রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আসার জন্য ডিভিসি-র বিরুদ্ধে প্রায় যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডিভিসি-র কমিটি থেকে রাজ্যের সেচ দফতরের প্রতিনিধিরা সরে দাঁড়িয়েছেন। ‘ম্যান মেড বন্যা’র তত্ত্ব সামনে রেখে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে স্বর উচ্চ গ্রামে তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু সরকারি তথ্যই হাতিয়ার করে বিরোধীদের পাল্টা দাবি, আর জি কর-কাণ্ডের প্রেক্ষিতে চিকিৎসকদের ধর্না-আন্দোলন ও নাগরিক প্রতিবাদ থেকে নজর ঘোরানোর জন্যই রাজ্য সরকার জল নিয়ে ‘মিথ্যাচার’ করছে।
রাজ্যের অভিযোগ, তাদের না-জানিয়েই জল ছেড়েছে ডিভিসি। কিন্তু জল ছাড়া হতে পারে বলে ৮টি জেলার প্রশাসনকে সতর্ক করে দেওয়া রাজ্যের সেচ দফতরের চিঠি মঙ্গলবারই প্রকাশ্যে এসেছে। বিরোধীরা তা নিয়ে সরব। এরই মধ্যে আরও তথ্য দিয়ে রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ডিভিসি-র উপরে দোষ চাপানো ছাড়াও রাজ্য সরকার নিজেদের বাঁধ থেকে জল ছেড়েছে সহনশীলতার সীমা অতিক্রম করার আগেই। তাঁদের অভিযোগ, এই গোটা প্রক্রিয়ারই উদ্দেশ্য আর জি করের প্রতিবাদ থেকে সমাজ ও রাজনীতির দৃষ্টি বন্যার দিকে টেনে নেওয়া।
বাঁধের জল ছাড়ার ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে দু’টি স্তর থাকে। একটি ‘কনজ়ারভেশন লেভ্ল’। যার মানে জলসীমা সহনশীলতার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে। আর একটি ‘ফুল রিজ়ার্ভার লেভ্ল’। যে মাত্রায় পৌঁছে বাঁধ আর জল ধরে রাখতে পারে না। ডিভিসি এবং রাজ্য সেচ দফতরের সূত্র পাশাপাশি রেখে এই বিষয়েই প্রশ্ন তুলেছেন জগন্নাথ। ডিভিসি-র তথ্যে দেখা যাচ্ছে, তাদের মাইথন ও পাঞ্চেত বাঁধে জল ‘ফুল রিজ়ার্ভার লেভ্ল’-এ পৌঁছেছিল। তখন জল ছাড়া হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘ময়ূরাক্ষীর ম্যাসাঞ্জোর, অজয়ের হিংলো, তেনুঘাট, কংসাবতীর মুকুটমণিপুর, সুবর্ণরেখার চান্ডিল বাঁধ থেকে রাজ্য সরকার জল ছেড়েছে কিন্তু ওই মাত্রায় পৌঁছনোর আগেই। তার দায় কার?’’ বিজেপি নেতার বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীকে লেখা মুখ্যমন্ত্রীর চিঠিতে ১০টি জেলার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা আছে। ডিভিসি-র মাইথন, পাঞ্চেত, দুর্গাপুর ব্যারেজ থেকে যে জল ছেড়েছে, তাতে পূর্ব বা পশ্চিম মেদিনীপুর প্লাবিত হবে কী ভাবে? এর কারণ, রাজ্যের হাতে থাকা বাঁধ থেকে জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছে এবং সেটাও এমন সময়ে যখন আরও কিছুটা জল ধরে রাখা যেত। ডাক্তারদের সঙ্গে প্রথম বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী জল ছাড়া ও বন্যা পরিস্থিতির কথা বলেছিলেন। তখনই হয়তো পরিকল্পনাটা হচ্ছিল।’’
রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া অবশ্য কেন্দ্রের দিকেই আঙুল তুলছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘কতটা জল ছাড়া হবে, কী ভাবে, কত সময়ের মধ্যে তা ছাড়া হতে পারে, কেন্দ্রীয় সরকার কি তা আমাদের জানিয়েছে? জল ছাড়া হবে, সেটা সবাই জানে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং ডিভিসি এ ভাবে নিজেদের দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে পারে না। এটা অত্যন্ত অসহযোগী মনোভাব। রাজ্যকে ডুবিয়ে মারছে!’’
জল-কাণ্ডে রাজ্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে সব বিরোধী দলই। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকারের নামে অপপ্রচার বন্ধ করুন মুখ্যমন্ত্রী। আপনাকে আর কেউ বিশ্বাস করে না, করবে ও না!’’ কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরীর মতে, ‘‘এখন যে সব তথ্য সামনে আসছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে রাজ্য সরকার ইচ্ছাকৃত ভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। রাজ্যের দফতরের নিজেদের তথ্যেই সেটা দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী নজর ঘোরাতে চাইছেন। জল ছাড়া নিয়ে যা চলছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।’’ প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তিনি। সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘ডিভিসি-র তথ্য, রাজ্যের নিজের দফতরের চিঠি এবং তথ্য, সবই গোলমাল ধরিয়ে দিচ্ছে! মুখ্যমন্ত্রী নাটক-বাজি করে দৃষ্টি ঘোরাতে চান আন্দোলন থেকে। এতেই উনি অভ্যস্ত।’’
ডিভিসির একটি সূত্রের খবর, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তরফে শ্রমিক-কর্মীদের উদ্দেশে একটি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যের কিছু অংশে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই সব দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের সাহায্যে এক দিনের মূল বেতন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দান করার অনুরোধ জানানো হয়েছে সেখানে। যাঁরা এই দান করতে রাজি নন, তাঁদেরকে আজ, বৃহস্পতিবারের মধ্যে ‘ই-মেল’ করে কারণ জানাতে বলা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy