ফাইল চিত্র।
গত বছরের শেষে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ প্রকল্পকে রাজ্যের প্রত্যেক বাসিন্দার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘দুয়ারে সরকার’ কর্মসূচির শিবিরে এই প্রকল্পের সুবিধা চেয়ে মানুষের ঢল নেমেছে। ক্রমেই বাড়ছে রোগীর চাপ। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে খরচের বোঝাও। বাজেটের উপরে তাই বরাদ্দ করতে হচ্ছে অতিরিক্ত আড়াই হাজার কোটি টাকা। স্বাস্থ্যসাথীর খরচ শেষ পর্যন্ত কোন অঙ্কে পৌঁছবে, তা নিয়ে প্রশাসনের অন্দরে জোর চর্চা চলছে। প্রশাসনিক সূত্রের খবর, এখন প্রতিদিন গড়ে তিন হাজার রোগীকে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিতে হচ্ছে। চিকিৎসার বিল মেটাতে রোজ খরচ কমবেশি ছ’কোটি টাকা।
এখন যাঁরা সুবিধা নিতে যাচ্ছেন, তাঁদের ২৫ শতাংশ সম্পূর্ণ নতুন। দুয়ারে সরকার কর্মসূচিতে নাম নথিভুক্ত করিয়েছেন তাঁরা। সেই কর্মসূচির চতুর্থ পর্বের শেষে পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে, আধিকারিক মহল তাতে বিস্মিত। কারণ, পঞ্চম পর্ব বাকি থাকতেই উপভোক্তার সংখ্যা বিপুল। সংখ্যাটা আরও বাড়তে পারে বলেই অনুমান করা হচ্ছে। ক্রমবর্ধমান উপভোক্তার চাপ সরকার নেবে কী ভাবে নেবে, সেই প্রশ্ন বড় হয়ে উঠছে। আধিকারিকেরা জানান, আগে প্রকল্পের একাংশ বিমার আওতায় ছিল। ফলে সরকারকে শুধু প্রিমিয়াম দিতে হত। এখন উপভোক্তার চিকিৎসা বাবদ যা খরচ (পরিবার-পিছু বছরে পাঁচ লক্ষ টাকা) হবে, তার পুরোটাই দেবে রাজ্য সরকার।
প্রশাসনের আশঙ্কা, এর উপরে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমে চিকিৎসার সরকারি দর পরিমার্জন করা হলে রাজ্যের আর্থিক বোঝা এক ধাক্কায় আরও অনেকটা বেড়ে যাবে। চলতি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য দফতরের নির্ধারিত বাজেটের বাইরে টাকা বরাদ্দ করতে হয়েছে রাজ্যকে। সামনে বিধানসভা ভোট। তার আগে কেন্দ্রের পূর্ণ বাজেট হলেও রাজ্যে ভোট-অন অ্যাকাউন্টের সম্ভাবনা রয়েছে। এই প্রকল্পে খরচ ও তার নিরিখে বরাদ্দের প্রতিফলন তাতে থাকতে পারে বলে আধিকারিক মহলের ধারণা।
রাজ্যের প্রতিটি বেসরকারি হাসপাতালে, নার্সিংহোমে স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা নিশ্চিত করতে চাইছে সরকার। রাজারহাটের বেসরকারি ক্যানসার হাসপাতালকেও সম্প্রতি এর অধীনে আনা হয়েছে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের কার্ড বা ইউনিক রেজিস্ট্রেশন নম্বর (কার্ড পাওয়ার আগে পর্যন্ত) থাকলে রোগী ফেরানো যাবে না বলে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিকে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। ওই সব প্রতিষ্ঠানের দাবি মেনে চিকিৎসার সরকারি দর পুনর্বিবেচনার আশ্বাসও দিয়েছে সরকার।
২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী রাজ্য জুড়ে চলা প্রায় ২৬ হাজার শিবিরে অন্তত এক কোটি ২৯ লক্ষ ৬৬ হাজার মানুষের বিভিন্ন পরিষেবা নিশ্চিত করেছে সরকার। শীর্ষে রয়েছে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্প। ওই দিন পর্যন্ত অন্তত ৭৬ লক্ষ ২৬ হাজার আবেদনকারীকে ওই প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। গত বুধবার থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে দুয়ারে সরকারের পঞ্চম পর্ব। এই সময়ের মধ্যে আরও বহু মানুষকে স্বাস্থ্যসাথীর সুবিধা দিতে হবে। এখনকার হিসেব অনুযায়ী দৈনিক প্রায় ছ’কোটি টাকা খরচের হার একই থেকে গেলে আগামী এক বছরে রাজ্যকে কমবেশি ২২০০ কোটি টাকা খরচ করতে হবে। এর পরে চিকিৎসার দর এবং প্রকল্পের সুবিধা গ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়লে খরচের বহর কোথায় পৌঁছবে, সেটাই আধিকারিক মহলের চিন্তা বাড়াচ্ছে।
এক প্রশাসনিক কর্তা অবশ্য বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য দফতরের জন্য বরাদ্দ বরাদ্দের বাইরেও প্রায় ২৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে সরকার। এই টাকা স্বাস্থ্যসাথীর পরিষেবা দিতে কাজে লাগবে। পরে আরও যে-অর্থ লাগবে, তারও ব্যবস্থা করবে সরকার।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy