লাভার্থীদের খুঁজে বার করতে জেলায় জেলায় ‘কল সেন্টার’ খোলার কাজ সেরে ফেলেছে রাজ্য বিজেপি। —প্রতীকী ছবি।
প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর ‘হ্যাটট্রিক’ চাই। আর তার জন্য আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে কোনও চেষ্টাতেই ত্রুটি রাখতে চাইছে না বিজেপি। গোটা দেশেই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের লাভ পাওয়া সুবিধাভোগীদের (লাভার্থী) ভোট পদ্মের ঝুলিতে টানাই প্রধান লক্ষ্য। সেই মতো প্রস্তুতি গোটা দেশের সঙ্গে বাংলাতেও। ইতিমধ্যে লাভার্থীদের খুঁজে বার করতে জেলায় জেলায় ‘কল সেন্টার’ খোলার কাজ সেরে ফেলেছে রাজ্য বিজেপি। সম্প্রতি কলকাতায় দলের বর্ধিত কার্যকারিণী বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হয়। এর পরে লোকসভা ভোট পরিচালন কমিটির প্রথম বৈঠকেও কেমন ভাবে ‘কল সেন্টার’ কাজ করবে তা বিস্তারিত জানানো হয়েছে দলের নেতাদের।
এমনিতে রাজ্য বিজেপির ‘কল সেন্টার’ বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন সঞ্জয় সিংহ। কিন্তু সেটা সারা বছরের জন্য। লোকসভা নির্বাচনে সেই কাজ আরও বড় আকারে করার পরিকল্পনায় সঞ্জয়কে দু’জন সহযোগীও দেওয়া হয়েছে। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এখন থেকে ভোট পর্যন্ত এই বিভাগের দায়িত্বে সঞ্জয়ের সঙ্গে থাকবেন দলের নেতা ঋত্বিক পাল এবং কিশোর কর। যা ঠিক হয়েছে তাতে কলকাতার দুই রাজ্য দফতরে ছাড়াও কল সেন্টার হবে ১৬টি জেলায়। আটটি জেলা দফতরেই হবে কল সেন্টারের কার্যালয়। সেখান থেকেই ফোন করবেন কর্মীরা। এই কর্মীরা আবার বিজেপির নিজস্ব নয়। এর জন্য মুম্বইকেন্দ্রিক ভোট-কুশলী সংস্থা ‘জার্ভিস টেকনোলজি অ্যান্ড কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেড’এর সহায়তা নিচ্ছে বিজেপি। সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে ইতিমধ্যেই রাজ্যে প্রায় ১,৪০০ কর্মী তাঁরা বিজেপির জন্য নিয়োগ করেছেন।
আটটি জেলায় দফতর তৈরি করে কাজ করলেও জার্ভিসের যা পরিকল্পনা তাতে বাকি সর্বত্র ‘প্লাগ অ্যান্ড প্লে’ পদ্ধতিতে কাজ হবে। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট কোনও জায়গায় না বসেও কাজ করবেন ওই কর্মীরা। গ্রামগঞ্জের যে কোনও জায়গা থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা যাবে। আবার বিজেপি কর্মী বা লাভার্থীদের ফোন করা যাবে। এই পদ্ধতিতে যে কোনও কথোপকথনের রেকর্ডিং পৌঁছে যাবে মূল সার্ভারে। সেখান থেকে তথ্য নিয়ে নিতে পারবে কলকাতা বা দিল্লির কেন্দ্র।
ওই সংস্থা যা ঠিক করেছে তাতে প্রতিটি লোকসভা আসনের জন্য ২৫ জন করে কর্মী নিযুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি দলের উপরে এক জন প্রধান থাকবেন। অর্থাৎ ৪২টি আসনের জন্য ২৬ জন করে মোট ১,০৯২ কর্মী কাজ করবেন। বাকিরা কলকাতার মূল দফতরে। আগামী দিনে কর্মীসংখ্যা বাড়ানো হতে পারেও বলে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই নিযুক্ত কর্মীরা কাজ শুরু করে দিয়েছেন। বুথ স্তরে ফোন করা চলছে।
প্রাথমিক ভাবে বিজেপির বসে যাওয়া কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করাই হবে কলারদের মূল কাজ। একটা সময়ে মিস্ড কল দিয়ে বিজেপির সদস্য হওয়ার সুযোগ দিয়েছিল গেরুয়া শিবির। সেই সময়ে এক কোটির বেশি সদস্য হয় বিজেপির। যাঁদের বড় অংশই দীর্ঘ দিন দলের কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। এঁদের ফোন করে কথা বলবেন জার্ভিসের কর্মীরা। এর পরে দলের পক্ষেও ওই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। কারও কোনও বিষয়ে অভিমান থাকলে তা মিটিয়ে ফেলার কাজও হবে। এই কাজটা বিজেপি জানুয়ারি মাসের মধ্যেই শেষ করতে চাইছে।
এর পাশাপাশি এই রাজ্যের প্রায় তিন কোটি মানুষ বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা বা লাভ পান বলে বিজেপির হিসাব। সেই সব মানুষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হবে কল সেন্টার থেকে। তাঁরা কোন লোকসভা এলাকার বাসিন্দা, কোন কোন প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন তা জানা হবে ফোন করে। প্রকল্পটি যে কেন্দ্রীয় সরকারের তা বোঝানোর পাশাপাশি কেন্দ্রের অন্য যে সব প্রকল্প রাজ্যে কার্যকর নয় তার বিবরণও দেওয়া হবে। কল সেন্টারের তথ্য নিয়ে বিজেপি কর্মীরাও যাবেন লাভার্থীদের বাড়িতে। বিজেপি ইতিমধ্যেই এর জন্য রাজ্য স্তরে বিশেষ কমিটি তৈরি করেছে। যার প্রধান করা হয়েছে হুগলির সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক লকেট চট্টোপাধ্যায়কে। বিজেপি কর্মীরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাভার্থীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন কি না, তা-ও কল সেন্টার খোঁজ নেবে। বিজেপির যা অঙ্ক তাতে, এক জন লাভার্থী গড়ে চার জন ভোটারকে প্রভাবিত করবেন। লাভার্থীর পরিবারের সব ভোটও পাওয়া যেতে পারে। এই কাজটি গুরুত্ব দিয়ে করার জন্য বিজেপি কর্মীদের কাছে নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্য নেতৃত্ব। জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ‘লাভার্থী সম্পর্ক’ চালিয়ে যেতে হবে বলে নির্দেশ রয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরও। এর পরে লোকসভা ধরে ধরে ধার্মিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, ক্রীড়া এবং অবসরপ্রাপ্ত সেনকর্মীদের সঙ্গেও একই ভাবে যোগাযোগের পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপির।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy