একই দিনে আনিস অবশ্য বিজেপিকে 'না' বলার জন্য বাংলার মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন এবং বিজেপি বিরোধী আসনে উঠে আশায় উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করছেন। ভাঙড়ে জয়ী আইএসএফের নৌশাদ সিদ্দিকীকেও অভিনন্দন জানাচ্ছেন তিনি।
ফাইল চিত্র।
গত বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের দিন তাঁর ফেসবুক পেজে আনিস খান লিখেছিলেন—‘প্রয়োজন হলে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নেব, কিন্তু মাথা নিচু করে নিজেকে দালালদের কাছে বিক্রি করব না’।আনিসের মৃত্যুর পরে সেই পোস্ট নজর কাড়ছে। তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাওয়া নিয়ে বিস্ময়! প্রদীপকুমার বর নামে একজনের মন্তব্য, “আনিস আমাদের সন্তানতুল্য। তাকে বাঁচতে দিতে পারলাম না, এ লজ্জা আমাদের!”
একই দিনে আনিস অবশ্য বিজেপিকে 'না' বলার জন্য বাংলার মানুষকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন এবং বিজেপি বিরোধী আসনে উঠে আশায় উৎকণ্ঠাও প্রকাশ করছেন। ভাঙড়ে জয়ী আইএসএফের নৌশাদ সিদ্দিকীকেও অভিনন্দন জানাচ্ছেন তিনি। এর কিছু দিনের মধ্যেই একটি ফেসবুক ভিডিয়োয় তাঁর বাড়িতে শাসক দলের ১৫০ লোকের চড়াও হওয়া নিয়ে আনিস সরব (ভিডিয়োর সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই করেনি)। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের স্থানীয় বুথ সভাপতি আনিসের ৩ মে-র পোস্ট নিয়ে প্রশ্ন করছেন এবং পাড়ায় একটি অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা দিচ্ছেন।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে এবং শাসক-শিবির ঘনিষ্ঠ কেউ কেউ আনিস তাঁদের ‘কাছের’ বা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল বলে দাবি করলেও সমাজমাধ্যমের পরিসরে অন্য আভাস রয়েছে। ৫ ডিসেম্বর আনিস লিখছেন, ‘সিভিক ও পুলিশ যখন অত্যাচারী, জনগণকে হতে হয় প্রতিবাদী’! ভাঙড় বা নদিয়ায় পুলিশ লক-আপে পিটিয়ে মারার অভিযোগ নিয়েও প্রতিবাদ করেছেন আনিস। স্থানীয় পুলিশ এবং শাসক দলের নেতাদের সঙ্গে আনিসের কিছু টানাপড়েন চলছিল বলে সমাজমাধ্যমে কেউ কেউ সন্দেহও প্রকাশ করেছেন। দেশে হিজাবধারিণীদের প্রতি বৈষম্যের অভিযোগ ওঠার পরে এ মাসেই তিনি মমতার একটি হিজাব পরা ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘অভিনেত্রী দিদি কেন নীরব’?
এ রাজ্যের নানা ঘটনায় সংখ্যালঘুদের অধিকারের প্রতি দায়বদ্ধতা বা ইউএপিএ-র জুলুম নিয়ে বাংলার শাসক-শিবিরের প্রতি আনিসের ক্ষোভও বার বার প্রকট। ‘ফ্যাসিস্ট আরএসএস-বিজেপির বিরুদ্ধে বাংলা’ বলে একটি মঞ্চের গত বছর মার্চের মিছিলে গেলেও আনিসের ছবির পোস্টার কার্যত একই সুরে তৃণমূলকেও বিদ্ধ করছে।
হায়দরাবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের দলিত পড়ুয়া রোহিত ভেমুলাকেও মৃত্যুর আগে কেউ প্রায় চিনতেন না। আনিসের পুরনো পোস্টগুলিও এখন জনপ্রিয়। আবার একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের অধিকারের কথা বলা বা ইদের নমাজে শামিল হওয়ার পোস্টেও একাংশের বিদ্বেষের ভার আনিসকে বহন করতে হচ্ছে। মৃত্যুর পরেও বিরুদ্ধ রাজনৈতিক মতের কাউকে ট্রোলিং অবশ্যই নতুন নয় এ দেশে। আনিসের ক্ষেত্রেও তাই দেখা যাচ্ছে।
একটি পোস্টে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পদ্মভূষণ প্রত্যাখ্যান নিয়ে প্রশংসা করলেও ত্রিপুরায় সংখ্যালঘু পীড়নের অভিযোগ ওঠার পরে বামেদের ভূমিকা নিয়েও আনিস সরব। শেষ দিকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা মঞ্চ বলে একটি গণসংগঠনের সঙ্গে যোগের সূত্রে বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই আনিসের সঙ্গে দেখা গিয়েছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীর নানা ধরনের মতে একটি ধারাবাহিকতা লক্ষণীয়। কোভিডে ছোটদের স্কুল খোলার দাবি থেকে চাকরির দাবিতে রাজ্যে নানা আন্দোলন, সাধারণ মানুষের অধিকার নিয়ে তিনি সরব। শঙ্খ ঘোষের মৃত্যু থেকে অলিম্পিকে নীরজ চোপড়ার সোনা জয়ের মতো ঘটনায়ও তিনি ফেসবুকে লিখেছেন!
আর পাঁচ জন তরুণের মতো মজা করে সাম্প্রতিক একটি পোস্টে লিখেছিলেন, সময়ে সময়ে বই উপহার দেওয়ার মতো এক জন বান্ধবী চাই! দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সে-সব লেখার নীচেও ভিন্ন রাজনীতির লোকজন এখন তাঁকে খোঁচা দিয়ে চলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy