ফাইল চিত্র।
বিধানসভা ভোটের মুখে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে কলকাতা হাইকোর্টের একক বেঞ্চের স্থগিতাদেশের ফলে বড় ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য সরকার। নির্বাচনী উত্তাপ যখন সপ্তমে, সেই সময়ে উচ্চ আদালতের ডিভিশন বেঞ্চ স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়ায় সরকার আপাতত খানিকটা স্বস্তি পেল বলেই রাজনৈতিক ও শিক্ষা শিবিরের অভিমত। স্বস্তি পেলেন কয়েক হাজার চাকরিপ্রার্থীও, যাঁদের ভবিষ্যতের সামনে প্রশ্নচিহ্ন ঝুলে গিয়েছিল।
বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ বৃহস্পতিবার একক বেঞ্চের স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি শর্ত আরোপ করেছে। নিয়োগপত্র পাওয়া প্রার্থীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত জানান: হাইকোর্টের শর্ত অনুযায়ী, প্রথমত, দু’সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সদর, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের কার্যালয় এবং জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পরিদর্শকের দফতরে মেধা-তালিকা টাঙিয়ে দিতে হবে। সেই তালিকা যাতে সবাই দেখতে পান, করতে হবে তার ব্যবস্থাও। দ্বিতীয়ত, যে-সব প্রার্থী নিয়োগে গরমিলের অভিযোগ তুলে মামলা করেছেন, তাঁদের জন্য পদ খালি রেখে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে হবে, যাতে যোগ্যতামান পেরোলে শিক্ষকপদে তাঁরাও নিযুক্ত হতে পারেন। তৃতীয়ত, যাঁদের নিয়োগ করা হবে, তাঁদের নিয়োগপত্রে পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিতে হবে যে, ‘এই চাকরি মামলার ভবিষ্যতের উপরে নির্ভরশীল।’
আদালত সূত্রের খবর, নিয়োগে গরমিলের অভিযোগ তুলে এমন শ’পাঁচেক প্রার্থী মামলা করেছেন, যাঁদের নাম মেধা-তালিকায় ওঠেনি। সেই মামলাতেই বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ এই নিয়োগ প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ দেন। সেই নির্দেশের ফলে যে-সব প্রার্থী নিয়োগপত্র পেয়ে গিয়েছিলেন, আতান্তরে পড়েন তাঁরাও। বিচারপতি ভরদ্বাজের রায়ের বিরুদ্ধে ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন জানায় প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। নিয়োগপত্র পাওয়া চাকরিপ্রার্থীদের একাংশও সেই মামলায় যুক্ত হন।
এ দিন ডিভিশন বেঞ্চে মামলার আবেদনকারী চাকরিপ্রার্থীদের হয়ে সওয়াল করেন আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য ও বিক্রম বন্দ্যোপাধ্যায়। পর্ষদের কৌঁসুলিও বক্তব্য পেশ করেন। নিয়োগপত্র পাওয়া প্রার্থীদের আইনজীবীরও বক্তব্য শোনে ডিভিশন বেঞ্চ। সব পক্ষের বক্তব্য শুনে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে কয়েকটি নির্দেশ পালন করতে হবে পর্ষদকে।
হাইকোর্টের খবর, স্থগিতাদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আপিল মামলা হয়েছিল। তাই স্থগিতাদেশ খারিজ হয়ে গেলেও মূল মামলাটি এখনও বহাল রয়েছে। সেই মামলায় এর আগেই হলফনামা তলব করেছেন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজ। ডিভিশন বেঞ্চও এ দিন জানিয়েছে, মূল মামলাটির নিষ্পত্তি হবে বিচারপতি ভরদ্বাজের এজলাসেই।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট নিয়ে রাজ্যে কয়েক বছর ধরেই টালবাহানা চলছে। ২০১৪ সালে টেট নেওয়ার পরেও নিয়োগ হচ্ছিল না। গত ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে পর্ষদ। কিন্তু তাতেও আইনি জটিলতা কাটেনি। ইন্টারভিউয়ে বসার সুযোগ চেয়ে মামলা হয়। আদালতের নির্দেশে অফলাইনে আবেদনপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পান মামলাকারীরা। নিয়োগ-প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পরেও জট কাটেনি। মেধা-তালিকা প্রকাশ নিয়ে গরমিলের অভিযোগ ওঠে। আবার মামলা হয়। সরকারি সূত্রের খবর, ১৬,৫০০ শিক্ষকপদের মধ্যে ১৫,২৮৪ জনের নিয়োগ হয়েছিল। কিন্তু হাইকোর্টের স্থগিতাদেশের জেরে তাঁদের নিয়োগও আটকে যায়।
নিয়োগপত্র পাওয়া প্রার্থীদের একাংশের প্রশ্ন, নির্ধারিত যোগ্যতামান পেরিয়েই তাঁরা চাকরি পেয়েছেন। তা হলে পর্ষদের ‘ত্রুটির’ জেরে তাঁরা বিপাকে পড়বেন কেন? নিয়োগের উপরে স্থগিতাদেশ বলবৎ হলে তাঁদের বেতনও বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা।
অন্য দিকে, মামলাকারী অনেক প্রার্থীর বক্তব্য, ভোটের আগে শেষ নিয়োগেও নানা ‘অস্বচ্ছতা’ রয়েছে। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগকে ঘিরে গত কয়েক বছরে যে-ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা থেকেই এই অস্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন জেগেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy