Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Baishakhi Banerjee

পার্থর পরেই রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক বৈশাখীর, জল্পনা তুঙ্গে

মিল্লি আল আমিন কলেজের সমস্যা মেটানোর জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে কিন্তু বৈঠক ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই। বিকাশ ভবনের সেই বৈঠকে বৈশাখী তো ছিলেনই, ছিলেন মিল্লি আল আমিন কলেজের পৃষ্ঠপোষক সংস্থার লোকজনও।

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় ও বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ২২:৩২
Share: Save:

তাৎপর্যপূর্ণ বৈঠক হল রাজভবনে। নিজের কলেজের সমস্যা সমাধানের জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরেই শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন মিল্লি আল আমিনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু সে বৈঠক শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জল গড়িয়ে গেল রাজভবন পর্যন্ত। এ দিনই সন্ধ্যায় রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করলেন বৈশাখী। দীর্ঘ বৈঠক সেরে কলেজ শিক্ষিকার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য: ‘‘রাজ্যপাল প্রাজ্ঞ এবং আইনজ্ঞ। তিনি যা করবেন, আশা করি ভালই করবেন।’’

মিল্লি আল আমিন কলেজের সমস্যা মেটানোর জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে কিন্তু বৈঠক ডেকেছিলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজেই। বিকাশ ভবনের সেই বৈঠকে বৈশাখী তো ছিলেনই, ছিলেন মিল্লি আল আমিন কলেজের পৃষ্ঠপোষক সংস্থার লোকজনও। বেশ কয়েক ঘণ্টা বৈঠক চলে। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, বাদানুবাদে উত্তপ্তও হয়েছিল পরিস্থিতি। তবে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা পদে বৈশাখীকে মেনে নিয়েই যে কাজ চালাতে হবে, সে বার্তা শিক্ষামন্ত্রী খুব স্পষ্ট ভাবে দিয়ে দেন বলে শিক্ষা বিভাগ সূত্রের খবর। এত কিছু ঘটে যাওয়ার পরেও বৈশাখী এ দিন সন্ধ্যায় রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করায় রাজনৈতিক শিবিরে নানা রকমের জল্পনা শুরু হয়েছে।

রাজ্যপালের সঙ্গে কি কলেজের বিষয় নিয়েই কথা বলতে গিয়েছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়? কলেজের পৃষ্ঠপোষক সংস্থাকে এ দিন দুপুরেই শিক্ষামন্ত্রী স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার পরেও কেন বৈশাখী একই বিষয় নিয়ে সন্ধ্যায় রাজ্যপালের কাছে গেলেন? তা হলে কি শিক্ষামন্ত্রীর উপরে ভরসা করছেন না তিনি? এমন নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সে প্রসঙ্গে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় আনন্দবাজারকে বলেছেন, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী প্রথম থেকেই তাঁর নিজের মতো করে সমস্যাটার সমাধানের চেষ্টা করছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও সমস্যা যে মিটছে না, সেটাও সকলে দেখতে পাচ্ছেন। তাই রাজ্যপালের কাছে গিয়েছিলাম। আমার কলেজ যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ, রাজ্যপাল সেই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। তাই তাঁকেও বিষয়টা জানিয়ে রাখলাম।’’ সমস্যার সমাধান যে হবে, এমন কোনও আশ্বাস কি রাজ্যপাল দিয়েছেন? বৈশাখী বলেন, ‘‘রাজ্যপাল অত্যন্ত প্রাজ্ঞ এবং আইনজ্ঞ। আইন তাঁকে যে এক্তিয়ার দিয়েছে, তার মধ্যে থেকে যা করা সম্ভব, তিনি তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।’’ এটুকু বলেই থামেননি মিল্লি আল আমিনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা। তাঁর সংযোজন: ‘‘আমার আশা, রাজ্যপাল যা করবেন, ভালই করবেন।’’

আরও পড়ুন:লোককে তাড়ানোর আগেই দেশ বিজেপিকে তাড়াবেঃ মমতা
আরও পড়ুন:ভাষণে ‘নিজের কথা’ বলতে চান রাজ্যপাল

এ দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় রাজভবনে যান। রাজ্যপালের সঙ্গে তাঁর প্রায় এক ঘণ্টা কথা হয়। রাজ্যের চলতি রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এই বৈঠকের অন্য তাৎপর্যও দেখছে রাজনৈতিক শিবিরের একাংশ। সামনেই পুরভোট। কলকাতা দখলের লড়াইয়ে তৃণমূলের অস্বস্তি গোড়া থেকেই বাড়িয়ে রাখার জন্য প্রাক্তন মেয়র তথা বেহালা পূর্বের বিধায়ক শোভন চট্টোপাধ্যায়কে ময়দানে নামাতে তৎপর হয়ে উঠেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। উল্টো দিকে বিজেপি-কে শুরুতেই পিছনে ফেলে দেওয়ার লক্ষ্যে তৃণমূলও তৎপর হয়েছে শোভনকে দলে ফেরাতে অথবা পুরভোটে নিষ্ক্রিয় রাখতে। কিন্তু শোভন কী সিদ্ধান্ত নিতে চলেছেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়। যাঁকে শোভনের যাবতীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অংশীদার মনে করা হয়, সেই বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায় এই রকম একটা পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দেখা করায় প্রাক্তন মেয়রের আশু পদক্ষেপ সম্পর্কেও জল্পনা তৈরি হয়েছে।

রাজ্যপালের সঙ্গে হওয়া বৈঠককে যতটা স্বাভাবিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন বৈশাখী, বিষয়টা ততটা স্বাভাবিক নয় বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মত। জগদীপ ধনখড় রাজ্যপাল হয়ে আসার পর থেকে রাজভবনের সঙ্গে নবান্নের সম্পর্ক কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, রাজ্যে তা কারও অজানা নয়। শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সম্প্রতি রাজ্যপালের দু’টি বৈঠক হয়েছে ঠিকই। কিন্তু শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে বা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ব্যাপারে রাজ্যপালের হস্তক্ষেপের নানা প্রচেষ্টার তীব্র বিরোধিতা করে বার বার বিবৃতি দিয়েছেন পার্থ। শিক্ষামন্ত্রীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বার বার পাল্টা আক্রমণ করেছেন রাজ্যপালও। তাই দুপুরে পার্থর সঙ্গে বৈঠক করে সন্ধ্যায় ধনখড়ের মুখোমুখি হওয়াকে খুব সহজ কাজ বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তৃণমূল ছেড়ে দেওয়ার পরেও রাজ্য সরকারের যে পদাধিকারীর সঙ্গে নিরন্তর যোগাযোগ রেখে চলছিলেন বৈশাখী, সেই পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরেও আর পূর্ণ আস্থা নেই— এ কথাই কি স্পষ্ট করে দিলেন মিল্লি আল আমিনের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষা? শিক্ষামন্ত্রীর বদলে রাজ্যপালের প্রতি আস্থা দেখানোর নেপথ্যে কি আসলে অন্য কোনও বৃহত্তর রাজনৈতিক বার্তাও রয়েছে? চর্চা শুরু হয়েছে এই সব প্রশ্ন নিয়েই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy