গ্রেফতার হওয়ার সময়ে পার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন জানতে পেরে বিষয়টিকে ‘অবাঞ্ছিত’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে জানিয়ে দিলেন অসন্তুষ্ট দলীয় নেতৃত্ব। ফাইল চিত্র
গ্রেফতারের পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দূরত্ব তৈরির বার্তা দিতে শুরু করল তৃণমূল কংগ্রেস। দল ও সরকারের পদে রেখেও রবিবার সেই দূরত্ব স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। গ্রেফতার হওয়ার সময়ে পার্থ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ফোন করেছিলেন জানতে পেরে বিষয়টিকে ‘অবাঞ্ছিত’ এবং ‘অপ্রয়োজনীয়’ বলে জানিয়ে দিলেন অসন্তুষ্ট দলীয় নেতৃত্ব। তবে পার্থের সঙ্গে তাঁর দল দূরত্ব বাড়াতে চাইলেও শাসক দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে কাঠগড়ায় তুলতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। নিয়োগ-দুর্নীতির অভিযোগে দলের মহাসচিব তথা মন্ত্রী পার্থের বাড়িতে ইডি-র তল্লাশিকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ বলেই প্রথমে চিহ্নিত করেছিল তৃণমূল। কিন্তু তার পরে এই ঘটনায় ক্রমশ অবস্থান বদল করেছেন দলীয় নেতৃত্ব। তবে এই ঘটনায় যাবতীয় জবাবদিহির দায় পার্থের উপরে দিলেও তাঁর বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করতে চাননি তাঁরা। তবে ‘অ্যারেস্ট মেমো’য় পার্থ মুখ্যমন্ত্রীর নাম ও ফোন নম্বর লেখানোয় এ দিন দূরত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছে তৃণমূল। এই প্রেক্ষাপটে দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘ইডি-র কোনও তথ্যপ্রমাণ আদালতে মান্যতা পেলে দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। সে ক্ষেত্রে তিনি যত বড় নেতাই হোন না কেন।’’ ইডি-র হানা এবং গ্রেফতার প্রসঙ্গে তাঁর কথা, ‘‘তৃণমূল কাউকে অন্যায় করতে বলেনি। দল এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ভাবে জড়াবে না।’’সূত্রের খবর, নিয়ম মেনে শনিবার ভোররাতে গ্রেফতারের আগে ইডি-র আধিকারিকেরা পার্থের কাছে জানতে চান, তিনি কাউকে সে খবর জানাতে চান কি না। তখন মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করতে চান পার্থ। রাতে তিন বার এবং সকালে এক বার চেষ্টা করলেও মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি পাননি। তবে সেই সূত্রেই ইডি-র নথিতে (অ্যারেস্ট মেমো) মুখ্যমন্ত্রী ও একটি ফোন নম্বর লেখা হয়। দলীয় সূত্রে খবর, তাতেই পার্থের উপরে ক্ষুব্ধ তৃণমূল। কুণালের বক্তব্য, ‘‘এটা হয়ে থাকলে তা অবাঞ্ছিত এবং অপ্রয়োজনীয়। মুখ্যমন্ত্রী এ সবের কিছুই জানেন না।’’
তৃণমূল নেতৃত্বের বক্তব্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘এতেই অসন্তুষ্ট হলে চলবে? পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাজত-যাত্রায় তো এই ঘটনা শেষ নয়। কানের উপরে মাথাটা ধরতে হবে। অনেক গভীর পর্যন্ত যেতে হবে। কালীঘাট ঘিরতে হবে।’’ মুর্শিদাবাদের ফরাক্কায় চাষের জমি জোর করে কেড়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগের প্রতিবাদে গণ-কনভেনশনে যোগ দিতে গিয়ে সিপিএমের আইনজীবী-সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ না হলে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর মতো মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্তও তদন্ত পৌঁছনো উচিত। বিকাশবাবু বলেন, ‘‘পার্থবাবু তৃণমূলের মহাসচিব, তিনি যুক্ত অথচ তৃণমূল বলছে, তৃণমূল যুক্ত নয়! মানুষকে কি গাধা ভাবেন তাঁরা? আমরা চাই, মানুষ নিজেরাই আন্দোলনে নামুন। এ লড়াইটা শুধু কে কোথায় চাকরি পেল, তা নিয়ে নয়। গোটা প্রশাসনকে যে ভাবে দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত করে ফেলা হয়েছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই। মানুষকে ঠিক করতে হবে, এর বিরুদ্ধে কী ভাবে লড়াই করবেন।’’ রাজ্য বিজেপির প্রধান মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘‘অ্যারেস্ট মেমো একটা টেকনিক্যাল বিষয়। কিন্তু যা হয়েছে, সেটা সংগঠিত অপরাধ। তৃণমূল দল এবং সরকারের কেউ কিছু জানল না, পার্থ আর কয়েক জন আধিকারিক সব করে ফেললেন, এটা হতে পারে না!’’ কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে তৃণমূল নেতারা ‘হাস্যকর যুক্তি’ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করে বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষও দাবি করেছেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের আগেই গ্রেফতার হওয়া উচিত ছিল। মোট দুর্নীতি ২০ কোটি নয়, হাজার কোটি টাকার! সব জেনেও এত দিন চুপ ছিল রাজ্য প্রশাসন। এত কোটি কোটি টাকা নেতা, মন্ত্রী-ঘনিষ্ঠদের বাড়িতে রাখা থাকলেও কেন আগেই পুলিশ তা উদ্ধার করে ইডি-র হাতে তুলে দেয়নি? কেন আগেই তারা অভিযান চালায়নি?’’ রাস্তায় নেমে দুর্নীতির প্রতিবাদও অব্যাহত। শিয়ালদহ স্টেশন চত্বরে এ দিন পুরনো আমলের মতো ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে দুর্নীতির কথা প্রচারে নেমেছিল এসএফআই। স্টেশনের আশেপাশে বাসে, জেলায় কোথাও কোথাও ট্রেনে উঠে যাত্রীদের মধ্যে শিক্ষা-দুর্নীতির কথা তারা প্রচার করেছে। মুখ্যমন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবিও তুলেছে এসএফআই। জেলায় জেলায় এ দিন বামফ্রন্টের তরফে মিছিল হয়েছে পার্থ-পরেশ অধিকারী-সহ দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সকলের অপসারণের দাবিতে। যাদবপুর এলাকায় বামেদের মিছিলে কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীরও পদত্যাগের দাবি তোলা হয়েছে। স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) দুর্নীতিতে যুক্ত সকলের গ্রেফতার, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং বৈধ তালিকাভুক্ত চাকরি-প্রার্থীদের স্থায়ী নিয়োগের দাবিতে এ দিন সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশন থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র সংগঠন ডিএসও। এই সংগঠন সোমবার থেকে আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত ‘সরকারি শিক্ষাব্যবস্থা ও সরকারি স্থায়ী কর্মসংস্থান বাঁচাও সপ্তাহ’ পালনেরও ডাক দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy