি শেষ পর্যন্ত সেই পথের পথিক হচ্ছেন? রাজ্য প্রশাসনের এক সূত্রের বক্তব্য, ‘‘অতীতে মুম্বই পুলিশ, পরে গুজরাত, তেলঙ্গানা বা উত্তরপ্রদেশ যা বারবার করে বিতর্কে জড়িয়েছে, এখানে সেটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। চূড়ান্ত নিয়ন্ত্রণ মুখ্যমন্ত্রীর হাতেই। ডিজি দক্ষ অফিসার, না-বুঝে কিছু করছেন না!’’

অন্য বিষয়গুলি:

WB Police Encounter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy