Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
lalbagh

Lalbagh: পড়ব বলে ঘর-ছাড়া, বাঁচছি স্বাধীন হয়ে

স্বাধীন ভাবে নিজের জীবনটাকে দেখতে চেয়েছিলাম। পেয়েছি। আজকে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা শুধু মানসিক জেদ ও স্বপ্নকে সম্বল করে।

জুলেখা খাতুন

জুলেখা খাতুন

জুলেখা খাতুন
লালবাগ শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০২২ ০৭:৪৬
Share: Save:

একচিলতে একটা ঘরই আমার ভারত।

স্বাধীন ভাবে নিজের জীবনটাকে দেখতে চেয়েছিলাম। পেয়েছি। আজকে আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তা শুধু মানসিক জেদ ও স্বপ্নকে সম্বল করে। এবং অনাত্মীয়ের শুভেচ্ছায় আর আশ্রয়ে। এখানে হয়তো আমার সব সাধ মেটেনি। কিন্তু আমি স্বাধীন ভাবে বাঁচছি।

আমি খুব সাধারণ মেয়ে। কিন্তু সবার যেমন স্বপ্ন থাকে, আমারও রয়েছে। তাকে বাঁচিয়ে রাখতেই পরিবার-পরিজন সব ছেড়েছি।

আমার আসল বাড়ি মুর্শিদাবাদের লালবাগের টিকটিকি পাড়ায়। নবগ্রামে মামার বাড়িতে বড় হচ্ছিলাম। সেখানেই ঘটল বিপত্তি। তখন আমি নবগ্রাম সিঙ্গার হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। শিয়রে মাধ্যমিক। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনায় খুব ভাল ছিলাম না, আজও নই। কিন্তু আমি পড়াশোনার মধ্যে টান অনুভব করতাম। তাই জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষায় বসার সুযোগ আমাকে রোমাঞ্চিত করত। কিন্তু বাবা-মা তো তাতে উৎসাহ দিলেনই না, উল্টে আমার আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ের ব্যবস্থা করতে লাগলেন। অনেক বুঝিয়েও পারলাম না। তখন এক দিন দুপুরে স্কুলে এসে আমাদের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল স্যরকে সব কথা খুলে বললাম। সে-দিন স্যরেরা প্রাথমিক ভাবে বিয়েটা আটকেছিলেন। কিন্তু তাঁরা ফিরতেই ফের বিয়ের তোড়জোড় শুরু হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশকে জানালাম। আর বাড়িমুখো না-হয়ে স্যরের হাত ধরে চলে এলাম স্কুলে। সেই সময় আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছিল স্কুলের জীববিদ্যার পরীক্ষাগারে, ব্লক প্রশাসনের সহযোগিতায়। তখন সেটাই ছিল আমার ঘর-বারান্দা। ২০১৭ সালে সেখান থেকেই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিই। তার পর থেকে বহরমপুর পঞ্চাননতলার এই শিলায়ন হোমের একচিলতে ঘরেই আমি রয়েছি।

শুরুর দিনগুলি মোটেই সুখের ছিল না। কিন্তু স্বস্তি ছিল, নিজের জেদ বজায় রাখতে পারছি বলে। বাপ-মা ছাড়া হলেও বিন্দুমাত্র কষ্ট নেই আমার। তাঁরা আজও আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন, কিন্তু আমি আমল দিই না। জানি আজও তাঁদের লক্ষ্য আমার বিয়ে দেওয়া। কিন্তু আমি প্রকৃত মানুষ হতে চাই।

মুর্শিদাবাদ শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া জেলা। সেখানে কত নাবালিকার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আকছার, গোপনে। আসলে সবাই তো সাহসী হয় না। আবার সব মেয়ে হয়তো আমাদের সঞ্জয় স্যরের মতো এক জন প্রধান শিক্ষকও পায় না। আমি কিন্তু দেখেছি, লক্ষ্য ঠিক থাকলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো সহজ। সহযোগিতাও মেলে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছিলাম

৭৭ শতাংশ নম্বর নিয়ে, মহারানী কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় থেকে। বহরমপুর গার্লস কলেজ থেকে প্রায় ৭৪ শতাংশ নম্বর নিয়ে এ বার স্নাতক হলাম। এর পরে স্নাতকোত্তরের পাঠ শুরু হবে। অন্য সকলের মতো বাবা-মায়ের আদর পাইনি ঠিকই। কিন্তু স্কুল, কলেজ, হোমের আধিকারিকদের যা সাহায্য পেয়েছি, তা অনেক বড় পাওনা।

অনুলিখন: বিদ্যুৎ

অন্য বিষয়গুলি:

lalbagh India
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy