Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal SSC Scam

SSC recruitment scam: পার্থের দেহরক্ষীর দশ জন আত্মীয়ের একই বছরে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি! উঠছে প্রশ্ন

একই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্তত ১০ জন। তাঁরা নাকি সবাই প্রাথমিক শিক্ষক পদেই চাকরি পেয়েছেন! এমনটাই অভিযোগ উঠেছে।

ইএসআই হাসপাতাল থেকে বার হচ্ছেন পার্থ।

ইএসআই হাসপাতাল থেকে বার হচ্ছেন পার্থ। নিজস্ব চিত্র

কুন্তক চট্টোপাধ্যায় আনন্দ মণ্ডল
কলকাতা ও চণ্ডীপুর শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

একই পরিবারের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত অন্তত ১০ জন। তাঁরা নাকি সবাই প্রাথমিক শিক্ষক পদেই চাকরি পেয়েছেন! সেই নাম-তালিকা দিয়ে কলকাতা হাই কোর্টে জমা পড়া হলফনামায় উঠে এসেছে সেই পরিবারের এক পুলিশকর্মী সদস্যের নামও। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দেহরক্ষী বিশ্বম্ভর মণ্ডল। কী ভাবে একই পরিবারের এত জন সদস্য একই বছরে একসঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি পেলেন তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন চাকরিপ্রার্থীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্ত। তিনি শুক্রবার বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে এই হলফনামা জমা দিয়েছেন। আগামিকাল, সোমবার এ ব্যাপারে শুনানি হতে পারে।

রমেশ মালিক নামে প্রাথমিক শিক্ষক পদের এক চাকরিপ্রার্থী হাই কোর্টে মামলা করেছিলেন। সেই মামলায় ইতিমধ্যেই সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশের বিরুদ্ধে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল। সেখানে শুনানি শেষ হলেও রায় ঘোষণা হয়নি। ডিভিশন বেঞ্চ কোনও স্থগিতাদেশ না-দেওয়ায় বিচারপতির গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসেও মামলার শুনানি চলছে। সেই মামলায় শুক্রবার ওই দশ জনের নামের তালিকা সম্বলিত নথি ‘অতিরিক্ত হলফনামা’ হিসাবে জমা দেন সুদীপ্ত। এ ব্যাপারে তদন্তের আর্জিও জানান তিনি। আইনজীবীদের ধারণা, পার্থ গ্রেফতারের পরে বিষয়টি আরও গুরুতর হয়ে উঠতে পারে।

পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুর থানার দিবাকরপুর পঞ্চায়েতের প্রথমখণ্ড জালপাই গ্রামে বিশ্বম্ভরদের বাড়ি। তবে তিনি বর্তমানে কলকাতায় থাকেন। পার্থ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীনই তাঁর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কর্মরত বিশ্বম্ভরের স্ত্রী রিনা, দুই ভাই বংশীলাল ও দেবগোপাল প্রাথমিক স্কুলের হিসেবে চাকরি পান বলে অভিযোগ। তালিকায় নাম রয়েছে তাঁর মাসতুতো ভাই পূর্ণ মণ্ডল, মাসতুতো বোন গায়ত্রী মণ্ডল, মেসোমশাই ভীষ্মদেব মণ্ডল, মাসতুতো জামাই সোমনাথ পণ্ডিত, শ্যালক অরূপ ভৌমিক, শ্যালিকা অঞ্জনা মণ্ডল, প্রতিবেশী অমলেশ রায়েরও।

বিশ্বম্ভরের সেজভাই বংশীলাল বর্তমানে চণ্ডীপুর পঞ্চায়েত সমিতির বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষও। এলাকায় দাপুটে তৃণমূল নেতা হিসাবেও পরিচিত। তিনি এবং মেজভাই বাবুলাল গ্রামের বাড়িতেই থাকেন। আর ছোটভাই দেবগোপাল চণ্ডীপুর বাজারে অন্য বাড়িতে থাকেন। বিশ্বম্ভরের বাবা পান্নালাল মণ্ডল ছিলেন সিপিএম নেতা। হাইস্কুলের শিক্ষক পান্নালাল দিবাকরপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও ছিলেন। বংশীলাল অবশ্য তৃণমূলে যোগ দিয়ে ২০০৮ সালেই পঞ্চায়েতে লড়েছিলেন। তবে পরাজিত হন। ২০১৮ সালের ভোটে পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতে বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষে হন তিন। তার আগেই ২০১৪ সাল নাগাদ প্রাথমিক স্কুল শিক্ষকের চাকরি পেয়েছিলেন তিনি।

পারিবারিক পুরনো পাকা দোতলা বাড়ির সামনে নতুন দোতলা বাড়ি করেছেন বংশীলাল। পড়াচ্ছেন দিবাকরপুর প্রাথমিক স্কুলে। বংশীলালের দাবি, ‘‘দাদা (বিশ্বম্ভর) অনেক আগেই কলকাতা পুলিশে চাকরি পেয়েছিলেন। আগে তমলুকের বিধায়ক জগন্নাথ মিত্রের নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। পরে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নিরাপত্তারক্ষী হন। তবে দাদার সাথে সে ভাবে যোগাযোগ নেই । মাকে দেখতে মাঝেমধ্যে এখানে আসেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘আমি ২০১২ সালের ‘টেট’ পরীক্ষার্থী ছিলাম। আদালতের নির্দেশে চাকরি পেয়েছি । আর যে সময় আমাদের চাকরি হয়েছে, তখন দাদা পার্থবাবুর নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন না। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত মিথ্যা অভিযোগ তোলা হচ্ছে।’’ কিন্তু একই পরিবারের এত জনের চাকরি পাওয়া কি স্বাভাবিক? বংশীলালের জবাব, ‘‘যোগ্যতা প্রমাণ করেই চাকরি পেয়েছি। আইনি ভাবে লড়ব। আদালতেই সব প্রমাণ দেব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal SSC Scam partha chatterjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE