Advertisement
২০ ডিসেম্বর ২০২৪
SSC

SSC Recruitment Case: নিয়োগ দুর্নীতিতে ‘পার্থ ঘনিষ্ঠ’ ছাত্রনেতারা? ইডির নজরে এ বার একাধিক ‘আড়কাঠি’

শাখা সংগঠনের কোন কোন নেতানেত্রী নিয়মিত ভাবে সরাসরি পার্থের ‘ঘরে’ পৌঁছতে পারতেন, ইডি আপাতত সেটাই খোঁজখবর করে দেখছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ জুলাই ২০২২ ১৩:১২
Share: Save:

পার্থ চট্টোপাধ্যায় শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ হিসেবেই পরিচিত ছিলেন তাঁরা। কলেজে ভর্তি নিয়ে আগেও তাঁদের কয়েক জনের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। স্কুলশিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (টিএমসিপি) বর্তমান ও প্রাক্তন একাধিক নেতানেত্রী এ বার তাদের নজরে বলে ইডির একটি সূত্রের বক্তব্য।

বেআইনি আর্থিক লেনদেনের তদন্তের ভারপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় সংস্থাটির ওই সূত্রের দাবি, টাকার বিনিময়ে অনেককেই শিক্ষকের চাকরি পাওয়ার ‘ব্যবস্থা’ করে দিয়েছেন তৃণমূলের ওই নেতানেত্রীরা। তাঁদের মধ্যে সংগঠনের রাজ্য স্তরের এক নেত্রী রয়েছেন। রয়েছেন মধ্য কলকাতা এবং দক্ষিণ কলকাতার দুই প্রভাবশালী ছাত্রনেতাও।

ইডি সূত্রের দাবি, ওই নেতানেত্রীরা অনেক চাকরিপ্রার্থীকে পার্থের ‘দরবারে’ পৌঁছে দিয়েছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। ‘ডিল’ চূড়ান্ত হওয়ার পরে টাকার লেনদেনেও ভূমিকা ছিল তাঁদের। এর বিনিময়ে ওই নেতানেত্রীরা কী পেয়েছেন, তা জানতে তাঁদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি এবং আয়ব্যয়ের খোঁজখবর শুরু করেছে ইডি।

শাসকদলের কোন কোন নেতার আত্মীয়-পরিচিতরা শিক্ষকের চাকরি পেয়েছেন, কারাই বা তৃণমূলে নাম লেখানোর সুবাদে নিয়োগের তালিকায় নাম তুলেছেন, তা ইতিমধ্যেই খতিয়ে দেখতে শুরু করেছে ইডি। দলের এবং শাখা সংগঠনের কোন কোন নেতানেত্রীরা নিয়মিত ভাবে সরাসরি পার্থের ‘ঘরে’ পৌঁছতে পারতেন, তা-ও জানার চেষ্টা শুরু হয়েছে। সেই সূত্রেই উঠে এসেছে ওই নেতানেত্রীদের নাম।

এর মধ্যে একজনকে নিয়ে দলের অন্দরেও আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি পূর্ব শহরতলিতে একটি ফ্ল্যাট কিনেছেন। পার্থের গ্রেফতারির পর ওই ফ্ল্যাট কেনা নিয়েও দলের অন্দরে বিভিন্ন জল্পনা চালু হয়েছে। দলেরই একটি অংশ শীর্ষনেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, তৃণমূলের মুখপাত্র তথা রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বার বারই বলেছেন, তাঁরা কাউকে ‘আড়াল’ করার চেষ্টা করবেন না। ফলে পার্থের সঙ্গে যোগাযোগের নিরিখে ওই ছাত্র সংগঠনের নেতানেত্রীদের ডেকে পাঠানো হলে দল কী করে, তা নিয়েও তৃণমূলের অন্দরে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তবে পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিতদের সম্পর্কে দল যে কোনও ‘সহানুভূতি’-র মনোভাব পোষণ করছে না, তা স্পষ্ট। দলের এক প্রথমসারির নেতার কথায়, ‘‘এরা আড়কাঠির কাজ করেছেন। এবং কিছু না-জেনে করেছেন বলে মনে হয় না। ফলে তদন্তের স্বার্থে যদি তাঁদের ডেকে পাঠানো হয়, তা হলে তাঁদের উচিত ইডির কাছে গিয়ে জবাবদিহি করা।’’

রাজ্য শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি মামলার জেরে ইডির তদন্তের ঘটনা প্রতি মুহূর্তেই নতুন দিকে মোড় নিচ্ছে। ইডির এই পদক্ষেপে রাজ্যে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের প্রাক্তন এবং বর্তমান নেতানেত্রীদের নাম নিয়ে জল্পনা শুরু হওয়ায় বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছে।

শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে সক্রিয় ভাবে কাজ করার সুবাদে ওই নেতানেত্রীদের সঙ্গে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকেরই ‘ব্যক্তিগত যোগাযোগ’ ছিল। ফলে লেনদেনের ‘গোপনীয়তা’ রক্ষার বিষয়টি তুলনামূলক ভাবে সহজ হয়েছে। পাশাপাশি, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর স্তরের পাঠ শেষ করা ‘সচ্ছল’ চাকরিপ্রার্থীদের সন্ধান পেতে ছাত্র সংগঠনের ‘নেটওয়ার্ক’-কেও কাজে লাগাতে পেরেছেন তাঁরা।

এসএসসি এবং টেটের বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন, শাসকদের ছোট থেকে মেজো এবং বড় নেতাদের পরিচিত, আত্মীয়দের অনেকে গত এক দশকে প্রাথমিকে এবং হাইস্কুলে চাকরি পেয়েছেন। পাশাপাশি, টাকার বিনিময়ে ‘বিক্রি’ হয়েছে চাকরি। এ ক্ষেত্রে ‘রাজনৈতিক যোগাযোগ’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তৃণমূলের ছাত্রনেতা এবং নেত্রীরা সেই যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে ‘মধ্যস্থতাকারীর’ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলেই ইডির সূত্রের দাবি।

শুধু টাকার বিনিময়ে চাকরিই নয়— শিক্ষকদের পোস্টিং, এমনকি, আদালতের নির্দেশে চাকরিতে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও টাকা নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ এসেছে শিক্ষকদের একাংশের তরফেই। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ম ও যোগ্যতা অনুযায়ী পদক্ষেপ করা হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সে ক্ষেত্রেও ‘মধ্যস্থতাকারী’ হিসেবে তৃণমূলের বেশ কয়েক জন ছাত্রনেতা এবং নেত্রীর নাম প্রকাশ্যে এসে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে শাসক শিবির যে আরও অস্বস্তিতে পড়বে, তাতে দলীয় নেতৃত্বেরও খুব একটা সন্দেহ নেই।

শুধু চাকরির ক্ষেত্রে নয়, পার্থ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল বহু বারই। সেই সূত্রে সামনে এসেছিল শাসকদলের ছাত্র সংগঠনের নামও। ওই নেতানেত্রীদের সঙ্গে ‘ভর্তি-দুর্নীতি’র সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে বলে ইডির দাবি। প্রসঙ্গত, কয়েক বছর আগে দক্ষিণ কলকাতার একটি কলেজে ইংরেজি অনার্সে ভর্তির মেধাতালিকায় নাম উঠেছিল অভিনেত্রী সানি লিওনির। বিষয়টি নিয়ে দেদার হাসাহাসি হয়েছিল। এমনকি, টুইট করেছিলেন অভিনেত্রী নিজেও।

অভিযোগ, সেই কায়দাতেই কলেজে ভর্তির মেধাতালিকায় ভুয়ো নাম ঢুকিয়ে টাকা হাতানোর পথ তৈরি করা হত সে সময়। পছন্দের বিষয়ের অনার্স পড়ার দর উঠত লক্ষাধিক টাকা। পার্থের ‘ঘনিষ্ঠ’ ওই টিএমসিপি নেতানেত্রীরা সেই প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। কোনও কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে দায় চাপানো হত সংশ্লিষ্ট কলেজের ওয়েবসাইট দেখভালের দায়িত্বে থাকা সংস্থার ঘাড়ে। যেমনটা হয়েছিল লিওনি-কাণ্ডেও।

অন্য বিষয়গুলি:

SSC West Bengal SSC Scam SSC recruitment scam TET TET Scam Arpita Mukherjee Partha Chatterjee TMC TMCP
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy