Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Sovan Chatterjee

শীঘ্রই বিজেপিতে দেবশ্রী, আপত্তি নেই শোভনেরও? জল্পনা জোরদার হতেই অন্তরালের পথে বৈশাখী

নয়াদিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে গিয়ে ১৪ অগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই যোগদান শেষ মুহূর্তে পুরোপুরি ভেস্তে যেতে বসেছিল যাঁর কারণে, তিনি দেবশ্রী রায়।

শোভন চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

শোভন চট্টোপাধ্যায়, দেবশ্রী রায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ অগস্ট ২০১৯ ২৩:১৯
Share: Save:

সংবর্ধনা ঘিরে ভিতরে ভিতরে উত্তপ্ত হয়েছিল পরিস্থিতি। নিজের ঘনিষ্ঠ বৃত্তকে মঙ্গলবারই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় বার্তা দিয়ে দিয়েছিলেন যে, ‘অপমান’ সহ্য করে রাজনীতি করবেন না। বুধবারই জানা গেল, উজ্জ্বল হয়ে উঠছে দেবশ্রী রায়ের বিজেপিতে যোগদানের সম্ভাবনা।

নয়াদিল্লিতে বিজেপির সর্বভারতীয় সদর দফতরে গিয়ে ১৪ অগস্ট আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপিতে যোগ দেন শোভন চট্টোপাধ্যায় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সেই যোগদান শেষ মুহূর্তে পুরোপুরি ভেস্তে যেতে বসেছিল যাঁর কারণে, তিনি দেবশ্রী রায়। অভিনেত্রী তথা রায়দিঘির তৃণমূল বিধায়ক দেবশ্রীর সঙ্গে এক সময়ে শোভনের সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল ঠিকই। কিন্তু পরে তা তলানিতে পৌঁছয়। বিজেপি দফতরে দেবশ্রী রায়কে দেখে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় স্তম্ভিত হয়ে যান। বিজেপি নেতৃত্বকে শোভন সে দিন জানিয়ে দেন যে, দেবশ্রী রায়কে দলে নেওয়া হলে তিনি ও বৈশাখী যোগদান করবেন না। এতেই থামেননি শোভন। দেবশ্রীকে ভবিষ্যতে কখনও যদি দলে নেওয়া হয়, তা হলেও তিনি দল ছেড়ে দেবেন বলেও শোভন সে দিন জানিয়ে দেন।

সপ্তাহ ঘুরতে না ঘুরতেই কিন্তু বদলে গেল পরিস্থিতি। দেবশ্রী রায়কে বিজেপিতে স্বাগত জানানোর বিষয়ে আপত্তি করলে চলবে না— এই বার্তা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মঙ্গলবারই দিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে। শোভনও সেই বার্তার বিরোধিতা করেননি বলে খবর।

আরও পড়ুন: নাটকীয় মোড় জাগুয়ার-কাণ্ডে, আরসালান নন গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর দাদা! দাবি পুলিশের

মঙ্গলবার যে শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সংবর্ধনা দেওয়া হবে রাজ্য বিজেপির সদর দফতরে, সে কথা সোমবার রাতেই এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল। বিবৃতিতে যে হেতু শুধু শোভনের নাম ছিল, সে হেতু বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বিজেপি দফতরে যেতে রাজি ছিলেন না। পরে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সক্রিয় হয়। মঙ্গলবার সকালে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় এবং তাতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম লেখা হয়। রাজ্য নেতৃত্বের তরফ থেকে বৈশাখীকে ফোন করে দুঃখপ্রকাশ করা হয় এবং জানানো হয় যে, শোভনের সঙ্গে তাঁকেও সংবর্ধনা দেওয়া হবে। প্রথম বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর নাম বাদ পড়া অনিচ্ছাকৃত ভুল— বৈশাখীকে এমনই জানান রাজ্য বিজেপির সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার।

সকাল থেকে টানাপড়েন চললেও দুপুরে বৈশাখী সিদ্ধান্ত নেন যে, শোভনের সঙ্গে তিনি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হাজির হবেন। বিজেপি দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি বলেন যে, ‘‘আমি গোঁসা করে ঘরে বসে থাকলে শোভনদার সংবর্ধনা ম্লান হয়ে যেত। তাই এসেছি।’’ আর সেই সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার পরেই দেবশ্রীর ব্যাপারে নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা শোভনকে শুনিয়ে দেন দিলীপ ঘোষ।

সংবর্ধনা এবং সাংবাদিক সম্মেলন শেষ হওয়ার পরে শোভনকে নিয়ে একটি বৈঠকে ঢুকে যান রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিধায়কদের নিয়ে তিনি যে বৈঠকে বসবেন, সে কথা দিলীপ ওই সাংবাদিক সম্মেলনেই জানিয়েছিলেন। তাই মিডিয়ার সঙ্গে আলাপচারিতা কিছুটা তড়িঘড়িই শেষও করে দেন তিনি। বাকি বিধায়করা আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিলেন। সাংবাদিক সম্মেলন শেষে শোভনকে নিয়ে সেই বৈঠকে ঢুকে যান দিলীপ ঘোষ এবং জয়প্রকাশ মজুমদার।

আরও পড়ুন: লকআপে কেঁদে ভাসাচ্ছে ভাই আরসালান! কেন দাদাকে বাঁচানোর চেষ্টা, উঠছে বহু প্রশ্ন​

বৈঠকে বৈশাখীকে ঢুকতে বারণ করেছিলেন দিলীপই। এবং দেবশ্রী রায়কে দলে স্বাগত জানাতে যে রাজ্য বিজেপি প্রস্তুত, সে কথাটাও দিলীপই শোভনকে বলেন বলে জানা গিয়েছে। তৃণমূলকে ক্রমশ দুর্বল করে দেওয়াই এখন বিজেপির নীতি এবং দেবশ্রী রায়ের মতো দু’বারের বিধায়ককে দলে নেওয়া হলে তৃণমূলকে ধাক্কা দেওয়া যাবে বলে যে তিনি মনে করছেন, এ কথা শোভনের সামনে স্পষ্ট করে দেন রাজ্য সভাপতি। দেবশ্রীর বিষয়ে শোভন যেন আপত্তি না করেন, এই বার্তাও দিয়ে দেওয়া হয়। শোভন চট্টোপাধ্যায়ও আর সঙ্ঘাতে যাননি।

তবে বিষয়টা শুধু শোভনের অনাপত্তিতে সীমাবদ্ধ থাকবে না বলেও শোনা যেতে শুরু করেছে বুধবার থেকে। দেবশ্রী রায়কে খুব তাড়াতাড়িই বিজেপিতে শামিল করা হবে এবং সেই যোগদানটা শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতেই হবে— বিজেপির একটি অংশে গুঞ্জন এই রকমই। খুব শীঘ্রই রাজ্য বিজেপির এক সহ-সভাপতির উপস্থিতিতে শোভন ও দেবশ্রীর বৈঠক হতে চলেছে বলেও জল্পনা জোরদার।

সংবর্ধনা ঘিরে মঙ্গলবার যা ঘটেছে, তার প্রেক্ষিতে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, নীরবে দূরে সরিয়ে নেবেন নিজেকে। খবর বৈশাখীর ঘনিষ্ঠ বৃত্ত সূত্রের। আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি ত্যাগ করার কথা তিনি হয়তো ঘোষণা করবেন না। কিন্তু ক্রমশ অন্তরালেই যে চলে যাবেন, সে কথা তিনি বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেও বুধবার জানিয়ে দিয়েছেন বলে খবর। বিজেপিতে দেবশ্রী রায়কে স্বাগত জানানো হলে সেই প্রক্রিয়া কি আরও তরান্বিত হবে?

আরও পড়ুন: দিনভর নাটক, অবশেষে গ্রেফতার প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম

এই প্রশ্নের অত্যন্ত সংযত জবাব দিয়েছেন বৈশাখী। তিনি আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘আমিও শুনেছি যে দেবশ্রী রায়কে দলে নেওয়ার বিষয়ে কোনও একটা বার্তা শোভন চট্টোপাধ্যায়কে দেওয়া হয়েছে। তবে সবটাই শোনা কথা। দলের তরফে কেউই আমাকে এ বিষয়ে কিছু জানাননি। আমার সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথাও নয়। কারণ কাকে দলে নেবেন, কাকে নেবেন না, এটা বিজেপি নেতৃত্বই স্থির করবেন। আমার এ নিয়ে কিছু বলার নেই।’’ বৈশাখীর এই মন্তব্যেই স্পষ্ট যে, তিনি বিজেপি সম্পর্কে নির্লিপ্ত।

কিন্তু মাত্র এক সপ্তাহ আগে যে অবস্থান ছিল, শোভন সেখান থেকে সরে এসে দেবশ্রীর যোগদান মেনে নিতে চলেছেন বলে যা শোনা যাচ্ছে, তার কোনও প্রভাব কি বন্ধুত্বের উপরে পড়ছে না? বিজেপিতে যোগদান সম্পন্ন হতেই শোভন যে ভাবে নরম হয়ে গিয়েছেন দেবশ্রীর বিষয়ে, শোভন-বৈশাখীর সম্পর্কে তা কি চিড় ধরাচ্ছে না? বৈশাখীর সহাস্য এবং ইঙ্গিতপূর্ণ পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘চিড় যে ধরে যায়নি, সে বিষয়ে নিশ্চিত হচ্ছেন কী ভাবে?’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy